আলোচনা- ইভ টিজিং : জরুরি ভিত্তিতে যা করণীয় by ডা. তাজুল ইসলাম

কার্ল মার্কসের একটি বিখ্যাত উক্তি ছিল, 'এত দিন দার্শনিকরা সমাজ ও জগৎকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে এসেছেন, এখন প্রয়োজন একে বদলানো।' ইভ টিজিং বিষয়েও যথেষ্ট আলাপ-আলোচনা হয়েছে, এখন জরুরি হয়ে পড়েছে কার্যকর কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা। শিক্ষামন্ত্রী ইভ টিজিংকে ইতিমধ্যেই একটি সন্ত্রাসী ও অপরাধমূলক কাজ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। এটি একটি যথার্থ ও সময়োপযোগী ঘোষণা।
কেননা এটি একটি সামাজিক অপরাধ ও সামাজিক ব্যাধি। ইভ টিজিং ও এর ফলে কিশোরীদের আত্মহত্যা বা উত্ত্যক্তকারী দ্বারা আত্মীয়স্বজনের হত্যার সমাজ মনস্তাত্তি্বক সুগভীর ও তাত্তি্বক আলোচনাগুলো পরে করলেও চলবে। কেননা এসবের প্রয়োজন হবে দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী প্রতিকার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। এ ব্যাপারে আমাদের আশু করণীয় কিছু রয়েছে।
পারিবারিক প্রতিরোধ
ক. ইভ টিজিংয়ের শিকার মেয়ের পরিবারের দায়িত্ব বহুমুখী। তারা উত্ত্যক্তকারী ছেলে ও তার পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাপারটি যেমন জানাবে, তেমনি স্থানীয় নেতৃবর্গ, জনপ্রতিনিধি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করবে। তাদের এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে যে বিষয়টি অবগত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ তাদের স্ব-স্ব ভূমিকা কার্যকরভাবে পালন করছে। প্রয়োজনে তারা সংবাদপত্র তথা গণমাধ্যমকে বিষয়টি জানাতে পারে; সংবাদ সম্মেলন করতে পারে; ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করতে পারে। এর পাশাপাশি তাদের নির্যাতিত 'মেয়েটিকে' নৈতিক ও আবেগীয় সমর্থন দিতে হবে। ক্ষোভে, দুঃখে, হতাশায়, অপমানে জর্জরিত হয়ে নির্যাতিতা যেন জীবনবিনাশী চিন্তা ও আচরণ না করেন, সেদিকে তীক্ষ্ন দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রতিদিন সে মেয়ের সঙ্গে আলাপ করতে হবে, ঘটনাপ্রবাহ কোনদিকে গড়াচ্ছে তা নজরে রাখতে হবে ও মেয়ের মানসিক অবস্থা কী রকম রয়েছে, সেটি খতিয়ে দেখতে হবে।
খ. যে পরিবারের ছেলেটি ইভ টিজিং করছে, সে পরিবারের মা-বাবা বা অন্য অভিভাবকদের তাদের ছেলের সব কুকর্মের দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। সম্মিলিতভাবে তারা ওই ছেলেকে এ রকম অপরাধের জন্য তার কী কী আইনগত শাস্তি পেতে হবে ও তার পরিবার কী ধরনের সামাজিক চাপ ও অপবাদের মধ্যে পড়বে, সে বিষয়গুলো জানাবেন। সে ছেলে কী করছে, কোথায়, কাদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছে ইত্যাদি বিষয়ের ওপর সার্বক্ষণিক 'নজরদারি' থাকতে হবে।
সামাজিক প্রতিরোধ : এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, স্কুল কর্তৃপক্ষ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, সুশীল সমাজ, যুব ও নারীসমাজসহ সমাজের দায়িত্বশীল লোকজনকে নিয়ে এলাকাভিত্তিক ইভ টিজিং প্রতিরোধ কমিটি থাকতে হবে। ওই এলাকায় যেকোনো ইভ টিজিং ঘটলে তৎক্ষণাৎ সে কমিটি সক্রিয় ভূমিকায় নেমে পড়বে। উত্ত্যক্তকারী ও তার পরিবারকে ডেকে নিয়ে যেকোনো ধরনের সমাজবিরোধী আচরণ থেকে বিরত থাকার জন্য আলটিমেটাম দিতে হবে। নিয়মিতভাবে ইভ টিজিংয়ের শিকার মেয়ে ও তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে।
প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা : ইভ টিজিং যারা করে, তারা ক্ষুদ্র হলেও সমাজের একটি 'অপশক্তি'। তাই এর বিপক্ষে রাষ্ট্র ও সমাজের মূল শক্তিকে এগিয়ে আসতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার রয়েছে সে শক্তি ও ক্ষমতা। পুলিশ ও প্রশাসন চাইলে এলাকার বখাটে ছেলেদের বাগে নিতে পারবে না_এটি বিশ্বাসযোগ্য সত্য নয়। সমাজের ওই শুভ অংশগুলো বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত থাকে। তাদের একত্র করে সংগঠিত করার দায়িত্ব নিতে হবে ওই প্রশাসনকেই।
সংবাদপত্র ও তথ্য মাধ্যমের ভূমিকা : সব ধরনের সামাজিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে তথ্য মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। মনে রাখতে হবে, এ ধরনের আত্মহত্যার ঘটনা ফলাও করে ও মহিমান্বিত করে প্রচার করলে অন্য কিশোরী আত্মহত্যা করতে প্রলুব্ধ হতে পারে। আত্মহত্যা বা হত্যার ঘটনা জেনে আত্মহত্যাকারী বা হত্যাকারী নিজের মনের ভেতরের অভিলাষ পূরণের দৃষ্টান্ত খুঁজে পায়। এ জন্যই এসব প্রচারে তথ্য মাধ্যমকে সংবেদনশীল ও কৌশলী হতে হবে।
পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিরোধের দুটি মূল লক্ষ্য রয়েছে। একটি হচ্ছে, বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে উত্ত্যক্তকারী ছেলেকে বিচ্ছিন্ন ও একা করে রেখে তাকে দুর্বল করে ফেলা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, সব ধরনের মানসিক, সামাজিক, নৈতিক ও আইনগত সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে 'মেয়েটি'র মানসিক ও নৈতিক অবস্থান সবল করা, তাকে জীবনমুখী করা। এ ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকলে উত্ত্যক্তকারীর পরিবার তার সমাজের কাছে, সেই সমাজ পুরো জাতির কাছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ রাষ্ট্র এবং সরকারের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকত। কোনো সমস্যার ব্যাপারে যে সমাজ যত বেশি সচেতন ও যত সোচ্চার থাকে, সে সমস্যা সে সমাজে বেশি দিন টিকতে পারে না।
========================
প্রতিশ্রুতির দিন  শোকের মাস, বিজয়ের মাস  চীনা প্রধানমন্ত্রীর পাক-ভারত সফর  দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীন মন্তব্য  নতুন প্রজন্ম ও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা  খিলক্ষেতে আগুনঃ কয়েলের গুদামে রাতে কাজ হতো ঝুঁকিপূর্ণভাবে  ভারতে বিহার রাজ্যের নির্বাচন  স্বপ্ন সত্যি হওয়ার পথে  আমাদের আকাশ থেকে নক্ষত্র কেড়ে নিয়েছিল যারা...  মুক্তির মন্দির সোপান তলে  আবেগ ছেড়ে বুদ্ধির পথই ধরতে হবে  বছর শেষে অর্থনৈতিক সমীক্ষা পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ  দুই কোরিয়ার একত্রিকরণ কি সম্ভব  গ্যাসের ওপর বিপজ্জনক বসবাস  উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তুলতে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ  সময়ের দাবি জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি  জনসংখ্যা বনাম জনশক্তি  ব্যাংকের টাকা নয়ছয় হওয়া উচিত নয়  একটি পুরনো সম্পর্কের স্মৃতিচিত্র  পাটশিল্প ঘুরিয়ে দিতে পারে অর্থনীতির চাকা  ড. ইউনূসকে বিতর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে হবে  সুশিক্ষার পথে এখনও বাধা অনেক  ব্যক্তির স্বাধীনতা হরণ ও মর্যাদাহানির পরিণাম কখনই শুভ হয় না ঘুষ ও লুটপাট উভয়ের বিরুদ্ধে একই সাথে লড়তে হবে  সুনীতি ও সুশাসন  আমি কেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের পক্ষে  শ্রমিক অসন্তোষ বর্তমান প্রেক্ষিত  জীবন ব্যাকরণঃ দর্জির মুক্তিযুদ্ধ  তথ্যের অধিকার ও জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ  শালীন ও সংযত কথাবার্তা কি শুধু একতরফা হতে হবে?  একটি অসমাপ্ত গল্প  মুসলিম বিশ্বে সেক্যুলারিজমের বর্তমান ও ভবিষ্যত  চীন দেশের কথা  হিকমতে হুজ্জতেদের কথা  মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে বিশ্বসভায়  ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো  বধ্যভূমিতে গেয়ে গেল যাঁরা জীবনের জয়গান  ভিক্ষাবৃত্তির মুখোশ  লন্ডন ভ্রমণ এবং সুখ-দুঃখের দু'টি কথা  শিক্ষার মানোন্নয়নে চাই যথার্থ মনিটরিং  পান্থজনঃ কী পাই নি তারি হিসাব মিলাতে মন মোর নহে রাজী


দৈনিক কালের কন্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ ডা. তাজুল ইসলাম
সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.