খবর, কালের কণ্ঠের- আমরাই পারি 'দ্বিতীয় রাজধানী' গড়তে by আবেদ খান

কটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে কালের কণ্ঠ। আজ ডিসেম্বর মাসের ১ তারিখ। এই দিন থেকেই শুরু হচ্ছে কালের কণ্ঠের নিয়মিত বিশেষ আয়োজন 'দ্বিতীয় রাজধানী'। প্রকাশিত হবে এক দিন অন্তর এক দিন। বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগের যাবতীয় সমস্যা-সম্ভাবনা তুলে ধরে এখানকার মানুষের আজন্ম-লালিত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্যই আমাদের এ প্রয়াস। কী নেই চট্টগ্রামের? প্রকৃতি এ অঞ্চলকে অকৃপণভাবে দিয়েছে অনুপম রূপমাধুর্য। পাহাড়-সাগর-অরণ্য এই তিনের অনন্য সমাহার এবং এর পাশাপাশি অপরিমেয় প্রাকৃতিক সম্পদ বাংলাদেশকে পৃথিবীর মানচিত্রে কত সম্মানজনক স্থানে অধিষ্ঠিত করতে পারে, তা কি অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করতে পারেন রাজধানী ঢাকায় যাঁরা বিভিন্ন সময়ে শাসনক্ষমতায় আসীন হন, তাঁরা? আমাদের দুর্ভাগ্য, চট্টগ্রামের গুরুত্ব আমাদের দেশের ক্ষমতাসীনরা কখনোই বোঝেন না, কিন্তু বোঝে বিদেশিরা।
তাই কতবার কত সম্ভাবনাময় প্রস্তাব এসেছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে। অথচ কী এক রহস্যময় জটিলতার অক্টোপাস-বন্ধনে আটকে থাকে সবকিছু।
এ কথা বলছি এ কারণে যে এই চট্টগ্রামে আমার আগমন তো কম ঘটল না! যৌবনের প্রারম্ভ থেকে এখন এই জীবনের অপরাহ্ন অবধি কতশতবার এসেছি, সে হিসাব করে লাভ নেই। বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন বয়সে, বিভিন্নভাবে দেখেছি চট্টগ্রামকে। কখনো পরিব্রাজক হিসেবে, কখনো পেশার প্রয়োজনে। মিশেছি সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে। সবার ভেতরে কেবল একটি প্রশ্ন-এত এগিয়েও কেন এত পিছিয়ে আছে চট্টগ্রাম?
এই তো মাত্র দিন তিনেক আগে কথা হয়েছিল চট্টগ্রামের বিশিষ্ট শিল্পপতিদের কয়েকজনের সঙ্গে। দেখা হয়েছিল চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র আর বর্তমান মেয়রের সঙ্গে। তাঁদের ভেতরেও সেই একই প্রশ্ন। এত পিছিয়ে থাকার কারণটা আসলে কী? বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে গত ৪০ বছরে মন্ত্রিত্ব পদে আসীন রাজনীতিকের সংখ্যা তো কম নয়। কিন্তু চট্টগ্রামের প্রকৃত উন্নয়নে তাঁদের কাছ থেকে আশাপ্রদ ফল পাওয়া যায়নি। ধরে নিচ্ছি, তাঁরা চেষ্টা করেছেন কিন্তু পেরে ওঠেননি। যদিও অধিকাংশ সাধারণ মানুষের মোটা দাগের অভিযোগ, তাঁদের বেশির ভাগই ব্যক্তিস্বার্থকে মুখ্য করে ফেলায় চট্টগ্রাম কেবল কাগজে-কলমে বাণিজ্যিক রাজধানী রয়ে গেছে, আর কিছুই হয়নি।
বিভিন্ন সময়ে সবার সঙ্গে কথা বলা পর যা যা করা দরকার বলে মনে হয়েছে তা হলো-
১. আমরা অনায়াসে চট্টগ্রাম বন্দরকে সিঙ্গাপুরের সমতুল্য করে গড়ে তুলতে পারি, যদি এই বন্দরের সম্প্রসারণ করতে পারা যায়। মিরসরাই পর্যন্ত উপকূলকে বন্দরের প্রয়োজনে ব্যবহার করলে এবং সেক্টর ভাগ করে রপ্তানিযোগ্য পরিকল্পিত শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠার আশু পদক্ষেপ নেওয়া হলে পোশাক শিল্পসমেত অনেক নতুন শিল্প গড়ে উঠতে পারে এবং বিদেশি বিনিয়োগ অধিকতর সহজলভ্য হতে পারে;
২. চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং সাধারণ মানুষের আবেগকে বিবেচনায় রেখে পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। সরকারের একটা উন্নয়ন পরিকল্পনা থাকে এবং সে জন্য বড় অঙ্কের বাজেটও থাকে। কিন্তু একেকটা অঞ্চলের জন্য যেভাবে অর্থ বরাদ্দ এবং টাকা ছাড় দেওয়া হয় তা অনেকটা বাৎসরিক জাকাত দেওয়ার মতো চেহারা হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে না করা যায় কোনো পরিকল্পনা, না করা যায় কোনো উন্নয়ন। এ ক্ষেত্রে যদি একবারে একেক অঞ্চলে বেশ বড় অঙ্কের থোক বরাদ্দ দেওয়া যায় তা হলে কাজের একটা হিসাবও থাকে, উন্নয়ন পরিকল্পনাও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়;
৩. চট্টগ্রাম বন্দরকে বহুমাত্রিক ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। আমরা এটা করতে পারছি না কেবল বন্দর নিয়ে নানাবিধ রাজনৈতিক কার্যক্রমের জন্য। জাতীয় এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে চট্টগ্রাম বন্দরকে সব ধরনের দলীয় বা ব্যক্তিস্বার্থ ও কোটারি স্বার্থমুক্ত রাখতে হবে-এ প্রত্যাশা যেমন চট্টগ্রামের সর্বস্তরের রাজনীতিকদের, তেমনি সর্বস্তরের ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিদেরও;
৪. চট্টগ্রামের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো উন্নত করতে হবে। এবং এ জন্য একটা মাস্টার প্ল্যান করা দরকার। উন্নয়নসংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক্রমে, এবং তা করা উচিত অতি দ্রুত-এটা প্রায় সবার অভিমত থেকে বেরিয়ে এসেছে;
৫. চট্টগ্রাম বিভাগের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় শিল্প হচ্ছে পর্যটন শিল্প। এই শিল্পকে বাংলাদেশে অহংকারে পরিণত করা যায়, যদি এ ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। পৃথিবীর দীর্ঘতম সৈকত আছে এখানে, আছে সাগরের উত্তুঙ্গ ফেনিল জলরাশি, আছে মোহময় দ্বীপমালা, আছে পাহাড়ের মায়াবী হাতছানি, আছে বনাঞ্চলের রহস্যময়তা আর আছে বহুবিধ সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের অনন্যসাধারণ রূপ। পৃথিবীর পর্যটকদের জন্য এর চেয়ে অধিকতর আকর্ষণীয় আর কী হতে পারে? শুধু যা দরকার তা হলো পর্যটকদের আকর্ষণ করার উপযোগী ব্যবস্থাপনা। পৃথিবীর সব দেশের মানুষই নিজের দেশকে প্রকাশ করার জন্য উন্মুখ থাকে। আর আমরা আমাদের রূপ-সৌন্দর্যকে অন্ধকার নেকাবে ঢেকে রাখার চেষ্টা করি। এই পশ্চাৎমুখী ভাবনা থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে অচিরেই। এটাও মনে করেন বাংলাদেশের 'দ্বিতীয় রাজধানী'র বিভিন্ন স্তরের মানুষ।
এ সবকিছু আমরা তুলে ধরতে চাই আমাদের কালের কণ্ঠের নিয়মিত প্রকাশনা 'দ্বিতীয় রাজধানী'তে। কালের কণ্ঠের এ আয়োজন চট্টগ্রামের উন্নয়নের স্বার্থে, দেশের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ নির্মাণের স্বার্থে, এবং পৃথিবীর সামনে সগৌরবে এ কথা উচ্চারণের জন্য যে, হ্যাঁ, আমরা পারি-আমরাই পারি।
======================
খবর- পুলিশি হরতাল  যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'উপদেশের খেসারত'  গল্প- 'স্বপ্নভঙ্গের ইতিবৃত্ত'  স্মরণ- 'জগদীশচন্দ্র বসুর কথা বলি'  যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'প্রধানমন্ত্রী কি হরতাল চান?  ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা রাজনীতির নতুমাত্রা  খবর, বিএনপি কর্মীদের দাঁড়াতে দেয়নি পুলিশ  গল্প- 'আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসারে'  গল্প- 'মহামানুষের গল্প' by রাসেল আহমেদ  গল্পালোচনা- 'যেভাবে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়!' by আলী হবিব  জলবায়ু সম্মেলনঃ আমি কেন কানকুনে যাচ্ছি? by মেরি রবিনস  ভ্রমণ- 'মেঘনায় যায় মেঘনা রানী' by সালেক খোকন  ভ্রমণ- 'গন্তব্য নাফাখুম' by জাকারিয়া সবুজ  আলোচনা- 'এখনো একটি গ্রেট গেইম অস্বস্তিকরভাবে প্রাসঙ্গিক' by এম আবদুল আজিজ  গল্পসল্প- জীবন ঢেকে যাচ্ছে বালুতে  প্রকৃতি- কোপেনহেগেন থেকে কানকুনঃ সময় এসেছে মুহূর্তটিকে কাজে লাগানোর by জেমস এফ মরিয়ার্টি  আলোচনা- দরিদ্র মানুষের পাঁজরের ওপর দুর্দান্ত পাজেরো  বিএনপির মিছিলে পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের পিটুনি  খবর কালের কন্ঠের- হরতালের ধরপাকড় চলছেই  খবর- খুনের মামলা প্রত্যাহার, শীর্ষ সন্ত্রাসীর অব্যাহতি by নজরুল ইসলাম  প্রকৃতি- চট্টগ্রামে ঐতিহ্যের পাহাড় কেটে বহুতল ভবনঃ সুরক্ষার পরিকল্পনা ধ্বংসের অনুমোদন


দৈনিক কালের কণ্ঠ এর সৌজন্যে

এই খবর'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.