সাফ চ্যাম্পিয়নস লিগ কত দূর

সাফ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফুটবল এ বছর শুরু করার কথা জানানো হলেও শেষ পর্যন্ত এই টুর্নামেন্ট চলে যাচ্ছে আগামী বছর। অর্থাৎ সাফ চ্যাম্পিয়নস লিগও আলোর মুখ দেখছে না সময়মতো।
দক্ষিণ এশীয় ফুটবল ফেডারেশনের (সাফ) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর কাজী সালাউদ্দিনের অন্যতম বড় পরিকল্পনা ছিল এটা। কিন্তু পরিকল্পনা থাকলেই তো হয় না, অংশ নেওয়া দেশের ক্লাবগুলোর ঘরোয়া সূচির সঙ্গে সমন্বয় করা গেল কই! ‘সমন্বয়’ করেই টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হবে’—ঘোষণা দিয়েছিলেন সালাউদ্দিন।
ঘোষণাটা বাস্তবায়ন করতে দেরি কেন? কিংবা আদৌ কি সাফ চ্যাম্পিয়নস লিগ হবে? প্রশ্নগুলো আসছেই। কাল যোগাযোগ করা হলে সালাউদ্দিন বললেন, ‘ডিসেম্বরে ঢাকায় মহিলা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ করব। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগটা এ বছর করা যাচ্ছে না। ৮ দেশের ঘরোয়া সূচি মেলানো কঠিন। ডিসেম্বরে মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের সময় সাফের সভা হবে। তখন চ্যাম্পিয়নস লিগ নিয়ে অগ্রগতির খবর দেওয়া যাবে। তবে আগামী বছর অবশ্যই এই টুর্নামেন্ট করতে চাই।’
ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস লিগের আদলে সাফ চ্যাম্পিয়নস লিগ করার পরিকল্পনা থাকলেও সেটা বাস্তবায়ন কঠিনই। এ অঞ্চলের ফুটবলে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে খেলার সংস্কৃতি নেই। এ কারণেই অন্তত বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপের ক্লাব দল পেলেও যেকোনো এক দেশে টুর্নামেন্ট করার কথা জানিয়েছিলেন সালাউদ্দিন। প্রথমবার বাংলাদেশে করতে চেয়েছেন।
কিন্তু আর দশটা পরিকল্পনার মতো এটিও দীর্ঘসূত্রতার কবলে পড়ল। সালাউদ্দিন এর পেছনে কিছু কারণও দেখছেন। বাংলাদেশের ৭-৮টি দল নিয়ে যেখানে একটা টুর্নামেন্ট করা যায় না সময়মতো, সেখানে সাফের ৮ দেশের ক্লাব না হলেও অন্তত ৪-৫টি দেশের ক্লাব দলকে একসঙ্গে পাওয়া সহজ ব্যাপার নয়। সালাউদ্দিন বলছেন, ‘ডিসেম্বরে সব দেশের প্রতিনিধি সাফের সভায় যোগ দেবেন ঘরোয়া সূচি নিয়ে। তখনই বলা যাবে আগামী বছর কোন মাসে টুর্নামেন্টটি করতে পারব।’
বছরখানেক আগে সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে সাফের নতুন কমিটি এসে তাও কিছুটা নড়াচড়া দিয়েছে, তার আগ পর্যন্ত এই সংগঠন সাফ টুর্নামেন্ট ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি। উদ্যোগের অভাব, আর্থিক সংকট, ঘরোয়া সূচি মেলাতে না পারা, সদস্যদেশগুলোর কাছ থেকে কখনো কখনো প্রত্যাশিত সাড়া না পাওয়াই ছিল এর কারণ। বিশেষ করে ভারত কখনোই সাফকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি।
এবার সাফের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ভারতের কর্মকর্তা আলবার্তো কোলাসো। প্রস্তাবিত চ্যাম্পিয়নস লিগের জন্য সময় বের করতে এখন ভদ্রলোক চিঠি লেখেন সাফ দেশগুলোকে। সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন ঢাকায়। কিন্তু কাজের কাজ তেমন হচ্ছে না। সদস্যদেশগুলোর কেউ চিঠির উত্তর দেয়, কেউ নাকি দেয়ই না!
সালাউদ্দিন সেটাই বললেন, ‘চিঠিপত্র লেখালেখি করেছেন জেনারেল সেক্রেটারি। উত্তরের অপেক্ষায় থাকতে হয়। আসলে ঘরোয়া সূচিটাই বড় বাধা হয়ে গেছে। ইউরোপে সবকিছু এমনভাবে ঠিক করা আছে, কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু এই অঞ্চলে একেক দেশের মৌসুম একেক সময়। তবে একবার শুরু করা গেলে আশা করি সমস্যা থাকবে না। চ্যাম্পিয়নস লিগ আমরা করবই।’
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে সালাউদ্দিন পার করেছেন ২৬ মাস। এই সময়ে সব ঘরোয়া কর্মসূচিই সময়মতো ঠিকভাবে করা যায়নি। সাফের কোনো পরিকল্পনা সময়মতো বাস্তবায়িত হবে কি না, তা নিয়ে তাই সংশয় থাকে। তার পরও আশা নিয়েই মানুষ বাঁচে। সালাউদ্দিনও আশায় আছেন, আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারির দিকে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের কাছ থেকে কিছু অনুদান মিলবে সাফের জন্য। ওটা পেলে সাফ এগিয়ে চলার গতি পাবে।

No comments

Powered by Blogger.