যোগ হলো ডাচ-লজ্জাও

বাংলাদেশ দলের এবারের ফেরাটা হতে পারত সাফল্যের রঙে রঙিন। অথচ কাল ভোরে এই দলটাই দেশে ফিরবে মাথা নত করে। হতাশা আর লজ্জা নিয়ে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে জয়ের সুখানুভূতি যে পরিণত তেতো স্বাদে! আয়ারল্যান্ডের পর কাল গ্লাসগোতে হল্যান্ডের বিপক্ষে ৬ উইকেটের হার বাংলাদেশ দলের যুক্তরাজ্য সফরটাকেই করল কলঙ্কিত।
টিটউড মাঠের বৃষ্টিবিঘ্নিত ৩০ ওভারের ম্যাচে ডাচদের সামনে ২০০ রানের লক্ষ্য দিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। হল্যান্ড ম্যাচ জিতে গেছে ৭ বল বাকি থাকতে। ৫৫টি ওয়ানডে খেলা হল্যান্ডের এটি ২৩তম জয়, তবে কোনো টেস্ট দলের বিপক্ষে এই প্রথম।
ওপেনিংয়ে এরিক সোয়ার্জিনস্কি ও অ্যালেক্সি কারভেজির ৮.১ ওভারে ৬১ রানের জুটিই হল্যান্ডের কাজটা সহজ করে দেয়। এরপর সাফল্যের ক্যানভাসে তুলির শেষ আঁচড় দেয় জুইডেরেন্ট-বারেসির পঞ্চম উইকেট জুটি। ইনিংসের ১৫তম ওভারে ১০৪ রানে চতুর্থ উইকেট পড়ার পর এই দুই ব্যাটসম্যানের ৯৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিই জয়ের বন্দরে নিয়ে যায় ডাচদের।
ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার না হওয়ায় বাংলাদেশের মানুষ মাশরাফি বিন মুর্তজার দলের হতাশাজনক পারফরম্যান্স দেখার হাত থেকে বেঁচে গেছে। তবে মাঠে বসে খেলা দেখেছেন, এমন এক দর্শক কাল রাতে টেলিফোনে জানিয়েছেন, ব্যর্থতার কারণ বোলারদের অনিয়ন্ত্রিত বোলিং আর বাজে ফিল্ডিং। হল্যান্ডের অনভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের সামনে যেন লাইন-লেন্থ খুঁজে পেতেই কষ্ট হচ্ছিল বোলারদের!
৬ ওভারে ২৮ রানে ২ উইকেট নেওয়া নাজমুল হোসেন ছাড়া ডাচ ব্যাটিংয়ের নির্যাতনের শিকার হননি কে? সঙ্গে যোগ হয়েছে মিস ফিল্ডিং। ক্রিকইনফোর তথ্য, ৫৪ বলে ৬৭ রান করা ওপেনার সোয়ার্জিনস্কি ব্যক্তিগত ২৫ রানের সময় আবদুর রাজ্জাকের বলে কাভারে সহজ ক্যাচ দিলেও মাহমুদউল্লাহর পিচ্ছিল হাত ধরতে পারেনি সেটি। এ ছাড়া ২৮তম ওভারে ব্যক্তিগত ৩২ রানের মাথায় নিশ্চিত রান আউটের হাত থেকে বেঁচে গেছেন শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকা জুইডেরেন্ট।
আইরিশদের সঙ্গে সিরিজ ১-১ এ ড্র করার পর স্কটল্যান্ডে ভুল করার সুযোগ ছিল না বাংলাদেশের। বৃষ্টিতে পরশু স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটা না হলেও কাল হল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দেরি করে (স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটা) শুরু হয়। ফলাফল যা, তাতে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের হয়তো এখন মনে হচ্ছে, বৃষ্টিতে এই ম্যাচটাও ধুয়ে গেলেই ভালো হতো। ২০০০ সালে টেস্ট ক্রিকেটে নাম লেখানোর পর আইসিসির কোনো সহযোগী সদস্যের কাছে এটি পঞ্চম পরাজয় বাংলাদেশের। হল্যান্ডের কাছে প্রথম।
৭ উইকেটে ১৯৯ রান করলেও ব্যাটসম্যানরা বাজে শট খেলে আউট না হলে বাংলাদেশের স্কোরটা আরও বড় হতে পারত, এমনটাই মনে করছেন গ্লাসগোর ওই দর্শক। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ওপেনার তামিম ইকবাল আউট হয়ে গেলেও দ্রুত রান তোলার কাজটা করেছেন জুনায়েদ সিদ্দিক (১৯ বলে ৩১)। দলের ৫২ রানে জুনায়েদও বল আকাশে তুলে কট বিহাইন্ড হয়ে যাওয়ার পর ইমরুল-জহুরুল মিলে ১১.১ ওভারে গড়েছেন ৮০ রানের জুটি। তবে ১৮তম ওভারে জহুরুল ফিরে যাওয়ার পর ছোটখাটো বিপর্যয়ে পড়তে হয়েছিল বাংলাদেশকে। ইনিংসের ২০তম ওভারে পরপর দুই বলে ইমরুল ও মুশফিকুর রহিমকে ফিরিয়ে দিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান মিডিয়াম পেসার পিটার বোরেন। মাহমুদউল্লাহ সেই হ্যাটট্রিক ঠেকালেও শেষ পর্যন্ত ঠেকানো গেল না লজ্জা।

No comments

Powered by Blogger.