জার্মানিই তৃতীয় হবে

জার্মানি-উরুগুয়ে আজ তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ। এমন ম্যাচ আসলে কেউই খেলতে চায় না। সেমিফাইনালে হারের ঘা তো এখনো শুকোয়নি। তবে দুদলের জন্য এই ম্যাচ একটা সুযোগও বটে। সমর্থকদের অন্তত একটা ধন্যবাদ দেওয়া এবং কিছুটা গৌরব ও নিজেদের ওপর বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা তো যাবে।
এসব ভেবে দুদলই জিততে চাইবে। কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, এমন ম্যাচ থেকে প্রেরণা খুঁজে পাওয়া এবং নিজের সেরাটা খেলা কঠিনই।
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মতো পরাশক্তি সেমিফাইনালের আগে বিদায় নিয়েছে। তাদের ফাঁক গলে বেরিয়ে গিয়ে সেমিফাইনালে খেলেছে ছোট্ট দেশ উরুগুয়ে। এটা উরুগুয়ের জন্য খানিক গর্বের, যা তাদের দিয়েছে এবারের বিশ্বকাপ। উরুগুয়ে তাদের প্রাপ্তির জন্য গর্ব করতে পারে। প্রত্যাশার চেয়েও ভালো করেছে লাতিন দেশটি।
উরুগুয়ের আছে ডিয়েগো লুগানোর মতো একজন গ্রেট দলনেতা। আছে ডিয়েগো ফোরলান, যে কিনা এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্ট্রাইকার। তবে এসবের মাঝেই তুলে আনতে হচ্ছে সেই ঘটনাটি। কোয়ার্টার ফাইনালে ঘানার বিপক্ষে গোললাইন থেকে হাত দিয়ে বল ঠেকিয়েছে উরুগুয়ের স্ট্রাইকার লুইস সুয়ারেজ। উরুগুয়ের জন্য এটা সম্ভবত দীর্ঘস্থায়ী এক স্মৃতি হয়ে রইবে। সুয়ারেজের ওই ঘটনা ঘানাকে জিততে দেয়নি কোয়ার্টার ফাইনালে।
এটা কি লজ্জার? অবশ্যই নয়। ভাবুন তো, এমন অবস্থায় পড়লে আমরা কী করতাম? সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে সুয়ারেজকে এবং এর জন্য তাঁকে মূল্যও দিতে হয়েছে। পেশাদার ফুটবলার হিসেবে আর অন্য কিছু করার আসলে সুযোগই ছিল না।
জার্মানি এই টুর্নামেন্টে এসেছিল একের পর এক ছোট আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত একটা দল নিয়ে। চোটের শিকার হয়ে মূল খেলোয়াড়েরা আসতেই পারল না। একদিক দিয়ে বিবেচনা করলে আমরা কিছু তরুণ খেলোয়াড়কে জোর করেই নিয়ে এসেছি, যাদের সামনে এখনো প্রচুর সময় পড়ে আছে। তারা অসাধারণ খেলল। ওজিলের খেলা তো রোমাঞ্চকর, মুলারও তা-ই। সামনে এগিয়ে যেতে কোচ কোয়াকিম লোর জন্য অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে। আগামী চার বছরে এই দল আরও অভিজ্ঞ হবে। আরও শক্তিশালী হবে। আগামী বিশ্বকাপ ব্রাজিলে। সেই টুর্নামেন্ট জয়ের জন্য অন্যতম ফেবারিট হবে জার্মানি।
আমি দেখতে চাইব রক্ষণ ভাগের ভেঙে পড়া ঠেকানোর জন্য দল একটা পথ খুঁজে নেবে। যদিও এটা যেকোনো দলের জন্যই কঠিন। আমরা স্পেনের দিকে তাকাতে পারি এবং তাদের কাছ থেকে শিখতে পারি জমাট এলাকায় পাসিং এবং মুভমেন্ট করতে হয় কীভাবে। তবে যত যা-ই বলি, সময় এখন আমাদের।
এই তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচটা সম্ভবত অনেক উন্মুক্ত হবে। ফল আসবে জার্মানির পক্ষেই। মুলার ফিরছে। আমি দেখতে চাইব প্রতি আক্রমণে প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করে দেবে জার্মানি। যেভাবে তারা ধ্বংস করেছিল অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, আর্জেন্টিনাকে। উরুগুয়ে আক্রমণে থাকারই চিন্তা করবে বেশি এবং সেটা হলে পেছনে আমরা খালি জায়গা পেয়ে কাজে লাগাতে পারব।
একই সঙ্গে উরুগুয়ের আক্রমণ ভাগে আছে সুয়ারেজ, ক্যাভানি ও ফোরলান, যারা সুযোগ তৈরি করবে, কাজে লাগাতে চেষ্টা করবে। গোল করে খেলা বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে ফোরলান। এটা তার কাছে প্রত্যাশিতই।
এই ম্যাচে চার-পাঁচটি গোল হতে পারে এবং আনন্দদায়ী দারুণ এক ম্যাচ হতে পারে। আমার মতে, উরুগুয়ের চেয়ে শক্তিশালী জার্মানি এবং তৃতীয় স্থানটা জার্মানিই পাবে। দুদলের খেলোয়াড়, সমর্থক ও ফুটবলবিশ্বের জন্য এটা আসলে উপভোগের ম্যাচ। যা-ই অর্জন হোক, ভবিষ্যতের জন্য তা কমও নয়। আশাবাদী চোখ নিয়ে আগামী দিনগুলোর দিকে তাকানোরই সময়।

No comments

Powered by Blogger.