আড়াই দিনে হার বাংলাদেশের

অপেক্ষা ছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতার। বাংলাদেশের শেষ উইকেটটা পড়লে অল্প কটা রানের লক্ষ্য তুড়ি মেরে পেরিয়ে যাবে ইংল্যান্ড লায়ন্স। জহুরুল ইসলাম ও রুবেল হোসেনের শেষ উইকেট জুটির প্রতিরোধে তাদের খেলতে হলো লাঞ্চের পর আরও ৩ বল। তার পরও প্রস্তুতি ম্যাচটা আড়াই দিনে ৯ উইকেটে হারল বাংলাদেশ!
ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ কোচ জেমি সিডন্স কাল ঘুরেফিরেই জহুরুলের প্রশংসা করলেন। ইংলিশ কন্ডিশনের প্রস্তুতি পর্বে ব্যাট হাতে সবচেয়ে উজ্জ্বল তো তিনিই! সারের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি দিয়ে শুরু, লায়ন্সের বিপক্ষে শেষ হলো অপরাজিত ৫৮ রানের ইনিংস দিয়ে। ৯ উইকেটে ১৩৯ রান করে আগের দিনের খেলা শেষ করলেও শেষ উইকেটে রুবেলের সঙ্গে তাঁর ৪০ রানের জুটিতেই দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ১৬১। এর মধ্যে ১০.৫ ওভারের ব্যাটিংয়ে কাল যোগ হয়েছে ২২ রান। তাতেও অবশ্য ম্যাচটা লাঞ্চের পর নিতে পারা ছাড়া আর কোনো লাভ হয়নি। বাংলাদেশের দেওয়া ৮৬ রানের টার্গেট ইংলিশরা পার হয়ে গেছে ১৬.৪ ওভারেই। এর মধ্যে তিনটা বল যে লাঞ্চের পরও হলো, সেটা জয় থেকে ১০ রান দূরে থাকতে আবদুর রাজ্জাক রবি বোপারাকে বোল্ড করতে পারলেন বলে। নইলে হয়তো লায়ন্সকে জিতিয়েই লাঞ্চে যেতেন আম্পায়াররা। লাঞ্চের পর প্রথম বলেই রাজ্জাককে লং অন দিয়ে ছক্কা মারার এক বল পর বাউন্ডারি দিয়ে মঈন আলীই করেছেন জয়সূচক রান।
আড়াই দিনেই ম্যাচ হেরে যাওয়ার দায় ব্যাটসম্যানদের। অথচ পরশু ১৩৯ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর নাকি ড্রেসিংরুমে জেমি সিডন্স খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন! কাল ডার্বি মাঠে প্রশ্নটা তুলতেই নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন কোচ, ‘গতকাল (গত পরশু) আমি এ কথা বলেছি। তবে তার আগের দিন কিন্তু এভাবে বলিনি। সেদিন আমি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছি, এমন বাজে পারফরম্যান্সের পরিণতি কী হতে পারে। কিন্তু আমি যদি প্রতিদিনই তাদের চাপ দিতে থাকি তারা তো আর ক্রিকেটই খেলতে চাইবে না! কাউকে না-কাউকে এটা বলতেই হবে যে, “যা হওয়ার হয়েছে। এখন সামনে এগিয়ে যেতে হবে। এটা নিয়ে ভেবো না। আমরা টেস্টে ভালো খেলতে চাই।’ আমি সেটাই করেছি।’
তাহলে শেষ প্রস্তুতি ম্যাচের ব্যাটিং-ব্যর্থতায় কোচের আসল প্রতিক্রিয়াটা কী? ‘খুবই খারাপ ব্যাটিং হয়েছে। এখানে কন্ডিশন অনেক বেশি বোলিং সহায়ক। ইংল্যান্ডে আসার আগে ফ্ল্যাট উইকেটে একটার পর একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে এসেছি আমরা, সেটিরও প্রভাব হয়তো পড়েছে। এই ব্যাটিংয়ে আমি খুশি নই।’ কোচ মনে করছেন, সুইং বল খেলতে পারার কৌশল না জানাটাই ব্যাটসম্যানদের মূল সমস্যা। তবে তিনি আশাবাদী, টেস্টে সবাই এ সমস্যা কাটিয়ে উঠবে। ‘সবার’ মধ্যে জলবসন্তে আক্রান্ত সাকিব আল হাসান থাকলেও তামিমের কথা জোর দিয়ে বলতে পারছেন না। হাতের ইনজুরি টেস্ট সিরিজে এই বাঁহাতির খেলাটাকে রেখেছে অনিশ্চয়তার মধ্যে। যদি শেষ পর্যন্ত তামিম না-ই খেলতে পারেন, কোচের কাছে অনেক বড় ধাক্কা হবে সেটা, ‘গত তিনটি সিরিজেই তামিম রান করেছে। তার না থাকাটা অনেক বড় ক্ষতি। আর সাকিব তো অলরাউন্ডার। বোলিং-ব্যাটিং দুটোর জন্যই তাকে দরকার। বাংলাদেশে এই দুই খেলোয়াড়ের বিকল্প নেই। সাকিব হয়তো শেষ পর্যন্ত খেলবে, তামিমেরটা বলা যাচ্ছে না। তবে তাকে খেলানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।’
সারে ও লায়ন্সের বিপক্ষে আড়াই দিনে ম্যাচ হারায় বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা নিয়ে আবারও ইংলিশ মিডিয়ার মাথাব্যথা শুরু হয়েছে। ২৭ মে লর্ডসে শুরু দুই টেস্টের সিরিজ তাই বড় এক পরীক্ষাই হবে বাংলাদেশের জন্য। তবে মিডিয়ার চেয়েও বাংলাদেশ কোচের কাছে বড় মনে হচ্ছে নিজেদের ওপর এমনিতেই জেঁকে বসা চাপটা, ‘চাপ তো আমাদের এমনিতেই আছে। আমরা নিজেদের ভালো দল হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। আইসিসিকে জানাতে চাই, আমরা সত্যিকারের একটা টেস্ট দল। গত তিনটি টেস্ট সিরিজে আমরা সেটা প্রমাণও করেছি।’
এটা বাংলাদেশ কোচের মতামত। বাংলাদেশ সম্পর্কে লায়ন্সের ২১ বছর বয়সী পেসার ক্রিস ওকসের মন্তব্যটাও শুনুন, ‘ওদের ধৈর্য কম। এ ধরনের কন্ডিশনে কষ্ট করে রান করতে হয়। আমার মনে হয়, সে রকম ব্যাটিং করার মানসিকতার অভাব আছে ওদের।’

No comments

Powered by Blogger.