বিশাল জয়েও দুশ্চিন্তা ব্যাটিং

চারদিকে সবুজের সমারোহ। টিলা কেটে ছবির মতো ফুলে ফুলে সাজানো সব। এই নন্দনকাননের পরিবেশটাই মুগ্ধ করে দেবে আপনাকে। ক্রিকেটে মন বসানোই দায়।
নাঈম ইসলাম, ফয়সাল হোসেনদের আর দোষ কী! প্রথমজন ২ বল, পরের জন মাত্র এক বল খেলেছেন। এই দুজনসহ বাংলাদেশ দলের আরও কয়েকজনের ব্যাটিং দেখে মনে হলো এখানকার সৌন্দর্যে ভালোই মজেছেন। উইকেটে গেলেন আর এলেন, প্রতিপক্ষ ফিল্ডারকে ক্যাচ অনুশীলন করিয়ে।
প্রতিপক্ষ মালয়েশিয়া বলে রক্ষা! নইলে এশিয়ান গেমসে প্রথম ঢোকা ক্রিকেটে মেয়েদের ক্রিকেটে রুপা এলেও, ছেলেদের ক্রিকেটে ব্রোঞ্জও মিলত না। এসব অলক্ষুনে কথার এখন আর অবশ্য কোনো মানে হয় না। নিজেরা ৭ উইকেটে ১৫০ রান করার পর মালয়েশিয়াকে শেষ ওভারে ৮০ রানে অলআউট করেছে। টি-টোয়েন্টিতে ৭০ রানের বিশাল জয়—তবু বড় হয়ে উঠছে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংই।
আগামীকাল সেমিফাইনালে বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। ফাইনালে উঠলে সম্ভাব্য পাকিস্তান। সোনা জেতার পথটা কঠিনই। কাল শুরুটা ভালো করার পরও মাঝপথে খেই হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে চিন্তিত দেখাল কোচ সারোয়ার ইমরানকে, ‘সামনের ম্যাচের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে থাকল এই ব্যাটিং।’
গুয়াংজু স্টেডিয়ামটা এখানকার সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। কাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার দুয়েক ছাত্রছাত্রী স্টেডিয়ামে হাজির। এই জনতার কোনো পক্ষপাত নেই, রান হলেই উল্লাস। আউট হলেও তাই। আর প্রতি রানের পর পরই মাইকে তা বলে দেওয়া হয়। একজন চীনা ভাষায়, অন্যজন চীনা ইংরেজিতে। বাংলাদেশ নামটা তাদের কাছে বাংলাদেশ নয়, ‘বানজালাদেশ’। কখনো কখনো গ্যালারির এক কোনা হয়ে উঠল মিরপুরের গ্যালারি! স্থানীয় শ খানেক বাংলাদেশি পতাকা নিয়ে হইচই করে খেলা দেখল।
এই জনতাকে নাজিম-মিঠুন উদ্বোধনী জুটি ভালোই আনন্দ দিল। ৫.১ ওভারে ৪৭ রান করে তাঁরা বিচ্ছিন্ন। এরপরই মড়ক, বাংলাদেশ ১১ ওভারে ৮২/৫! মিঠুন ৩৫ বলে সর্বোচ্চ ৩৯, নাজিম ১৪ বলে ২০। বল হাতে ৫ রানে ৩ উইকেট নেওয়ার আগে আশরাফুল পরিস্থিতির দাবি মেনে ৩০ বলে করেছেন ২৯—একেবারেই টি-টোয়েন্টির আমেজহীন ব্যাটিং। ১১তম ওভারে তো তিন উইকেট নেই! ফয়সাল, নাঈম, মিঠুন আউট। বুঝুন কী অবস্থা!
মালয়েশিয়ার ব্যাটিং ঢাকা-গুয়াংজু হেঁটে রওনা দেওয়ার মতো ব্যাপার ছিল। এদের বেশির ভাগেরই ফিটনেস নেই। অনেকের শরীরেই মেদ জমেছে। দেখলে ক্রিকেটার মনে হবে না। আবার কুস্তিগির বললে একটু বেশিই বলা হয়ে যায়, তবে টি-টোয়েন্টির মতো গতিময় ক্রিকেটে মালয়েশিয়ানরা তাল মেলানোর উপযুক্ত নয় বলেই রায় দেওয়া যায়। এক ওভারে তিনটিসহ মোট ৪টি উইকেট নিয়ে ব্যতিক্রম একজন—মোহাম্মদ ইউসফ।
ম্যাচ শেষে মিক্সড জোনে দুই দলের ৮-১০ জন খেলোয়াড় এক লাইনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে এলেন। সবার চেয়ে বেশি ভিড় আশরাফুলের সামনে। বাংলাদেশ অধিনায়ক বলে গেলেন, ‘উইকেটটা আমরা বুঝিনি। একটু স্লো। এই উইকেটে আমরা ড্রাইভ খেলতে গেছি বেশি। এটা ঠিক হয়নি। এ জন্যই উইকেট বিলাতে হয়েছে। অনুশীলন উইকেটও ভালো ছিল না।’
ম্যাচের পর ছবি তোলা নিয়ে বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টের কর্মকর্তাদের মধ্যে বিশাল তোড়জোড়। যে যেভাবে পেরেছেন ছবি তুলেছেন। সবার যেন বিদেশে আসা ছবি তোলার জন্যই! ব্যাটিংয়ের চিন্তা নিয়ে আশরাফুলদেরও সেই আবদার মিটিয়ে যেতে হয় একের পর এক!

No comments

Powered by Blogger.