শিক্ষককে তালা - ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরুন

ক্ষমতাসীন দলের আশীর্বাদপুষ্ট বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা একের পর এক জবরদস্তির নজির স্থাপন করে চলেছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেত্রীকে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে এক শিক্ষককে তাঁরা তালাবদ্ধ করে একটি কক্ষে আটকে রেখেছিলেন। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস-আশ্রিত ছাত্র-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের হাতে এ ধরনের ঘটনা আগেও বহুবার ঘটেছে। নতুন বছরের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে তাঁদের হাতে প্রহূতও হতে দেখা গেছে। আর প্রতিনিয়ত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি-দখলবাজি-মারপিট-ভাঙচুরের সংবাদ ছাপা হচ্ছে।
গত সোমবারের প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির সমাজতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক পদে ছাত্রলীগের নেত্রী মুন্সী তানিয়া আফরারকে নিয়োগ দিতে বাধ্য করার কৌশল হিসেবে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা শিক্ষক হাসানুজ্জামান চৌধুরীকে তালা মেরে আটকে রাখেন। ছাত্রলীগের দাবি, তাঁরা অযোগ্য প্রার্থী নির্বাচনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সেই নেত্রীকে নিয়োগ দেওয়া না হলে ক্যাম্পাস অচল করে দেওয়ার হুমকিও তাঁরা দিয়েছেন। তাঁদের এই ক্ষমতা পেশিশক্তির এবং এর উত্স সরকারে আসীন রাজনৈতিক দলের আশ্রয়-প্রশ্রয়।
নির্বাচক কমিটির কোনো সিদ্ধান্ত বা নির্বাচন-প্রক্রিয়া নিয়ে কারও কোনো অসন্তোষ থাকলে নিয়মতান্ত্রিক পথে এর প্রতিবাদ জানানোর সুযোগ আছে। কিন্তু পেশিশক্তি ব্যবহার করে, ভয় দেখিয়ে নিজেদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়ে আসার চেষ্টা আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। এ রকম অনিয়মতান্ত্রিক পন্থা প্রতিবাদ জানানোর পথ হতে পারে না। এমন আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ডে নগ্ন হস্তক্ষেপের শামিল। তাই এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সতর্ক হওয়া দরকার।
শিক্ষাঙ্গনের অশান্ত অবস্থা নিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী নানা সময়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালেও দখলদারি-মানসিকতার রাজনৈতিক আচরণ প্রতিকারে কার্যকর পদক্ষেপ খুব একটা দেখা যায়নি। এটা শুধু দুঃখজনকই নয়, হতাশারও। প্রশাসনকে নির্ভয়ে ও হস্তক্ষেপমুক্তভাবে কাজ করতে দিলে এসব লাগামহীন আচরণের প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে। আমরা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের এই উচ্ছৃঙ্খল আচরণের নিন্দা জানাই এবং দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি।

No comments

Powered by Blogger.