খুলনার ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র -দেরিতে কর্মস্থলে যাওয়া বন্ধ হোক

তৃণমূল পর্যায়ে সাধারণ রোগের চিকিত্সা-পরামর্শ, পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রী সরবরাহ ও জন্মনিয়ন্ত্রণ উদ্বুদ্ধকরণে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র মূলত কাজ করে। সহজে সাধারণ মানুষকে দরকারি স্বাস্থ্যসেবা পাইয়ে দেওয়ার বিবেচনা থেকেই এই ব্যবস্থা। কিন্তু সেখানে যদি মানুষকে অশেষ ভোগান্তিতে পড়তে হয়, তবে বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
শনিবারের প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীন খুলনা জেলার ৪৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অধিকাংশে সরকার নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী সেবা প্রদান করা হয় না। প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে চিকিত্সক-কর্মচারীরা নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো কয়েক ঘণ্টা দেরিতে আসেন। এজন্য তাঁদের কারও কাছে জবাবদিহিও করতে হয় না।
তৃণমূল পর্যায়ে অনেকে বড় ধরনের অসুখে আক্রান্ত না হলে সাধারণত চিকিত্সকের শরণাপন্ন হতে চান না। কর্মক্ষম মানুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট করে দূরে গিয়ে চিকিত্সা নেওয়ার মতো সুযোগ করে ওঠা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না। তাঁদের স্বাস্থ্যসেবার আওতায় নিয়ে আসা এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এসব মানুষকে যদি নিজের বাড়ির কাছের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় তাহলে এ কেন্দ্রগুলোর আর কী উপযোগিতা থাকে? নানা সময়ে জনবল সংকটের দোহাই দিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা চলে, কিন্তু যেখানে প্রয়োজনীয় জনবল আছে সেখানে এ ধরনের কাজে অবহেলার জবাবদিহির কোনো ব্যবস্থা কি জারি আছে? কেন্দ্রগুলোর কার্যক্রম তদারকের দায়িত্বে যেসব সংস্থা ও ব্যক্তিরা আছেন, তাঁরা কী করেন?
সময়মতো কর্মস্থলে পৌঁছা যেকোনো ব্যক্তির পেশাদারি দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু নিয়মিত কয়েক ঘণ্টা দেরি করে কর্মস্থলে যাওয়াকে দায়িত্বে অবহেলা ছাড়া অন্য কোনোভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না। জনগণের সেবায় নিয়োজিতদের ভুলে গেলে চলবে না যে তাঁদের অল্প কয়েকজনের খামখেয়ালি আর অবহেলার জন্য সমাজের বিপুল সংখ্যক মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই তাঁদের যেমন আরও সংবেদনশীল হওয়া প্রয়োজন, তেমনি কেউ যেন দায়িত্বে অবহেলা করে পার না পান তার জন্য জবাবদিহির ব্যবস্থাও জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.