দুই শতাধিক ওয়েবসাইটে ইংরেজি ভাষায় প্রচারিত হচ্ছে আল-কায়েদার বার্তা

পশ্চিমা বিশ্বে মুসলমানদের কাছে আল-কায়েদার বার্তা প্রচারে নিয়োজিত ইংরেজি ভাষার ওয়েবসাইটের সংখ্যা বেড়েছে। সম্প্রতি সৌদি আরব সরকারের এক কর্মসূচি থেকে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ইসলামি ওয়েবসাইটে জঙ্গিদের প্রচারণা মোকাবিলায় পরিচালিত ‘আসসাকিনা’ নামের ওই কর্মসূচি থেকে জানা গেছে, ইংরেজি ভাষায় আল-কায়েদার বার্তা প্রচার করছে—এমন ওয়েবসাইটের সংখ্যা গত সাত বছরে ৩০ থেকে বেড়ে দুই শতাধিক হয়েছে। খবর এপির।
আসসাকিনা কর্মসূচির প্রধান আবদুল মানাম আলমুশাওয়াহ জানান, আল-কায়েদার প্রতি সহানুভূতিশীল ওয়েবসাইটের সংখ্যা এখন ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। এর বিপরীতে গত সাত বছরে আরবি-ভাষাভিত্তিক ওয়েবসাইটের সংখ্যা এক হাজার থেকে কমে এখন ৫০-এ এসে ঠেকেছে। কারণ, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার এ ধরনের বেশির ভাগ ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছে।
আলমুশাওয়াহ জানান, ইংরেজি ভাষার এসব ওয়েবসাইটের বেশির ভাগের সার্ভারের অবস্থান ব্রিটেনে। তবে বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে এগুলো পরিচালনা করা যায়। এসব ওয়েবসাইটে যেসব ধর্মীয় নেতার বক্তব্য প্রচারিত হয়, এর বেশির ভাগই আরবের নাগরিক। তবে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডেরও কয়েকজন রয়েছেন। আল-কায়েদার প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের ৭০ শতাংশই ইন্টারনেটের মাধ্যমে ওই গোষ্ঠীর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন—এমন তথ্য জানার পর সৌদি কর্তৃপক্ষ আসসাকিনা কর্মসূচি শুরু করে।
ইংরেজি ভাষার এসব ওয়েবসাইটে আনোয়ার আল-আওলাকির মতো কট্টর ইসলামপন্থী নেতাদের বাণী প্রচার করা হয়। মানুষকে প্রভাবিত করার মতো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এ ধরনের অনেক কট্টরপন্থীই ইংরেজি ভাষায় বক্তৃতা বা ধর্মোপদেশ প্রচার করেন। পাশাপাশি আবদুল্লাহ আজ্জামের মতো আরবি ভাষাভাষি কট্টরপন্থী ধর্মীয় নেতাদের বক্তব্যও ইংরেজিতে অনুবাদ করে এসব ওয়েবসাইটে প্রচার করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ফোর্টহুডে হত্যাকাণ্ড চালানোর অভিযোগে আটক সেনা কর্মকর্তা মেজর নিদাল মালিক হাসানের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া আল-আওলাকি। নিদালের সঙ্গে আল-আওলাকি বহুবার ই-মেইলে বার্তা বিনিময় করেছেন। ফোর্টহুডে হত্যাকাণ্ডের পর নিদালকে আল-আওলাকি বীর বলে তাঁর প্রশংসা করেন।
আল-আওলাকি টুইন টাওয়ারে হামলার আগে ওই হামলায় অংশ নেওয়া দুই বিমান ছিনতাইকারীর সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্রের একটি মসজিদে আলাপ করেন। ইয়েমেনে ফেরার পর আল-কায়েদার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে কর্তৃপক্ষ তাঁকে এক বছরের জন্য আটকে রাখে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ইয়েমেনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা আবারও আল-আওলাকিকে গ্রেপ্তারের জন্য খুঁজছে।
আলমুশাওয়াহ বলেন, আল-আওলাকির মতো কট্টর ধর্মীয় নেতারা যেকোনো গোষ্ঠীর চেয়ে বেশি বিপজ্জনক। কারণ তাঁরা সরাসরি আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত নন। তাঁদের আটক করে কারাগারে আটকে রাখলেও আল-কায়েদার তেমন কোনো ক্ষতি হবে না।
ইসলামি জঙ্গিবাদ নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান নিউইয়র্কভিত্তিক এনইএফএ ফাউন্ডেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইভান কোলমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার হওয়া সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যে যাঁরা বাড়িতে বসে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকের বাড়ির কম্পিউটারে আওলাকির বার্তা পাওয়া গেছে।
অনলাইনে জঙ্গি তত্পরতার ওপর নজরদারি সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের প্রধান রিতা কাত্জ জানান, ইংরেজি ভাষায় আল-কায়েদার আদর্শের প্রচার পাওয়ার অর্থ হলো, সম্ভাব্য সহিংসতা সৃষ্টিকারীরা এখন শুধু আরবি ভাষায় পারদর্শী হয়েও কট্টরপন্থীদের দলে ভেড়াতে পারবে। তবে মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ইংরেজি ভাষাভিত্তিক আল-কায়েদার আদর্শ প্রচারকারী ওয়েবসাইটের সংখ্যা বাড়ার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

No comments

Powered by Blogger.