দুর্নীতির সুযোগ বাড়বে -গণখাতে ক্রয় আইন সংশোধন



সরকারি দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ছত্রচ্ছায়ায় সারা দেশে সরকারি কেনাকাটায় প্রভাব বিস্তারের অস্বস্তিকর খবর বেশ পাওয়া যাচ্ছিল। এ অবস্থায় আমরা উদ্বেগের সঙ্গে অপেক্ষায় ছিলাম, শাসক দল আওয়ামী লীগের অতীতের ভুল ও অভিজ্ঞতার আলোকে সরকারি কেনাকাটায় কী ধরনের অধিকতর স্বচ্ছ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় তা দেখার জন্য। কিন্তু মন্ত্রিসভার সাম্প্রতিক একটি সিদ্ধান্ত আমাদের আরও বিচলিত করেছে।
৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে গণখাতে ক্রয় আইন সংশোধনের একটি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এর তিনটি সারকথা হলো, দুই কোটি টাকা পর্যন্ত সরকারি কেনাকাটায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো পূর্ব-অভিজ্ঞতা লাগবে না; দ্বিতীয়ত, এ কাজ বিলিবণ্টন হবে লটারির মাধ্যমে; তৃতীয়ত, প্রাক্কলিত ব্যয়ের পাঁচ শতাংশের অতিরিক্ত কম দরে কেউ দর প্রস্তাব করলে তা বাতিল হবে। এর মধ্যে শেষোক্ত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে একটি সদুত্তর পাওয়া গেছে। বলা হয়েছে, অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করার লক্ষ্যেই এই হার বেঁধে দেওয়া হলো। লক্ষণীয় যে, মন্ত্রিসভার ওই বৈঠক শেষে একটি প্রেস ব্রিফিং হয়; কিন্তু সেখানে দুই কোটি টাকার কাজের জন্য কেন অভিজ্ঞতা শিথিল করা হলো, সে বিষয়ে কোনো কারণ বলা হলো না। অথচ প্রস্তাবিত এই সংশোধনীর বিষয়ে দাতারা আগেভাগেই আপত্তি দিয়েছিল। তা ছাড়া দুর্নীতির কারণেই লটারির ব্যবস্থা একসময় বাতিল করা হয়েছিল। এ কথাও সবারই জানা যে, সরকারি কেনাকাটায় ব্যাপকভিত্তিক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণেই দাতাদের পরামর্শ অনুযায়ী সরকারি ক্রয় আইন বা পিপিআর প্রণীত হয়েছিল।
গত মে ও জুন মাসে বিশ্বব্যাংক ও এডিবি পৃথকভাবে চিঠি দিয়ে সরকারকে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছিল। এখন যেটা জানা ও বোঝার বিষয় তা হলো, মন্ত্রিসভা কী ধরনের পরিস্থিতি ও বাধ্যবাধকতার পরিপ্রেক্ষিতে দুই কোটি টাকার কাজের জন্য অভিজ্ঞতা শিথিল করল। লটারির ব্যবস্থা চালু করা সম্পর্কে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে যে একই ধরনের দরপত্রদাতার সংখ্যা বেশি হলে তাদের মধ্য থেকে লটারি করে ঠিকাদার বাছাই করে নেওয়া হবে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, দক্ষতা ও যোগ্যতার আর কোনো দরকার নেই। চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা সরকারি কেনাকাটায় ব্যয় হবে। সুতরাং প্রস্তাবিত আইন পাস হলে ওই পরিমাণ টাকার কাজ বণ্টনে অনভিজ্ঞতা ও অদৃষ্টবাদই হবে চালিকাশক্তি। বর্তমান যুগে এ ধরনের ব্যবস্থাপনা অকল্পনীয়। সে কারণেই আমরা ক্রয় আইন সংশোধনের ওই প্রস্তাব বাতিলে টিআইবিসহ বিভিন্ন মহলের দাবিকে উপেক্ষা করতে পারি না। টিআইবি ৬ অক্টোবর এক বিবৃতিতে বলেছে, এর ফলে দলীয় প্রভাবভিত্তিক টেন্ডারে অরাজকতা ও দুর্নীতি উত্সাহিত হবে, উন্নয়নকাজের স্বচ্ছতা ও গুণগত মান ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আমরা বিদ্যমান আইনে প্রস্তাবিত সংশোধনী আনা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই। তবে দাতাদের পরামর্শে যে পিপিআর চালু করা হয়েছিল, তাও কিন্তু দুর্নীতি ও দলবাজি রোধে যথেষ্ট কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়নি। টেন্ডারবাজি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই সংসদে একটি খোলামেলা আলোচনা ও সে মতে উপযুক্ত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি রাখে।

No comments

Powered by Blogger.