বাংলাদেশ স্পেশালাইজ্‌ড হসপিটাল: বাইপাস সার্জারিতে নতুন অধ্যায় by ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

হার্টের বাইপাস সার্জারিতে দেশে এক নতুন অধ্যায় এনেছে বাংলাদেশ স্পেশালাইজ্‌ড হসপিটাল। নতুন এই পদ্ধতি হলো ইভিএইচ পদ্ধতি। বাইরের দুনিয়াতে প্রায় এক দশক আগে এটি বাস্তবায়ন হলেও বাংলাদেশে এই প্রথম বাংলাদেশ স্পেশালাইজ্‌ড হসপিটাল বাইপাস সার্জারিতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করছে। ইভিএইচ (এন্ডোস্কোপিক ভেইন হারভেস্টিং) পদ্ধতিতে অপারেশন করে দেশে হাসপাতালটি বেশ সফলও হয়েছে। এই পদ্ধতিতে বাইপাস সার্জারির জন্য প্রয়োজনীয় শিরাটি পা না কেটে কেবলমাত্র ২টি বা ৩টি ছিদ্রের মাধ্যমে ক্যামেরাযুক্ত বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে সংগ্রহ করা হয়। এতে রোগী অনেক  সুবিধা ভোগ করেন। কার্ডিয়াক সার্জনরা জানিয়েছেন, এই পদ্ধতিতে এ পর্যন্ত ৫০ জনের ওপর রোগীকে সফলভাবে অপারেশন করা হয়েছে। আর তাতে সকলেই ভালো আছেন।
চিকিৎসকরা জানান, বাইপাস সার্জারিতে ব্লকযুক্ত হার্টের রক্তনালীর সংখ্যা অনুযায়ী বিকল্প রক্তনালী বা গ্রাফট লাগানো হয়।
গ্রাফটের সংখ্যা একটি বা দুটি হলে, আমাদের বুকের মাঝখানের হাড়টির পেছনে অবস্থিত একটি বা দুটি ধমনি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু যখন তিন বা তার বেশি সংখ্যক গ্রাফটে লাগানোর দরকার হয় তখনই রোগীর পা চিরে শিরা নেয়ার প্রয়োজন হয়। গতানুগতিক পদ্ধতি হলো- ঠিক যতখানি দীর্ঘ শিরা লাগবে ততখানি দীর্ঘ পা কাটা হয়। এক্ষেত্রে রোগী বৃদ্ধ, ডায়াবেটিস বা স্থূলকার হলে এত বিশাল একটি ক্ষত জোড়া লাগতে বিভিন্ন রকম জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি কোনো রকম জটিলতা ছাড়া জোড়া লাগলেও অপারেশন পরবর্তী দীর্ঘ সময় পা ব্যথা, ফোলা থাকে এবং সারা জীবনের জন্য একটি বিশাল দাগ থেকে যায়।

গতানুগতিক পা চিরে শিরা নেয়ার পদ্ধতিতে প্রায় ২ থেকে ২৪ শতাংশ ক্ষেত্রে ইনফেকশন, চামড়া মরে যাওয়া, কুৎসিত দাগ হতে পারে। দিনের পর দিন লেগে যেতে পারে হার্টের মূল অপারেশনটি সফল হলেও পায়ের ক্ষত সারতে। এসব জটিলতা দূর করার জন্য উন্নত বিশ্বে প্রায় এক দশক হলো এন্ডোস্কোপিক ক্যামেরায় মনিটর স্ক্রিনে দেখে, বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে দুটি থেকে তিনটি ছিদ্র করে পা থেকে শিরা উত্তোলন করা হয়। এই পদ্ধতিতে পায়ে দাগ, ফোলা আর ব্যথা থাকে না বললেই চলে এবং ক্ষত শুকানো সংক্রান্ত অন্যান্য জটিলতার হার কমে এসেছে ১ শতাংশের নিচে। ফলে রোগী দ্রুত আরোগ্য লাভ করে কর্মজীবনে ফেরত যেতে পারে। হার্টের সকল প্রকার অপারেশন যথা-বাইপাস সার্জারি (ঈঅইএ), ভাল্বের অপারেশন (গঠজ, অঠজ, উঠজ), জন্মগত ত্রুটি (অঝউ, ঠঝউ, চউঅ, ঞঙঋ) হার্টের টিউমার ইত্যাদি তুলনামূলক কম খরচে সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করা হয় এখানে।

বাইপাস সার্জারি: বিটিং হার্ট বাইপাস সার্জারি। টোটাল আর্টারিয়াল বাইপাস সার্জারি। এন্ডোস্কোপিক ভেইন হারভেস্ট-এর মাধ্যমে পা না কেটে শিরা উত্তোলন। হাসপাতালটিতে রয়েছে সার্বক্ষণিক কর্মরত একটি কার্ডিয়াক সার্জারি টিম যা একদল অভিজ্ঞ ও সুদক্ষ কার্ডিয়াক সার্জন, কার্ডিয়াক এনেসথেসিওলজিস্ট, আনটেনসিভিস্ট ও স্টাফ নার্সের সমন্বয়ে গঠিত। রয়েছে ২টি সর্বাধুনিক মড্যুলার কার্ডিয়াক অপারেশন থিয়েটার এবং ৮ শয্যাবিশিষ্ট সকল সুবিধাসম্পন্ন আধুনিক কার্ডিয়াক আইসিইউ। প্রত্যেক রোগীর জন্য সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োজিত থাকে একজন করে সিনিয়র স্টাফ নার্স। কিডনি ফেইলিওর রোগীর জন্য কার্ডিয়াক আইসিইউতেই রয়েছে ডায়ালাইসিসের সুব্যবস্থা।

হাসপাতালটির কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট কার্ডিয়াক সার্জন ডা. মো. শওকত আলী মানবজমিনকে বলেন, দেশে এই প্রথম বাংলাদেশ স্পেশালাইজ্‌ড হসপিটালে নিয়মিতভাবে বাইপাস সার্জারিতে এন্ডোস্কোপিক ভেইন হারভেস্টিং পদ্ধতি ব্যবহার করছে। এই পদ্ধতিতে বাইপাস সার্জারির জন্য প্রয়োজনীয় শিরাটি পা না কেটে কেবলমাত্র ২টি বা ৩টি ছিদ্রের মাধ্যমে ক্যামেরাযুক্ত বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে সংগ্রহ করা হয়। বাইপাস সার্জারিতে যত কাটা হবে ততো ব্যথা হবে। এতে সংক্রামক হওয়ার চ্যালেঞ্জ বেশি। রোগীর নড়াচড়া করতে এবং হাঁটাচলা করতে সময় বেশি লাগে। কিন্তু  ছোট ছিদ্র করে নিলে এগুলো সব কমে আসবে। তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ স্পেশালাইজ্‌ড হসপিটালে নিয়মিতভাবে সফলভাবে এ পর্যন্ত ৫০ জনের উপরে এন্ডোস্কোপিক ভেইন হারভেস্টিং পদ্ধতিতে বাইপাস সার্জারি করেছে। তারা সবাই এখন ভালো আছেন। তিনি আরো জানান, তারা প্যাকেজে আড়াই লাখ টাকায় বাইপাস সার্জারি করে থাকেন। এই পদ্ধতিতে লাগছে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

No comments

Powered by Blogger.