বিপজ্জনক ভবিষ্যৎ

১১ জুলাই যখন বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালিত হচ্ছে, তখন পাকিস্তানের যে চিত্র উঠে এসেছে, তাতে পাকিস্তানের বিপজ্জনক ভবিষ্যতের চিত্র উঠে এসেছে। বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চম জনবহুল দেশ পাকিস্তানের জনসংখ্যা এমনভাবে বাড়ছে, যেটা চতুর্থ স্থানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং ২০৩০ সাল নাগাদ সেখানে চলে যাবে পাকিস্তান। সেখানে যেতে ১০ বছরের সামান্য কিছু বেশি সময় বাকি রয়েছে। ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা ৭.৭ বিলিয়ন থেকে ৯.৭ বিলিয়ন হতে চলেছে এবং জাতিসংঘ যে হিসেব দেখিয়েছে, সে চিত্র অনুযায়ী যে নয়টি দেশের অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা বাড়ছে, তার মধ্যে পাকিস্তান একটি। পাকিস্তানের জনসংখ্যা এ মুহূর্তে ২১৭ মিলিয়ন। ২০১৭ সালে সবশেষ যে হিসেব ছিল, তার তুলনায় এটা ১২ মিলিয়ন (৫.৯%) বেশি।
জনসংখ্যার সাথে উন্নয়ন ও ব্যক্তির উন্নতির যে বিপরীত সম্পর্ক রয়েছে, সেখানে এই তথ্যগুলো পাকিস্তানের জন্য বিস্ফোরণোন্মুখ টাইম বোমার মতো অবস্থায় রয়েছে। যে দেশের অর্থনীতি দুর্বল, কর্মসংস্থানের অভাব প্রকট, খাদ্য ও পানির মতো সম্পদ সীমিত, এবং স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মতো মৌলিক সেবা যেখানে সীমিত হয়ে পড়েছে, সেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের মাত্রা শুধু কমতেই দেখা যাবে। আমাদের মতো একটা উন্নয়নশীল দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২.১ শতাংশ, যেটা এই অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম বেশি, এটা নিশ্চিতভাবে টেকসই উন্নয়নের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যেখানে নারীদের সন্তান জন্মদানের হার ২.৬২ – যেটা দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তানের পরে দ্বিতীয় – সেখানে এটা স্পষ্ট যে, জরুরি পদক্ষেপ নেয়া না হলে দেশের জনসংখ্যা দ্রুত বাড়তেই থাকবে, যেখানে জনগণকে সরবরাহ করার মতো সক্ষমতা রাষ্ট্রের থাকবে না।
সরকারের জন্য জরুরি ভিত্তিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দেয়াটা জরুরি এবং সক্রিয়ভাবে পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা ছড়িয়ে দেয়া উচিত। এটা দুঃখজনক যে বিগত সরকারগুলোর মধ্যে যে অনীহা ও ইচ্ছার অভাব চলে আসছে, সেটার কারণে পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক প্রচারণা পিছিয়ে পড়েছে। এ ধরনের স্থবিরতা দেশের ভবিষ্যতের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করবে। সচেতনতামূলক অভিযান এবং বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণকে অবশ্যই হাসপাতাল ও কমিউনিটিগুলোতে পুণরায় চালু করতে হবে। নারী ও পুরুষদের জন্মনিরোধ, জন্ম বিরতি সম্পর্কে শিক্ষিত করতে হবে এবং অল্প বয়সে বিয়ের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করতে হবে। সরকারকে অবশ্যই কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশনা দিতে হবে যাতে তারা আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞদের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে, যেটা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে। বাংলাদেশের মতো দেশের কাছ থেকে এ ব্যাপারে অনেক কিছু শেখার আছে, যারা দ্বারে-দ্বারে গিয়ে জন্ম নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রচারণা চালানোর ক্ষেত্রে সাফল্য পেয়েছে। ইরানও এ ব্যাপারে সাফল্য পেয়েছে, যারা তাদের ধর্মীয় নেতাদের মাধ্যমে এই বার্তা ছড়িয়েছে। অগ্রগতি যদি লক্ষ্য হয়, তাহলে সরকারের জনসংখ্যার সম্পর্কিত ভয়াবহ পরিস্থিতির বিষয়টি খোলামেলা স্বীকার করা ছাড়া এবং সময় থাকতেই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। এখনই পদক্ষেপ নিতে ব্যার্থ হলে সেটা বহু মিলিয়ন নাগরিকের ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করে ফেলবে।

No comments

Powered by Blogger.