কাশ্মীরে ঝুঁকির বিষয়টি ভারত বা পাকিস্তানের চেয়ে বেশি বুঝতে পেরেছে চীন by ক্যানডেস রনডেক্স

ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের ফলে দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতায় দীর্ঘ মেয়াদে কী প্রভাব পড়বে তা বলার সময় এখনো আসেনি। অনেকে আশঙ্কা করছে, পাকিস্তানের মদতে কাশ্মীরে বিদ্রোহীদের তৎপরতা বাড়বে, কিংবা দুই পরমাণু অস্ত্রসজ্জিত দেশের মধ্যে আরো অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। তবে ভারত বা পাকিস্তান নয়, এই অঞ্চলের ভারসাম্য এখন নির্ভর করছে চীনের হাতে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি মনে করছে, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে একে কেন্দ্রীয় এলাকা ঘোষণা করার ফলে এই এলাকার ওপর পাকিস্তানের দাবির ওপর চূড়ান্ত আঘাত হানা হয়েছে। কিন্তু উত্তেজনা যদি আরো বাড়ে, তবে সব পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর ইতোমধ্যেই কাশ্মীর উপত্যকার ৮০ লাখ লোক সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থেকে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। আর এই বিপজ্জনক খেলায় কতটা ঝুঁকি রয়েছে, তা অন্য যে কারো চেয়ে বেশি বোঝে সম্ভবত চীন।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সীমান্তে দুই দেশের মধ্যে এত ঘন ঘন সঙ্ঘাত হয় যে এর ফলে এই অঞ্চলের অন্যান্য স্থানে চীনের ভূমিকা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে কাশ্মীরের একটি অংশের দাবিদার চীনও। তারাও এই সঙ্ঘাতে ভূমিকা রাখছে।

তাছাড়া আগে তেমন সবর না থাকলেও বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় ক্রমেই ভূমিকা বাড়াচ্ছে চীন। গত জুনে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্বীকার করে যে আফগান তালেবান নেতারা চীন সফর করেছেন। চীনা সরকার ইরানি পরমাণু চুক্তিও সমর্থন করেছে। গত সপ্তাহে কাশ্মীরে ভারতের একতরফা পদক্ষেপের প্রতিবাদ চীন করেছে, তবে তার জবাব ছিল মাপা।

ভারতীয় পদক্ষেপের ফলে আকসাই চিন নামে পরিচিতি বৃহত্তর এলাকায় চীনা দাবির প্রতি আঘাত আসতে পারে। আকসাই চিন জনবিরল একটি এলাকা। এটি পশ্চিম দিকে চীনের গোলযোগপূর্ণ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জিনজিয়াং অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। লাদাখের ওপর ভারত ঐতিহাসিকভাবে দাবি উত্থাপন করে আসছে। এটি আগে ছিল ভারত শাসিত কাশ্মীরের একটি জেলা। এখন কাশ্মীরে বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার ফলে আকসাই চিনের ভাগ্য অন্তত কাগজে-কলমে হলেও ভারতের ওপর নির্ভর করছে।

বেইজিং ১৯৫০-এর দশক থেকেই লাদাখের ওপর ভারতীয় কর্তৃত্বের বিরোধিতা করে আসছে। চীন অরুনাচলের ওপর তার দাবি ছেড়ে দেয়ার বিনিময়ে লাদাখের ওপর ভারতের দাবি ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে আসছে।

তারপর ২০১৫ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ৪৬ বিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন। এটি চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) নামে পরিচিত। এটি কাশ্মীরের একটি অংশ দিয়ে গেছে। এর মধ্যে মহাসড়ক, রেললাইন ও জ্বালানি পাইপলাইনও রযেছে। এটি চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশবিশেষ। দক্ষিণ এশিয়ায় চীনা প্রভাব বিস্তারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো হলো এটি।

অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, যৌথ চীন-পাকিস্তান উদ্যোগের ফলেই ভারতের মনে অর্থনৈতিক প্রতিন্দ্বন্দ্বী ও বৈরী শক্তির হাতে বৃত্তাবদ্ধ হওয়ার ভয় ঢুকে গেছে। এতে কিছু সত্যতা থাকতে পারে। তবে দোকলাম সঙ্কটের পর ওয়ানে মোদি ও শির মধ্যে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের পর দুই দেশের সম্পর্ক অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসে।

এ কারণেও চীন এবার ভারতের পদক্ষেপের ব্যাপারে বেশ নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করেছে। মনে হচ্ছে, ওয়ানের চেতনার আলোকে কাজ অব্যাহত রাখতে চায় চীন।

মিত্র পাকিস্তানকে সন্তুষ্ট রাখার কাজটিও চীনকে করতে হবে। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ হোক, তা রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রও চায় না। তাছাড়া চীনের এখন মাথাব্যথা হংকং নিয়ে। ফলে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে খুব বেশি কিছু করার অবকাশও নেই চীনের কাছে। এ কারণে যু্ক্তি আর সংযমই সম্ভবত প্রাধান্য পাবে, অন্তত কাশ্মীরে চীনা স্বার্থের ব্যাপারে।

No comments

Powered by Blogger.