ভিক্ষুক মনোয়ারা এখন সফল দুধ ব্যবসায়ী

মনোয়ারা বেগম এখন আর ভিক্ষা করে না। দুধ বিক্রি করে এখন সে স্বাবলম্বী। মাগুরা পৌর এলাকার শিবরামপুর এলাকার অধিবাসী মনোয়ারার স্বামী ২০১০ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আকস্মিকভাবে মৃত্যু বরণ করেন। ৩ সন্তানের জননী মনোয়ারা তখন দিশাহারা হয়ে বাচ্চাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে এদিক ওদিক ছোটেন। কোনো উপায় না দেখে সে বেছে নিতে বাধ্য হয় ভিক্ষাবৃত্তিকে। কিন্তু এতে তার এবং তিন সন্তানের দুবেলার অন্ন জোগানো ছাড়া জীবনের কোনো চাহিদাই তার পূর্ণ হচ্ছিল না। ২০১৮ সালে রোভা ফাউন্ডেশন এবং মাগুরা সদর উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় সে শুরু করে গরুর দুধ বিক্রি। দিনে দিনে পাল্টাতে থাকে তার জীবন।
এখন সে ৬টি ছাগলের মালিক।
মনোয়ারা বলেন, আমি বিভিন্ন বাড়ি থেকে দুধ সংগ্রহ করি প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৫২ টাকায়। এই দুধ আমি মাগুরা নতুন বাজারে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করি। তাতে করে প্রতি কেজিতে আমার ১০ টাকা লাভ হয়। দিনে ৫০ কেজি দুধ বিক্রি করলেই আমার ৫০০ টাকা লাভ থাকে। এভাবে মাসে ১৫ হাজার টাকা অনায়াসেই আয় করতে পারি। দুধ বিক্রির কাজ আমার সকালেই শেষ হয়ে যায়, বাকি সময়টা কাটে ছাগল পালন করে। উপজেলা প্রশাসন থেকে আমি অনুদান পেয়ে গতবছর তিনটি ছাগল কিনেছিলাম যা গত ঈদুল আজহায় ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করি। বর্তমানে আমি নিজের টাকায় ৬টা ছাগল কিনে পালন করছি। আশা করছি তা আগামী ঈদুল আজহায় ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবো। মনোয়ারা গর্ব করে বলেন, এখন আমি স্বাবলম্বী। মানুষের দ্বারে দ্বারে আর ভিক্ষা করা লাগে না। এখন কেউই আর আমাকে ভিক্ষুক বলে না। মাগুরা রোভা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক কাজী কামরুজ্জামান বলেন, মনোয়ারাকে অনুদান দেয়ার পর আমরা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি। দুধ বিক্রি থেকে ছাগল পালন সবক্ষেত্রে তার ভালোমন্দ দেখাশোনা করছি। সবচেয়ে ভালোলাগে এই ভেবে যে, সে অতি সহজেই ভিক্ষুক থেকে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
মাগুরা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান বলেন, আমরা মাগুরাকে ভিক্ষুক মুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা করেছি। মনোয়ারা শুধু মাগুরা নয় আমাদের সমাজের একটি অন্যতম দৃষ্টান্ত।

No comments

Powered by Blogger.