মশা নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থতা

গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর সর্বত্র মশার উপদ্রব এতটাই বেড়েছে যে, মশক নিধনকর্মীরা আদৌ কোনো দায়িত্ব পালন করছে কিনা- এ প্রশ্ন এখন সবার মুখে। রোববারের যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কচুরিপানা পরিষ্কার ও মশার ওষুধ কেনার জন্য দুই সিটি কর্পোরেশনকে বরাদ্দ দেয়া হয় প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা। এ অর্থের সদ্ব্যবহার করা হলে মশার উপদ্রব এতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করত না নিশ্চয়ই। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার নাগরিকদের অভিযোগ, মশক নিধনকর্মীদের দেখা মেলে কালেভদ্রে। মশক নিধন প্রক্রিয়ার অনিয়ম দূর করা সম্ভব না হলে রাজধানীতে মশার উপদ্রব যে আরও বাড়বে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কয়েকদিন আগে মশার উৎপাতের কারণে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ ছাড়তে নির্দিষ্ট সময় থেকে দুই ঘণ্টা দেরি হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, উড়োজাহাজের ভেতরে থাকা মশার উপদ্রবে যাত্রীরা এতটাই অতিষ্ঠ হয় যে তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উড়োজাহাজটির উড্ডয়ন সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। বস্তুত রাজধানীর সর্বত্রই দিনেরাতে সব সময় মশার উপদ্রব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত বছর রাজধানীতে চিকনগুনিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে রাজধানীর সর্বস্তরের নাগরিক এ নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তিত হয়ে পড়ে। এ প্রেক্ষাপটে আশা করা গিয়েছিল কর্তৃপক্ষ এমন উদ্যোগ নেবে যাতে এ বছর মশার উপদ্রব তুলনামূলক কম থাকবে। কিন্তু বাস্তবে বিপরীত অবস্থাই লক্ষ করা যাচ্ছে।
মশা নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা অব্যাহত থাকলে রাজধানীতে আবারও ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকবে। মশক নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি আমরা জানি। কিন্তু বরাদ্দকৃত অর্থের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে রাজধানীর সর্বত্র মশার উপদ্রব উল্লেখযোগ্য হারে কমবে বলা যায়। রাজধানীসহ আশপাশের এলাকার জলাধারগুলো পরিচ্ছন্ন রাখার অভিযান অব্যাহত না থাকলে মশক নিধনে যে সুফল পাওয়া যাবে না এটি বহুল আলোচিত। বস্তুত মশার উপদ্রবে সারা দেশের মানুষই অতিষ্ঠ। মশক নিধনে সমন্বিত উদ্যোগ অব্যাহত না থাকলে রাজধানীর আশপাশের এলাকা থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা রাজধানীতে আসবে। গত কয়েক বছর ধরে রাজধানীতে এডিস মশার উপদ্রব বহুগুণে বেড়েছে। এটা ঠিক রাজধানীবাসী দায়িত্বশীলতার পরিচয় না দিলে কেবল দুই সিটি কর্পোরেশন এবং ঢাকা মশক নিবারণী দফতরের উদ্যোগে গৃহীত কর্মসূচির মাধ্যমে এডিসসহ অন্যান্য মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। মশা নিধনের মতো জরুরি কাজে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে দায়িত্বে পালন করছে কিনা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেরও দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক। বিভিন্ন জটিল রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাসের বাহক হিসেবে কাজ করে মশা। সব ধরনের মশা নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষ ব্যর্থতার পরিচয় দিলে সংকট বাড়তে থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.