ডিম খাওয়ায় কোনো বিধিনিষেধ নেই

ডিম পুষ্টিকর ও জনপ্রিয় খাবার। কম দামে এর চেয়ে পুষ্টিকর খাবার আর নেই বললেই চলে। চিকিৎসকরা বিভিন্ন সময়ে উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগীসহ এ ধরনের রোগীদের ডিম খাওয়ার ওপর বিধিনিষেধ দিয়ে আসছিলেন। তবে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, ডিমের পুষ্টিগুণ অসীম এবং ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের রোগীদের কোনো বিধিনিষেধ নেই। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনেও কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করেছে, ডিম পুষ্টিতে ভরপুর এবং এটি সহজলভ্যও। এ খাদ্যপণ্যটি হৃদরোগের শঙ্কা কমানো থেকে শুরু করে প্রসবজনিত ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, চোখ ও লিভার ভালো রাখে, হজম শক্তি বৃদ্ধি, শরীরের হাড় ও দাঁত মজবুত রাখে। ডিমের আকৃতি ও প্রকৃতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিকভাবেই কিছু ডিম গঠনে ত্রুটিযুক্ত হতে পারে, যেমন- নরম খোসাযুক্ত বা খোসাবিহীন, কুসুমে বিভিন্ন রং, জোড়া কুসুম বা ডিমের ভেতরে সামান্য রক্ত, এমনকি ডিমের ভেতরে মাংশের উপস্থিতিও থাকতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ডিমের সাদা অংশের মধ্যে পানি ৮৮ দশমিক শূন্য ভাগ, প্রোটিন ও আমিষ ১১ দশমিক শূন্য ভাগ, চর্বি শূন্য দশমিক ২ ভাগ এবং খনিজ পদার্থ শূন্য দশমিক ৮ ভাগ। ডিমের হলুদ অংশ বা কুসুমের মধ্যে ৪৮ দশমিক শূন্য ভাগ পানি, ১৭ দশমিক ৫ ভাগ প্রোটিন, ৩২ দশমিক ৫ ভাগ চর্বি এবং ২ দশমিক শূন্য ভাগ খনিজ পদার্থ আছে। এছাড়া কুসুমের মধ্যে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও লৌহ আছে। তথ্য মতে, ডিম বেশিক্ষণ সিদ্ধ করলে কুসুমের বাইরের অংশে একটা কালো স্তর পড়ে, সেটা হলো আয়রন সালফাইড।
ডিম যেভাবেই রান্না করা হোক না কেন, এর পুষ্টি উপাদান সম্পূর্ণ অক্ষুণœ থাকে। ডিম হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় কিনা- জানতে চাইলে জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ডিম হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়- এমন কোনো তথ্য বা গবেষণা জানা নেই। তবে ডিমে যে কোলেস্টোরেল আছে, তা ক্ষতিকর নয়। তাই হৃদরোগীদের জন্য ডিম খাওয়া ক্ষতিকর নয়। এ প্রসঙ্গে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম সামসুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, এর আগে ডিমের কোলেস্টোরেল উচ্চরক্তচাপ বা হৃদরোগীদের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ডিম ক্ষতির চেয়ে উপকারই বেশি করে। শরীরের ওজন বুঝে কাউকে কাউকে দিনে কমপক্ষে একটা ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। তিনি বলেন, ক্ষেত্রবিশেষ কারও কারও জন্য ডিম খাওয়ার ওপর বিধিনিষেধ থাকতে পারে। তবে সব শেষ আন্তর্জাতিক গবেষণায় ডিম খাওয়ার পক্ষেই মতামত দেয়া হয়েছে। আইসিডিডিআরবি’র সহকারী বিজ্ঞানী ও পুষ্টিবিদ ড. সোহানা শফিক যুগান্তরকে বলেন, ডিম অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার। বিশেষ করে শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ডিমের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে মানুষের শরীরের পুষ্টি চাহিদা কোনো একটি নির্দিষ্ট খাদ্যের ওপর নির্ভর করে না। এজন্য প্রয়োজন সমন্বিত পুষ্টিকর খাবার। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালক মোকলেসুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, স্বল্পমূল্যে দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে ডিমের বিকল্প নেই। তাই সব বিভ্রান্তি ভুলে জনগণকে ডিমের প্রতি আগ্রহী করতে এ বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। ডিম সম্পর্কে যেসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে তার উৎস জানতে চাইলে তিনি জানান, বিভিন্ন সেক্টরের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে তাদের একটি বিশেষ দল রয়েছে। সেই দলের তথ্যর ভিত্তিতেই এসব তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.