তাইওয়ানকে ফাঁদে ফেলছে চীন?

গৃহযুদ্ধে বিভক্ত হওয়ার ৬৬ বছর পর প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনায় বসছে চীন ও তাইওয়ান। আজ সিঙ্গাপুরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট মা ইং জিউয়ের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ১৯৪৯ সালের পর দু’দেশের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক। ২০০৮ সালে মা ইং জিউ নির্বাচিত হওয়ার পর সম্পর্ক নাটকীয়ভাবে মোড় নেয়। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, হঠাৎ চীনের এত আগ্রহের পেছনে অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে। আঞ্চলিক স্বার্থে তাইপেকে ফাঁদে ফেলতে চায় বেইজিং। বার্তা সংস্থা এএফপির এক বিশ্লেষণে এ কথা বলা হয়েছে। চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এ বৈঠককে ১৯৭২ সালের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ‘স্মরণীয় পদক্ষেপ’ বলে বর্ণনা করেছে। ১৯৭২ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন মাও সেতুং। বিশ্লেষকরা বলছেন,
দক্ষিণ চীন সাগরে সাম্প্রতিক উত্তেজনা থেকে বিশ্বের দৃষ্টি ফেরাতে তাইওয়ানের সঙ্গে হঠাৎ যোগাযোগ শুরু করেছে বেইজিং। তাইপের সঙ্গে সমঝোতা করে সমুদ্রসীমা নিয়ে অন্য আঞ্চলিক প্রতিযোগীকে মোকাবেলা করতে চায় চীন। বিশেষ করে ঐতিহাসিক শত্র“ জাপান ও ভিয়েতনামকে বার্তা দিতে চায় বেইজিং। তাইওয়ানের সান ইয়েত সেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চীন ও এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় গবেষণা ইন্সটিটিউটের তিতুস চেন বলেন, দক্ষিণ চীন সাগর থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বিশ্ববাসীর কাছে শান্তির প্রতীক হিসেবে নিজেকে দেখাতে চাচ্ছে বেইজিং। প্রতিবেশী সামুদ্রিক প্রতিযোগীসহ যুক্তরাষ্ট্রকে জানান দিতে চায়, চীন আঞ্চলিক নিরাপত্তায় কতটা ‘প্রো-অ্যাক্টিভ’ হয়ে ভূমিকা রাখতে পারে। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র শেন ই-সিন বলেন, ‘বৈঠকটির লক্ষ্য আন্তঃদেশীয় শান্তি নিশ্চিত করা। বিশেষ করে তাইওয়ান প্রণালিতে অস্থিরতা হ্রাসে এ বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করছি।’
তাইওয়ান : দেশ নাকি দ্বীপ : মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কোনো সম্মেলনে তাইওয়ানকে নিয়ে বেশ সংকটে পড়তে হয়। একে ‘দেশ’ নাকি ‘দ্বীপ’ বলে অভিহিত করবে বুঝতে পারে না কেউ। কারণ তাইওয়ানকে বিশ্বের অনেকেই চীনের ‘স্বায়ত্তশাসিত ভূখণ্ড’ হিসেবে মনে করে। তাইওয়ান জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক কিংবা আইএমএফের সদস্য নয়। এমনকি মাত্র ২২টি দেশের সঙ্গে তার আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। চলতি বছর চীন নেতৃত্বাধীন এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) প্রতিষ্ঠায় তাইওয়ান অংশগ্রহণ করতে চাইলে তা প্রত্যাখ্যাত হয়। এডিবি তাইওয়ানকে ‘তাইপে চীন’, মিস ইউনিভার্স ও ফিফা ফুটবলে ‘চীনা তাইপে’ বলে উল্লেখ করা হয়। তবে তাইওয়ানের জন্য স্বতন্ত্র পতাকা ব্যবহৃত হয়।

No comments

Powered by Blogger.