পানি সমস্যার সমাধান হতে হবে দুই দেশের সন্তুষ্টির ভিত্তিতে : পঙ্কজ শরন

ভারতের হাই কমিশনার পঙ্কজ শরন বলেছেন, ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশের সন্তুষ্টির ভিত্তিতেই পানিসম্পদ ইস্যুর সমাধান করতে হবে। কেননা এতে দুই দেশেরই অংশীদারিত্ব রয়েছে। তিনি বলেন, তিস্তা চুক্তির পানি বন্টন চুক্তি নিয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে সমঝোতা প্রক্রিয়া চলছে। এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক তৈরিতে সহায়ক হবে, যেমনটা হয়েছে স্থল সীমান্ত চুক্তির ক্ষেত্রে।
আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প সম্পর্কে পঙ্কজ শরন বলেন, ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে যে বাংলাদেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো পদক্ষেপ আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্পের আওতায় নেয়া হবে না। এখন এই নিশ্চয়তার ওপর আস্থা রাখা বা না রাখাটা বাংলাদেশের ওপর নির্ভর করে।
আজ সোমবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটিজিক স্টাডিসের (বিআইআইএসএস) উদ্যোগে নিজস্ব মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে হাই কমিশনার বক্তব্য রাখছিলেন। ‘বাংলাদেশ-ভারত সাম্প্রতিক সম্পর্কের অগ্রগতি ও প্রত্যাশা’ বিষয়ক অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইআইএসএস মহাসচিব মেজর জেনারেল আব্দুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ।
পঙ্কজ শরন বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সমুদ্রসীমার পর স্থল সীমানার নিষ্পত্তি হওয়া গর্ব করার মত একটি অর্জন। এই অর্জন দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা, জ্বালানী সহযোগিতা, কানেক্টিভিটি, উন্নয়ন সহায়তা ও জনগনের মাঝে সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে সহায়ক হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালের মে মাসে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ভারতে সরকার পরিবর্তন হলেও বাংলাদেশের প্রতি অনুসৃত নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। গত জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে এই বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে।
পররাষ্ট্রের ক্ষেত্রে ভারতের বর্তমান সরকার ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতি অনুসরন করছে। বাংলাদেশেরও ইচ্ছা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক জোরদার করা। তাই রাজনৈতিক সদিচ্ছার কারণেই সম্পর্ক এগিয়ে গেছে। আর নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে দুই দেশের মধ্যে যে ২২টি দলিল সই হয়েছে, তার নেতিবাচক কোনো প্রভাব বাংলাদেশে দেখা যায়নি। তাই নির্দ্বিধায় বলা হয়, সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভাবনাটা প্রবল।
আঞ্চলিক ট্রানজিটের ওপর গুরুত্বারোপ করে পঙ্কজ শরন বলেন, বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপালের (বিবিআইএন) মধ্যে ট্রানজিট প্রটোকল চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিবিআইএন যুগ্ম সচিব পর্যায়ের বৈঠকে চার দেশের মধ্যে যাত্রীবাহী যান চলাচলের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। তবে ট্রানজিট ফি’র বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওযায় পণ্যবাহী যান চলাচলের ক্ষেত্রে ততটা অগ্রগতি হয়নি। আগামী ৯ অক্টোবর চার দেশের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে যানবাহন চালানো হবে। আর অক্টোবরে হবে কার র‌্যালি।
তিনি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যোগাযোগ এখন কেবল সড়ক বা রেলপথেই সীমাবদ্ধ নয়। তা সমুদ্রপথেও বিস্তৃত হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি হয়েছে। খুলনা-কলকাতা সরাসরি ট্রেন চলাচল নিয়ে আলোচনা চলছে। সীমান্তের শুল্ক স্টেশনগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ চলছে।
কিশোরী ফেলানী হত্যাকাণ্ড দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি দু:খজনক অধ্যায় হিসাবে চিহ্নিত করে হাই কমিশনার বলেন, গত কয়েক বছরে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এতে সীমান্ত হত্যার সংখ্যা কমে এসেছে। তবে আমাদের লক্ষ্য তা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা।
তিনি বলেন, সীমান্তে মানুষ পারাপার হওয়া প্রয়োজন বৈধ চ্যানেলে। গরু চোরাচালান একটি বড় সমস্যা। একে কেন্দ্র করে জাল টাকা, মাদক, এমনকি অস্ত্র চোরাচালানও হয়। তাই অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্যকে আইনগত ভিত্তি বা প্রতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে টেলিফোন সংলাপ দুই দেশের সম্পর্কে একটি নতুন মাত্রা। এই আলাপ কেবল যে সঙ্কটের সময়ে হতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। স্বাভাবিক অবস্থায় বিভিন্ন ইস্যুতে শীর্ষ পর্যায়ে এই আলোচনা হতে পারে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিল্লি সফরের জন্য নরেন্দ্র মোদি বেশ আগেই আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছেন।

No comments

Powered by Blogger.