তবু দেশহারা দুই পরিবার -ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবর

কোচবিহারের বাংলাদেশি ছিটমহলগুলোর ১৪ হাজারের বেশি বাসিন্দা যখন ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য অপেক্ষা করছেন, সেখানকার আব্দুল হামিদ এবং তাঁর আত্মীয় সোবহান আলি শেখের দুই পরিবারের ভবিষ্যৎ তখনো অনিশ্চিত। বাংলাদেশে তাঁরা ‘বিশ্বাসঘাতক’, আর ভারতে ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। এই দুটি পরিবারকে নিয়ে গতকাল শনিবার ভারতের দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস একটি প্রতিবেদন ছেপেছে।
দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী ছিটমহলবাসীদের নিজ নিজ পছন্দ অনুযায়ী নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া গতকাল শুরু হয়। ভারতীয় পত্রিকাটি জানায়, ৬২ বছর বয়সী হামিদ ও ৮২ বছর বয়সী সোবহান ১৯ বছর আগে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যান। ‘বিএসএফের ১২ জওয়ানকে বাঁচাতে’ তাঁরা ভারতে গিয়েছিলেন বলে দাবি করেন। ঘটনাটির স্মৃতিচারণা করে হামিদ বলেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ১২ জওয়ান ‘ভুল করে’ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিলেন। বাংলাদেশ রাইফেলসের (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি) সেনারা ওই ১২ জনকে দেখে ফেলেন। তখন হামিদ ও তাঁর আত্মীয়রা ওই বিএসএফ সদস্যদের পথ দেখিয়ে ভারতে পৌঁছে দেন।
হামিদ বলেন, ‘অনুপ্রবেশকারী বিএসএফ সদস্যদের বাঁচানোর কারণে আমাদের “বিশ্বাসঘাতক” মনে করা হয়েছিল। এ কাজের “শাস্তি” হিসেবে দেশে ফিরে যাওয়ার আগেই সেউতি কুরশা এলাকায় ১৪২ নম্বর ছিটমহলে আমাদের বাড়িঘর ধ্বংস করা হয়। তারপর থেকে আমরা এখানকার শিবগঞ্জ ব্লকেই বাস করছি। এই জমির মালিক একজন হিন্দু এবং তিনি আমাদের আশ্রয় দিয়েছেন। তিনি যদি আগামীকাল আমাদের চলে যেতে বলেন, আমাদের কোথাও যাওয়ার নেই।’
হামিদ আরও বলেন, তিনি দুই ভাই, তিন বোন, মামা সোবহান আলি শেখ ও তাঁর পরিবারকে নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করেছিলেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুটি পরিবার বড় হয়ে সদস্যসংখ্যা ৭৭ হয়েছে। তিনি প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে লিখে জানিয়েছেন, কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। শুধু প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন, আর কিছু হয়নি। তাঁর সন্তানেরা বড় হয়ে বিয়ে করেছে। নাতি-নাতনির জন্ম হয়েছে। ২০১১ সালের আদমশুমারিতে তাঁদের কারও নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এমনকি ছিটমহল বিনিময়ের সময় তাঁরা বাংলাদেশ বা ভারত—কোনো দেশের নাগরিক বলেই গণ্য হননি। স্থানীয় ছিটমহলবাসী সবাই ভারতীয় নাগরিকত্ব পাচ্ছে। তিনি মনে করেন, তাঁকে এবং তাঁর পরিবার-পরিজনকেও ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া উচিত।
হামিদ দাবি করেন, তিনি যেহেতু বিএসএফ সদস্যদের বাঁচাতে সীমান্ত অতিক্রম করেছিলেন, ওই কাজের জন্যই তাঁকে শান্তিতে থাকতে দেওয়া উচিত। ওই ঘটনার প্রমাণ হিসেবে তিনি স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের সনদও দেখাতে পারেন। কোচবিহারের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি উলগানাথন বলেন, হামিদের সমস্যাটির সমাধান কেবল কেন্দ্রীয় সরকারই করতে পারে। সরকার স্পষ্ট বলে দিয়েছে যে ২০১১ সালের আদমশুমারিতে যাদের নাম ওঠেনি, তারা কোনো সুবিধা পাবে না।

No comments

Powered by Blogger.