যেমন আছেন সালাহউদ্দিন by দীন ইসলাম

নানা ধকল কাটিয়ে মানসিকভাবে চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন বর্তমানে আইনগত প্রয়োজনে মেঘালয়ের শিলংয়ে থাকা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ। শিলং শহরের ক্যান্টনমেন্টের পাশে একটি ছোট্ট ডুপ্লেক্স কটেজে এখন নীরবে তার দিন কাটছে। বাসা থেকে বাইরে বের হচ্ছেন না। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী খাওয়া-দাওয়া করছেন। বাসাতেই খাবার রান্না হচ্ছে। নিখোঁজ, উদ্ধার ও হাসপাতালে চার মাস কাটিয়ে এখন রাজনীতিবিদের চিরাচরিত অভ্যেস পেয়ে বসেছে সালাহউদ্দিনের। প্রতিদিন বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২০-৫০ জন নেতাকর্মী সাক্ষাৎ পেতে তার কটেজের সামনে ভিড় জমাচ্ছেন। প্রিয় নেতাকে এক নজর দেখার জন্য অনেকেই দিনের পর দিন অপেক্ষা করেন। সালাহউদ্দিনের ভাতিজা সাফওয়ানের মাধ্যমে সাক্ষাতের চেষ্টা করেন। কোন নেতাকর্মীকে এড়িয়ে চলতে ব্যর্থ হলে সালাহউদ্দিন দেখা করেন। সময় দেন। তবে নিখোঁজ সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করলেই এড়িয়ে যান। বলেন, এসব প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলার সময় এখন নয়। ভবিষ্যতে এ নিয়ে অনেক কথা বলা যাবে। কেউ প্রসঙ্গটি তুললে স্ত্রী হাসিনা আহমেদও তখন বাধা দিয়ে বলেন, আগে পুরোপুরি সুস্থ হোক তারপর সব কিছু বলা যাবে। এদিকে স্বামীর আইনগত ব্যবস্থা একটি পর্যায়ে দিয়ে দুয়েক দিনের মধ্যে বাংলাদেশে আসবেন সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে আসার টিকিট কেটেছেন। শিলং থেকে কলকাতা হয়ে বাংলাদেশে ফিরবেন। তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সালাহউদ্দিনের মেয়ে এ লেভেল পরীক্ষা দিচ্ছে তাই হাসিনা আহমেদকে আপাতত বাংলাদেশে যেতে হচ্ছে। তবে ১০ দিন থেকে আবারও শিলং-এ স্বামীকে সঙ্গ দিতে ফিরে যাবেন হাসিনা আহমেদ। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, স্ত্রী হাসিনা আহমেদের অবর্তমানে ভাতিজা সাফওয়ান ছাড়াও কলকাতা থেকে আরেক স্বজন আইয়ুব শিলং যেতে পারেন। আইয়ুব মানবজমিনকে বলেন, শুনেছি ভাবী প্রয়োজনে বাংলাদেশে চলে যেতে পারেন। তবে সহসাই আবার শিলং চলে আসবেন। এ সময়টাতে শিলং গিয়ে ভাইকে সঙ্গ দেয়ার জন্য যেতে পারি। সালাহউদ্দিনের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ১১ই মে মেঘালয়ের শিলংয়ের গলফ লিঙ্ক এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়ার পর প্রথমদিকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বেশ বিপর্যস্ত ছিলেন সালাহউদ্দিন। মীমহ্যানস, সিভিল হাসপাতাল ও নেগ্রিমস হাসপাতালে নিবিড় চিকিৎসার পর এখন অনেকটাই সুস্থ সালাহউদ্দিন। চলাফেরায় বেশ পরিবর্তন এসেছে। গত বুধবার আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়ার পর তার মধ্যে এক ধরনের আত্মবিশ্বাসের ছাপ চোখে পড়ে। ওই দিন বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আমি এখন বেশ ভাল আছি। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা ছাড়াও কারও সহায়তা ছাড়া তাকে হাঁটাচলা করতে দেখা যায়। এর আগে সিভিল হাসপাতালে তার শারীরিক স্ক্যানিং করতে নিয়ে যাওয়ার সময় দুই থেকে তিন জন ব্যক্তির উপর ভর করে তাকে চলাফেরা করতে হয়। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে,  সালাহউদ্দিন যে ডুপ্লেক্সটিতে থাকেন এতে রয়েছে তিনটি বেডরুম, ড্রইং ও লিভিং রুম। সালাহউদ্দিনের আইনজীবী এসপি মোহান্ত ও শিলংয়ে বসবাসরত কয়েক জন বাংলাদেশী তাকে এ ডুপ্লেক্সটি ঠিক করে দিয়েছেন। গত সোমবার শিলংয়ের বিশেষায়িত নেগ্রিমস হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে ডুপ্লেক্স কটেজে উঠেছেন বাংলাদেশের এ রাজনীতিবিদ। এ ভাড়া বাসায় স্ত্রী ও ভাতিজা সাফওয়ানকে নিয়ে থাকছেন। সালাহউদ্দিনের সঙ্গে গত কয়েক দিন মানবজমিনের পক্ষ থেকে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হলে বলা হয়, শর্তসাপেক্ষে জামিনে থাকায় আপাতত তিনি কোন কথা বলবেন না। মামলার পরবর্তী কার্যক্রম দেখে তিনি কথা বলবেন। এর আগে প্রায় দুই মাস নিখোঁজ থাকার পর গত ১১ই মে ভারতের শিলংয়ে উদ্ধার হন সালাহউদ্দিন আহমেদ। পরে পুলিশ তাকে আটক করে মানসিক হাসপাতাল মীমহ্যানসে নিয়ে যায়। একদিন পর মীমহ্যানস থেকে আবার তাকে পাঠানো হয় সিভিল হাসপাতালে। ওই হাসপাতালের আন্ডার প্রিজনার সেলে (ইউটিপি) তাকে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। সিভিল হাসপাতালে বিশেষায়িত চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় তাকে বিশেষায়িত হাসপাতাল নেগ্রিমসে এক সপ্তাহ ধরে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়। ৩রা মে সালাহউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে ‘ফরেনার্স অ্যাক্ট-৪৬’ এ দায়ের করা মামলার চার্জশিট দেয়া হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে মেঘালয় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এ চার্জশিট জমা দেয়া হয়। চার্জশিটে ফরেনার্স অ্যাক্টের ১৪ ধারা অনুযায়ী  বৈধ ডকুমেন্ট ছাড়া অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনা হয়েছে সালাহউদ্দিনের বিরুদ্ধে। ২০শে মে সিভিল হাসপাতাল থেকে সালাহউদ্দিনকে স্থানান্তরিত করা হয় মেঘালয়ের নর্থ ইস্টার্ন ইন্দিরা গান্ধী রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ অ্যান্ড মেডিক্যাল সায়েন্সেস (নেগ্রিমস) হাসপাতালে। নেগ্রিমস থেকে পুলিশ হেফাজতে নেয়ার পর ২৭শে মে আদালতে তোলা হয়। আদালতের নির্দেশে ১৪ দিন বিচারিক  হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর ৫ই মে শিলংয়ের আদালত থেকে শর্তসাপেক্ষে জামিন পান সালাহউদ্দিন আহমেদ।

No comments

Powered by Blogger.