স্বস্তির সঙ্গে ভোগান্তির বৃষ্টি

কয়েক দিনের ভাপসা গরম শেষে গতকাল সকালে রাজধানীতে নেমে
আসে মুষলধারে বৃষ্টি। এতে সড়কে কাগজের নৌকা ভাসিয়ে আনন্দ
কুড়ায় শিশুরা। পশ্চিম রাজাবাজার এলাকার ছবি l প্রথম আলো
কয়েক দিনের তীব্র দাবদাহের পর স্বস্তি নিয়ে নামল বৃষ্টি। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গত বুধবার রাতে এবং গতকাল বৃহস্পতিবার বৃষ্টি হয়েছে। বেশ ভারী বৃষ্টি, সঙ্গে কোথাও কোথাও ঝড়ও।
তবে প্রকৃতি স্বস্তি দিলেও নিজেদের অব্যবস্থাপনার কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে মানুষকে, বিশেষ করে নগরবাসীকে। নিষ্কাশনব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, রংপুরসহ বিভিন্ন স্থানে পানি জমে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার। আর এতে করেই বেধে যায় তীব্র যানজট। পানি মাড়িয়ে আর যানজট ঠেলে পথ চলতে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গতকাল সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত চার ঘণ্টায় রাজধানীতে বৃষ্টি হয় ৬৩ মিলিমিটার। টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলজটের কারণে শহরের প্রায় প্রতিটি অংশে যানজট আরও তীব্র আকার ধারণ করে। যানজট ও পরিবহনসংকটে ভোগান্তিতে পড়ে অফিসগামী যাত্রী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
চট্টগ্রামে গতকাল দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরের ষোলশহর ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, চাক্তাই, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, প্রবর্তক, পাঁচলাইশ, হালিশহর, আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকা হাঁটুপানি থেকে কোমরপানিতে তলিয়ে যায়। পানির কারণে যানজটের সৃষ্টি হয় মেডিকেল সড়ক, মেহেদীবাগ সড়কসহ আশপাশের বিভিন্ন সড়কে। এ ছাড়া ঝোড়ো হাওয়ার কারণে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাতটি বিমানের সূচি বিঘ্নিত হয়।
প্রবল বর্ষণে গতকাল সকালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোগড়া বাইপাস, সাইনবোর্ড ও আশপাশের এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে প্রায় হাঁটুপানি জমে যায়। এতে ওই মহাসড়কে সকাল থেকেই যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হওয়ায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে যাত্রীরা পড়েন ভোগান্তিতে।
গতকাল ভোর ৫টাৎ থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টি হয় নারায়ণগঞ্জে। এতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) বাঁধের অভ্যন্তরে নিম্নাঞ্চলে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সেখানকার অনেক বাড়িঘর, শিল্পকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাটে পানি উঠে যায়। পানিবন্দী হয়ে পড়ে লাখ লাখ মানুষ।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মিজমিজি পূর্বপাড়ার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, ভারী বর্ষণে তাঁর বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে এবং উঠানে হাঁটুপানি জমে গেছে।
বৈরী আবহাওয়ায় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় নারায়ণগঞ্জ থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সাতটি রুটে সকাল ৮টা থেকে ছয় ঘণ্টা নৌ-যোগাযোগ বন্ধ ছিল। বরিশালেও সকাল আটটার পর থেকে অভ্যন্তরীণ রুটের সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। রাত নয়টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল।
বরিশালে বৃষ্টি হয় গতকাল বেলা একটা ২৫ মিনিট থেকে একটা ৪০ মিনিট পর্যন্ত। এই ১৫ মিনিটের বৃষ্টিতেই আদালতপাড়াসহ নগরের অনেক সড়কে হাঁটুপানি জমে যায়।
সিলেটে বুধবার রাতে কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টির পর গতকাল সকাল নয়টা পর্যন্ত ৯০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এতে নগরের বিভিন্ন মহল্লায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। দুপুরের দিকে কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কোনো কোনো বাসাবাড়িতে পানি উঠে গেছে।
কয়েক ঘণ্টার টানা ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় রংপুর নগরের অনেক সড়কে। এতে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয় নাগরিকদের।

No comments

Powered by Blogger.