মৌসুমি বায়ুর প্রথম ঝাপটায় জলাবদ্ধ চট্টগ্রাম নগর

গতকাল দুপুর থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন স্থানে
হাঁটুসমান পানি জমে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী।
ছবিটি বেলা দুইটার দিকে ২ নম্বর গেট এলাকা থেকে তোলা
তপ্ত গরমের মধ্যে অবশেষে গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে প্রথম মাঝারি থেকে ভারী মাত্রার বৃষ্টিপাত হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এটাই মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিপাত। কিন্তু স্বস্তির বৃষ্টি ধুয়ে গেল রাস্তায়। বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে নগরের বিস্তীর্ণ এলাকা। জলজট আর যানজটে নাকাল নগরবাসী।
পতেঙ্গা আবহাওয়া দপ্তরের কর্তব্যরত আবহাওয়াবিদ সৈয়দ আরিফুর রহমান জানান, মৌসুমি বায়ু চট্টগ্রাম উপকূলে সক্রিয় হয়েছে। এই বর্ষায় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এটিই প্রথম বৃষ্টিপাত। গতকাল দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে ষোলশহর দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, চাক্তাই, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, প্রবর্তক, পাঁচলাইশ, হালিশহর, আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকা হাঁটু থেকে কোমরপানিতে তলিয়ে যায়। পানির কারণে যানজটের সৃষ্টি হয় মেডিকেল সড়ক (কেবি ফজলুল কাদের সড়ক) ও মেহেদিবাগ সড়কসহ আশপাশের সড়কে।
বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত প্রবর্তক মোড়ে যান চলাচল বন্ধ ছিল। কোমরপানিতে কয়েকটি রিকশা চলতে দেখা যায়।
ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় বৃষ্টিতে কোমরপানি জমে যায়। ওই সড়কে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। এ সময় ষোলশহর থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে কয়েক শ গাড়ি আটকা পড়ে। স্থবির হয়ে পড়ে জনজীবন। ষোলশহর জেলা পুলিশের কার্যালয়ের সামনে পানি ওঠায় লোকজন হেঁটেও পার হতে পারছিলেন না। ভ্যান, ঠেলাগাড়ি বা ট্রাকযোগে রাস্তা পার হন অনেকে।
বেলা আড়াইটার পর বৃষ্টির তীব্রতা কমে এলে যান চলাচল কিছুটা সচল হয়। তবে সন্ধ্যা সাতটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল।
বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া বেড়ে যায়। জিইসি মোড় থেকে জামালখান পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এলাকায় রিকশা ভাড়া গুনতে হয় ১০০ টাকা।
চকবাজার ও শুলকবহর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশের বিভিন্ন দোকানে পানি ঢুকে গেছে। চকবাজার কাপাসগোলার দোকানদার আলম বললেন, ‘প্রতি বর্ষায় আমাদের এখানকার দোকানগুলো কয়েকবার ডুবে যায়। এবারও রেহাই পেলাম না।’
একইভাবে বাকলিয়া ডিসি রোডের বিভিন্ন দোকান ও বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকে যায়। ডিসি রোডের বাসিন্দা মিজান জানান, তাঁর ঘরের মধ্যে পানি থই থই করছে।
ঝোড়ো আবহাওয়ার কারণে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানসূচিতে বিপর্যয় ঘটে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত সাতটি বিমানের সূচি বিঘ্ন হয়। বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার নূর-ই-আলম বলেন, তিনটি আন্তর্জাতিক ও চারটি অভ্যন্তরীণ রুটের বিমানের সূচিতে বিঘ্ন হয়েছে। আবহাওয়ার কারণে কোনোটি বিলম্বে অবতরণ করেছে কিংবা কোনোটি বিলম্বে যাত্রা করেছে।
পূর্বাভাস: পতেঙ্গা আবহাওয়া দপ্তর সূত্র জানায়, সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের বর্ধিতাংশ উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশে বিস্তার লাভ করেছে। এটি সারা দেশে সক্রিয়। এর ফলে এই বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.