বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের বেশির ভাগ নেতা নিষ্ক্রিয়

গত দুই মাস ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে কিছুটা স্বস্তির পরিবেশ তৈরি হলেও এখনো প্রকাশ্যে আসছেন না বিএনপির বেশির ভাগ শীর্ষস্থানীয় নেতা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের একটি বড় অংশ দৃশ্যত নিষ্ক্রিয়।
হাতে গোনা কয়েকজনকে মাঠে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে। বাকিদের কেউ কেউ গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে অথবা চুপচাপ আছেন। আর কেউ কেউ আছেন কারাগারে।
চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। ৫ জানুয়ারি ও অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সরকার কঠোর অবস্থান নেয়। তখন গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন বিএনপির বেশির ভাগ নেতা। গত ৫ এপ্রিল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন, বিনা বাধায় নিজের বাসভবনে ফিরে যাওয়া এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে কিছুটা স্বস্তির পরিবেশ তৈরি হয়।
এ সময়ের মধ্যে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতাকে নতুন করে আটক করা হয়নি। বরং কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ জামিন পেয়েছেন। কিন্তু দলীয় সূত্র জানাচ্ছে, নেতাদের একটি অংশ এখনো গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন। যে কারণে তাঁরা প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সেভাবে আসছেন না।
বিএনপির নেতাদের আত্মগোপনে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের আহ্বায়ক এমাজউদ্দীন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, আত্মগোপনে যাওয়া সম্মানজনক নয়। তবে অনেকে যেতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ, তাঁদের আট-দশ রকমের ওষুধ খেতে হয়। তাঁদের আত্মগোপনে যাওয়ার কথা নয়। রাষ্ট্র তাঁদের বাধ্য করেছে।
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্ষদ জাতীয় স্থায়ী কমিটি ১৯ সদস্যের। এর মধ্যে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মারা গেছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কারাগারে আছেন সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী। দুর্নীতির মামলায় কারাগারে আটক আছেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। কারাগারে আটক আছেন আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। আর এ গণি, শামসুল ইসলাম, এম কে আনোয়ার, সরোয়ারি রহমান অসুস্থ। মির্জা আব্বাস, রফিকুল ইসলাম মিয়া, তরিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে। অবশ্য তরিকুল ইসলামকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা গেছে। তাঁদের সবার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। গত রোববার আদালত রফিকুল ইসলাম মিয়াসহ ২৮ নেতা-কর্মীর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে মাহবুবুর রহমান ও মঈন খানকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা যায়। সিটি নির্বাচনের আগে সমন্বয়কের দায়িত্ব নিয়ে সক্রিয় ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ ও আ স ম হান্নান শাহ। নির্বাচনের পর থেকে তাঁরাও অনেকটা নীরব। মাঝে মধ্যে তাঁদের দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যায়। আর জমির উদ্দিন সরকার ও নজরুল ইসলাম খানও মাঝে মধ্যে সক্রিয় হন। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য তারেক রহমান লন্ডনে। সেখান থেকে তিনি বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়ে আসছেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
বিএনপির ১৫ জন ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে আব্দুল্লাহ আল নোমান ও সেলিমা রহমানকে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় দেখা গেছে। বাকিদের প্রায় সবাই দৃশ্যত নিষ্ক্রিয়। এঁদের মধ্যে শমসের মবিন চৌধুরী অবশ্য দীর্ঘ দিন কারাগারে ছিলেন। চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে আছেন সাদেক হোসেন খোকা। আর দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আছেন আব্দুস সালাম পিন্টু। বাকিদের কাউকে প্রকাশ্য কর্মসূচিতে সেভাবে দেখা যায় না।
দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ৬ জানুয়ারি থেকে কারাগারে। দলটির সাত যুগ্ম মহাসচিবের মধ্যে দপ্তরের দায়িত্বে থাকা রুহুল কবির রিজভী কারাগারে, আর ভারতের শিলংয়ে জামিনে আছেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ। আর আমান উল্লাহ, বরকত উল্লাহ ও মিজানুর রহমান মিনু আছেন আত্মগোপনে। সালাহ উদ্দিন নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে বরকত উল্লাহর নামে দলের বিবৃতি পাঠানো হতো। কিন্তু তখনো তিনি ছিলেন আত্মগোপনে। এত দিন সক্রিয় ছিলেন শুধু মোহাম্মদ শাহজাহান। তিনিও এখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। মাহবুব উদ্দিনকে মামলা সংক্রান্ত কাজে দেখা গেলেও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে খুব একটা দেখা যায় না।

No comments

Powered by Blogger.