মাহমুদ আলীর কূটনীতি!

এ এইচ মাহমুদ আলী। একজন পেশাদার কূটনীতিক। হালে রাজনীতিক। কথা বলেন কম। শুনেন বেশি। এটাই ছিল তার বৈশিষ্ট্য। কিন্তু সাম্প্রতিককালে তার কিছু মন্তব্য বাংলাদেশকেই এক বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলেছে। তার একটি মন্তব্য বাংলাদেশ শুধু নয়, ভারতকেও এক অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দেয়। ৫ই জুন সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদ আলী বলেন, সংসদের বাইরের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির সাক্ষাৎ হবে না। অথচ এর দেড়ঘণ্টার মাথায় দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জয়শঙ্কর বলেন, অবশ্যই খালেদার সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে। বাস্তবে তা-ই হলো। বিশ মিনিটের সাক্ষাৎ ৪৫ মিনিটে গড়ালো। এর মধ্যে ১৫ মিনিট একান্ত। এতে করে মাহমুদ আলী লজ্জা পেয়েছেন কিনা জানা নেই। তবে বাংলাদেশে কূটনীতির দৈন্যতা যে প্রকাশ পেয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। নরেন্দ্র মোদি যাতে খালেদার সঙ্গে দেখা করতে না পারেন সে জন্য সরকার লবিং করেছে কয়েক সপ্তাহ। সেটা ছিল পর্দার আড়ালে। নিম্নমানের কূটনীতি হলেও তা না হয় মেনে নেয়া যায়। একেবারে প্রকাশ্য অবস্থান নিয়ে মাহমুদ আলী কী অর্জন করলেন? কাউকে খুশি করতে গিয়ে মাহমুদ আলী যে তার সারা জনমের কূটনীতির সাফল্য বিসর্জন দিলেন তা বোধকরি বলতে হবে না। দিল্লিতে লবিং হয়েছিল প্রচণ্ড। একপর্যায়ে মনে হয়েছিল ঢাকার কূটনীতি হয়তো সফল হয়ে যাবে। সম্ভবত এ খবর রয়েছিল তার কাছে। এ খবর থেকেই মাহমুদ আলী মিডিয়াকে বলতে কসুর করেননি। রাজনীতিতে যেমন শেষ কথা বলতে কিছু নেই, তেমনি কূটনীতিতেও। তাছাড়া দেশটি ভারত। এরমধ্যে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী। অনেক হিসাব নিকাশ করে চলেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং খালি খালি তো বলেননি মোদি হচ্ছেন একজন দক্ষ সেলসম্যান। মিষ্টিকথায় সবাইকে ভুলিয়ে সবকিছু নিয়ে গেছেন। আমরা টের পেয়েছি। কিন্তু করতে পারিনি কিছুই। কেন পারিনি তা হয়তো একদিন খোলাসা হবে। এটা ঠিক, দিল্লিতে নীতিনির্ধারকদের এক বৈঠকে খালেদার সঙ্গে বৈঠক নিয়ে কথা হয়েছিল। তখন নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ বলেন, মোদি ঢাকা সফর করতে যাচ্ছেন, কোন বিশেষ দলকে নয়, তাই অবশ্যই সব দলের সঙ্গে বৈঠক করতে হবে। সংলাপ জারি রাখতে হবে। মোদি নিজেও এই মত ব্যক্ত করেন। আখেরে তা-ই হয়। মোদি তার স্বভাবসুলভ কূটনীতি আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এমন কূটনৈতিক খেলা খেলে যান, তাতে করে বিবদমান দুই শিবির উচ্চবাচ্য করতে পারেনি। বরং নজিরবিহীন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। ভারতবিরোধী রাজনীতির ইতি ঘটিয়েছেন। কিছু না দিয়েও যে সবকিছু নিয়ে যাওয়া যায় এমন কূটনীতি কখনো কেউ কি দেখেছেন। মাহমুদ আলী সাহেবরা এই কূটনীতি বুঝতে পেরেছেন কি? মমতা কেন্দ্রিক কূটনীতির হাল যে এমন হয় তা সেগুনবাগিচার কূটনীতিকদের বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ডা. দীপু মনি পেশাদার কূটনীতিক ছিলেন না। তার পক্ষে ভুল করা স্বাভাবিক। কিন্তু মাহমুদ আলীর তো এমন হওয়ার কথা নয়।

No comments

Powered by Blogger.