কাঠগড়ায় থেকে দণ্ড ভোগ করলেন জাফরুল্লাহ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে বেরিয়ে
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের
প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ছবি: সাজিদ হোসেন
এক ঘণ্টা আসামির কাঠগড়ায় থেকে আদালত অবমাননার দায়ে একটি দণ্ড ভোগ করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তাঁকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ডও দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাফরুল্লাহকে আদালত অবমাননার দায়ে এসব দণ্ডাদেশ দেন। একই আদেশে আদালত অবমাননার অভিযোগ থাকা অন্য ২২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনাল আদেশে বলেন, ২২ অভিযুক্ত ব্যক্তির বিবৃতি আদালতের জন্য অবমাননাকর হলেও প্রথমবার বিবেচনায় তাঁদের ক্ষমা করা হলো। তবে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে আগেও আদালত অবমাননার অভিযোগে কার্যক্রম চলেছে। তাই তাঁকে দণ্ড দেওয়া হলো।
বাংলাদেশে বসবাসরত ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের সাজায় উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দেওয়ায় ২৩ বিবৃতিদাতার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। এই অভিযোগের বিষয়ে গত ১৪ মে শুনানি শেষে আজ আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম।
ট্রাইব্যুনালের আদেশের প্রায় দেড় ঘণ্টা পর বেলা ১২টা ৪৯ মিনিটে স্বেচ্ছায় কাঠগড়ায় ওঠেন জাফরুল্লাহ। ১টা ৫০ মিনিটে কাঠগড়া থেকে নেমে আসেন তিনি।
এজলাসে উপস্থিত ট্রাইব্যুনালের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, আদেশ দিয়ে ট্রাইব্যুনাল উঠে যাওয়ার পর আসামির কাঠগড়ায় যেতে রাজি হননি জাফরুল্লাহ। উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা জাফরুল্লাহকে আসামির কাঠগড়ায় উঠতে বললেও তিনি তা করেননি। পরে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার গিয়ে তাঁকে আদালতের আদেশের কথা বলেন। আদেশ পড়ে তারপর তা পালন করবেন বলে জানান তিনি। বেলা ১২টা ৪০ মিনিটে জাফরুল্লাহকে আদেশের লিখিত অনুলিপি পড়তে দেওয়া হয়। ১২টা ৪৯ মিনিটে তিনি স্বেচ্ছায় কাঠগড়ায় ওঠেন। সেখানে এক ঘণ্টা থাকেন।
কাঠগড়া থেকে নামার পর জাফরুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে জরিমানার টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। তবে এর মধ্যেই উচ্চ আদালতে আপিল করবেন তিনি।
জাফরুল্লাহর দাবি, তিনি কোনো অন্যায় করেননি। সমালোচনা করা তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকার। তিনি দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। দেশের যেকোনো বিষয়ে সমালোচনা করার অধিকার তাঁর রয়েছে।
বিলম্ব করে আসামির কাঠগড়ায় যাওয়ার বিষয়ে জাফরুল্লাহ বলেন, পুরো আদেশ পড়ে তারপর তা পালন করার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। অনুলিপি দিতে আদালতের দেরি হয়েছে।
আদালত অবমাননার দায়ে সাজাপ্রাপ্ত নিউ এজ পত্রিকার বিশেষ প্রতিবেদনের সম্পাদক বার্গম্যানের সাজায় উদ্বেগ জানিয়ে দেশের ৫০ নাগরিক গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর বিবৃতি দেন। মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির পরে বিবৃতি থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন। ১৪ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল ৪৯ বিবৃতিদাতার কাছে তাঁদের বিবৃতির বিষয়ে ব্যাখ্যা চান। পরে বিবৃতির জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ায় ২৬ বিবৃতিদাতাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন ট্রাইব্যুনাল। বাকি ২৩ জনের বিরুদ্ধে গত ১ এপ্রিল ট্রাইব্যুনাল আদালত অবমাননার রুল দেন।

No comments

Powered by Blogger.