হংকংয়ে টিকে আছে আধুনিক দাসত্ব

ইন্দোনেশিয়ান এক গৃহকর্মী হংকংয়ে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার পাসপোর্ট কেড়ে রাখা হলো। বাংলাদেশের এক টিনএজার হংকংয়ে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গেলেন। কিন্তু তাকে ন্যায্য বেতন দেয়া হলো না। এগুলোই হলো আধুনিক যুগের দাসত্বের দুটি উদাহরণ। কিন্তু এগুলোর কোনটিই মানব পাচার আইনের অধীনে হংকংয়ের আদালতে ওঠেনি। কেননা, হংকং এ অপরাধ বিবেচনা করা হয় সীমান্ত পেরিয়ে পতিতাবৃত্তির জন্য মানব পাচারকে। এ খবর দিয়েছে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন। আধুনিক যুগের দাসত্বের বিরুদ্ধে কাজ করছে এমন একটি অলাভজনক আইনি প্রতিষ্ঠান লিবার্টি এশিয়া। সংস্থাটির প্রধান অর্চনা কোটেচা বলেন, মানব পাচার নিয়ে হংকং-এর এমন দৃষ্টিভঙ্গির অর্থ হলো শ্রম শোষণ, ঋণের বিনিময়ে দাসত্ব, গৃহ দাসত্ব বা একই ধরনের চর্চাকে মানব পাচারের আওতার বাইরে রাখা হচ্ছে। এর ফলে, হংকংয়ে মানব পাচারের অভিযোগে দায়ের করা মামলার সংখ্যা খুবই কম। দেশটিকে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০১৪ সালে চিহ্নিত করে পতিতাবৃত্তির জন্য মানব পাচার ও জোরপূর্বক শ্রমের জন্য প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের উৎস, লক্ষ্য ও ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে। আইনবিদরা বলছেন, নতুন আইনের দরকার নেই। প্রচলিত বিভিন্ন আইনেই মানব পাচারে জড়িতদের সাজা দেয়া সম্ভব। যেমন, কর্মজীবীদের পাসপোর্ট রেখে দেয়া, ন্যায্য বেতন পরিশোধ না করার অপরাধে জড়িতরা হংকংয়ের প্রচলিত ৫০টি আইনের লঙ্ঘন করে। হংকংয়ে বিপুল পরিমাণ অভিবাসী বসবাস করেন। দেশটিতে প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার গৃহকর্মীর বসবাস। এদের বেশির ভাগই ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের। তাই দেশটির উচিত মানব পাচারের আরও ব্যাপক সংজ্ঞায়ন করা। কোটেচা বলেন, মানব পাচার মোকাবিলায় হংকংয়ে বিশাল একটি আইনি ব্যবধান রয়ে গেছে। কিন্তু মানব পাচার হচ্ছে এমন একটি অপরাধ, যেখানে আরও অনেক অপরাধ সংঘটিত হয়। তাই পাচারের ভুক্তভোগীদের সহায়তায় আরও অনেক আইন প্রয়োগ করা যায়। আইনের এসব বিষয়ে নজর দিতে লিবার্টি এশিয়া ও আইনী-প্রতিষ্ঠান রিড স্মিথ রিচার্ডস বাটলার একজোট হয়েছে। উভয় প্রতিষ্ঠান মিলে হংকংয়ের আইনি পরিকাঠামো বিশ্লেষণ করে মানব পাচারে জড়িতদের বিচারের হার বৃদ্ধি ও ভুক্তভোগীদের সুরক্ষার জন্য কৌশল প্রণয়নে কাজ করে। গবেষণা শেষে তারা ‘দ্য হংকং লিগাল গ্যাপ অ্যানালাইসিস’ নামের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। সেখানে সপষ্টভাবে দেখানো হয়েছে মানব পাচারের মামলাগুলোর বেলায় কিভাবে প্রচলিত আইন ব্যবহার করা সম্ভব। একটি উদাহরণ দিলেন কোটেচা। যদি কোন গৃহকর্মীকে তার নিজের ইচ্ছার বিপরীতে ঘরে আটকে রাখা হয়, তাহলে তা দাসত্বের সমান। এ অপরাধকে এভাবেও বিবেচনা করা যায়। ফলে দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করে ভুক্তভোগীকে ক্ষতিপূরণ দেয়া সম্ভব। তার মতে, প্রচলিত বেসামরিক এসব আইন মানবপাচারের মামলাগুলোর ক্ষেত্রে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। ভুক্তভোগীকে চালকের আসনে বসাতে এটিও একটি উপায়। সিভিল আদালতে যৌন হেনস্থার মামলারও বিচার হতে পারে। এছাড়া অর্থ পাচারবিরোধী আইনও মানবপাচার মামলায় ভাল ভূমিকা রাখতে পারে। হংকংয়ের বর্তমান সরকার ক্রমবর্ধমান মানবপাচার মোকাবেলায় ভালও অবস্থানেই রয়েছে। কিন্তু যদি মানব পাচারের সংজ্ঞায়নের সম্প্রসারণ করা হয়, তাহলে এসব মোকাবিলার প্রক্রিয়া আরও কার্যকর হবে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০১৪ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হংকংয়ে যৌন পাচার ও জোরপূর্বক শ্রমের শিকার হচ্ছে চীনের মূল ভূখণ্ড, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, নেপাল, কম্বোডিয়া, কলম্বিয়া, চাঁদ ও উগান্ডা।

No comments

Powered by Blogger.