অনলাইনে ভর্তি শুরুতেই হোঁচট

ঢাকঢোল পিটিয়ে এবার প্রথম একাদশ শ্রেণীতে অনলাইনে ভর্তির পদ্ধতি শুরু করে সরকার। আর এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পদে পদে হোঁচট খেলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ভর্তির আবেদন থেকে শুরু করে, বাছাই প্রক্রিয়া, টেলিটকে টাকা প্রেরণ, শিক্ষার্থীর আবেদন অন্য আরেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান করে ফেলা, ফল প্রকাশ বিলম্বসহ সব জায়গায় হোঁচট খেলো তারা। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার পূর্ব-ঘোষণা অনুযায়ী রাত ১১টায় ফল প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয় আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ফল প্রকাশ করা যায়নি বলে জানান শিক্ষা সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান। তিনি ফল প্রকাশের তারিখ একদিন পিছিয়ে শুক্রবার দিবাগত রাত ১১টায় করার ঘোষণা দেন। সময়মতো ফল প্রকাশ করতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করে সচিব ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবকদের ধৈর্য্য ধারণ করার অনুরোধ জানিয়েছেন। এদিকে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার পর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। অনেকেই ফোন করে অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার ফল প্রকাশ করা হবে এটি আমরা জানতে পারি গতকাল জুমার নামাযের পর। তারা বলেন, ঢাকা বোর্ডের ৪টি হেল্প লাইন নম্বরে ফোন কোন কাউকে পায়নি। একপর্যায়ে ফোনগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। তাদের অভিযোগ, রাত ১১টার পর অনলাইনে বসে অপেক্ষা করতে করতে সেহ্‌রির পর ঘুমান। পরের দিন সকালে জানতে পারে শুত্রুবার রাতে ফল প্রকাশ করা হবে। বোর্ড সংশ্লিষ্টরা জানান, সব ধরনের প্রস্তুতি থাকার পরও বৃহস্পতিবার রাত ১১টার পর ফল প্রকাশ করা যায়নি। ওইদিন রাত ৩টা পর্যন্ত শিক্ষা সচিবসহ শিক্ষা বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বুয়েটে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফল প্রকাশে ব্যর্থ হন।
ঢাকা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. আসফাকুস সালেহীন গতকাল বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে ফল প্রকাশ করার কথা ছিল। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তা সম্ভব হয়নি। তিনি জানান, শিক্ষাসচিবসহ আমরা প্রায় সারা রাত কাজ করেও তা সম্পন্ন করা যায়নি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কর্তৃপক্ষ একদিন সময় চেয়েছে। তালিকা প্রস্তুত হলে সঙ্গে সঙ্গে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির ওয়েবসাইট, আদেবদনকারীদের এসএমএস, স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষা বোর্ডসমূহের ওয়েবসাইটে দেয়া হবে। অনলাইন এবং এসএমএস-এ আবেদনের প্রক্রিয়াটি দেখভাল করছে বুয়েটের আইআইসিটি বিভাগ। বোর্ড কর্মকর্তারা জানান, নিরপেক্ষতা ও ত্রুটিবিহীন ফল প্রকাশের জন্য বুয়েটের সহায়তা নেয়া হয়েছিল।
শুরু থেকে হোঁচট: ৬ই জুন থেকে অনলাইনে আবদেন শুরু হয়। এরপর একে পর এক অভিযোগ আসতে শুরু করে বোর্ডগুলোতে। শিক্ষার্থীরা তাদের আবেদন ফরম পূরণ করতে গিয়ে দেখেন তার আবেদন করা হয়ে গেছে। এসব অভিযোগের পাহাড় জমা হয় বোর্ডে। অভিযোগ ওঠে, বাণিজ্যিক কিছু প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী টানার জন্য তাদের আবেদন নিজেরাই করে ফেলে। এরপর শিক্ষা বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয় যারা এ ধরনের প্রতারণার শিকার শিক্ষার্থী ১৫ই জুন পর্যন্ত অভিযোগসহ বোর্ডের কলেজ পরিদর্শকের কাছে আবেদন করতে বলা হয়। প্রতারণার দায়ে অনেক প্রতিষ্ঠানকে শোকজ নোটিশ দেয়া হয়। অনেককে সতর্কও করা হয়। রাজধানীর কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নিঃশর্ত ক্ষমাও চেয়েছে। এদিকে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, টেলিটক মোবাইলে টাকা পাঠাতে গিয়েও নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয় তাদের। বারবার টাকা পাঠানোর পরও তা গ্রহণ করেনি টেলিটক কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে কলেজ পরিদর্শক বলেন, এবার প্রথম এই অনলাইন বিষয়টি সংযোজন করা হয়েছে। আশা করি আগামীতে এ ধরনের কোন সমস্যা থাকবে না।
অনলাইনে আবেদন ছাড়া কলেজে ভর্তির কোন সুযোগ নেই: ভর্তির নতুন নীতিমালা অনুযায়ী এবার অনলাইনে আবেদন ছাড়া কলেজে ভর্তির কোন সুযোগ নেই। আন্তঃবোর্ডের সার্কুলারে বলা হয়েছে, প্রকাশিত ভর্তির জন্য প্রথম মেধা তালিকায় নির্বাচিত কলেজে ভর্তিচ্ছুদের আগামী ২৭শে জুন থেকে ৩০শে জুনের মধ্যে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। কেউ পছন্দের ঊর্ধ্বক্রমে কলেজ পরিবর্তন করতে চাইলেও আগে নির্বাচিত কলেজেই ভর্তি হতে হবে এবং পরে কলেজ পরিবর্তনের জন্য আবেদন করতে হবে অনলাইনে। এরই ভিত্তিতে আগামী ২রা জুলাই দ্বিতীয় মেধা তালিকা প্রকাশ করা হবে। এ তালিকা অনুসারে ৪ঠা ও ৫ই জুলাইয়ের মধ্যে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে হবে। ৫ই জুলাইয়ের মধ্যে যারা নির্বাচিত হয়েও কলেজে ভর্তি হতে পারেনি, তাদের ৬ই জুলাই থেকে ৮ই জুলাইয়ের মধ্যে পুনরায় অনলাইনে আবেদন করতে হবে। তারা রিলিজ স্লিপধারী হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে, এদের আবেদনের জন্য কোন ফি দিতে হবে না। রিলিজ স্লিপধারীদের আবেদনের ফল প্রকাশ করা হবে ৯ই জুলাই। তাদের ১১ ও ১২ই জুলাইয়ের মধ্যে বিলম্ব-ফিসহ কলেজে ভর্তি হতে হবে। এরপরও যারা ভর্তি আবেদন করেনি তারা আসন খালি সাপেক্ষে নতুন করে ৫টি পছন্দের কলেজের নাম দিয়ে আবেদন করতে হবে ৯ থেকে ১১ই জুলাইয়ের মধ্যে। তাদের আবেদনের ফল প্রকাশ করা হবে ১২ই জুলাই। নতুন আবেদনকারীদের ১৩ই জুলাইয়ের মধ্যেই তাদের কলেজে ভর্তি হতে হবে। এছাড়া কোন কলেজে ভর্তির কোন সুযোগ পাবে না কোন শিক্ষার্থী।

No comments

Powered by Blogger.