চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসছেন রাজ্জাক

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নায়েক আবদুর রাজ্জাক
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নায়েক আবদুর রাজ্জাককে সুচিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে আসা হচ্ছে। আজ শুক্রবার সকালে চট্টগ্রামের কক্সবাজার থেকে তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর আবু রাসেল সিদ্দিকি বলেন, আবদুর রাজ্জাককে ঢাকার পিলখানায় বিজিবি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হবে।
ধরে নেওয়ার নয় দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে আবদুর রাজ্জাককে নিঃশর্তভাবে ফেরত দিয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। গতকাল মিয়ানমারের মংডু শহরে পতাকা বৈঠকের পর রাজ্জাককে বিজিবি প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মংডু শহরের বর্ডার গার্ড পুলিশের এন্ট্রি/এক্সিট পয়েন্ট-১-এর দেওয়ান নান্দি হলে বৈঠকটি হয়। এ পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সাত সদস্যের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ৪২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আবু জার আল জাহিদ। মিয়ানমার ২ নম্বর বর্ডার গার্ড পুলিশের ১০ সদস্যের নেতৃত্ব দেন অধিনায়ক লে. কর্নেল থি হান।
বৈঠক শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে টেকনাফ স্থলবন্দরে ফিরে লে. কর্নেল আবু জার আল জাহিদ সাংবাদিকদের জানান, পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ নায়েক রাজ্জাককে ফেরত আনা হয়েছে। রাজ্জাক সুস্থ আছেন। টেকনাফ স্থলবন্দরে নায়েক আবদুর রাজ্জাক বলেন, নাফ নদীতে চোরাচালানের বিরুদ্ধে অভিযানে গেলে সেখান থেকে তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
রাজ্জাককে ফেরত পাওয়ার পর সংবাদ সম্মেলন করে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, এ ঘটনা ভুল-বোঝাবুঝি হতে পারে না। তিনি ইঙ্গিত করেছেন, ইয়াবা চোরাচালান রোধে বিজিবির তৎপরতার কারণেই মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) এ রকম ঘটনা ঘটাচ্ছে।
যদিও এর আগে ঘটনাটিকে ‘অনেকটা ভুল-বোঝাবুঝি’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ১৭ জুন ভোরে নাফ নদীতে বাংলাদেশের জলসীমায় একটি নৌকায় তল্লাশির সময় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা হঠাৎ গুলি চালালে বিজিবির সদস্য বিপ্লব কুমার গুলিবিদ্ধ হন। এরপর তারা নৌকা ও এর মাঝি লালমোহন, মাঝির সহকারী ১২ বছরের জীবন দাসসহ নায়েক রাজ্জাককে মিয়ানমারে ধরে নিয়ে যায়। ওই দিন সন্ধ্যায় মাঝি ও তাঁর সহকারীকে (ভাগনে) ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু রাজ্জাককে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে নয় দিন সময় নেয় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।
কারণ ইয়াবা!
রাজ্জাককে ফেরত পাওয়ার পর গতকাল বিকেলে রাজধানীর পিলখানায় বিজিবির সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন মহাপরিচালক আজিজ আহমেদ।
সেখানে এক প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, এটা কখনোই ভুল-বোঝাবুঝি হতে পারে না। ২০১৪ সালের ২৭ মে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীদের গুলিতে (নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায়) বিজিবির নায়েক মিজানুর রহমান মারা যান। দেখা গেছে, যেখানে মিজানকে হত্যা করা হয়েছিল ওই এলাকাতেও প্রচুর ইয়াবা ধরেছিল বিজিবি, সেটি ছিল ইয়াবা পাচারের রুট। এরপর সেখানে একটি অতিরিক্ত বিওপি স্থাপন করা হয়। এবার নাফ নদীর যেখান থেকে রাজ্জাককে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, গত এক বছরে ওই এলাকায় ১২ লাখ ইয়াবা ধরেছে বিজিবি। এখানে দেখার বিষয়, যেসব এলাকায় ইয়াবা বেশি ধরা পড়ে, সে এলাকাগুলোতে পরপর দুই বছরে দুটি অঘটন ঘটল। মহাপরিচালক বলেন, ‘এর বেশি কিছু বলতে চাই না। যা বোঝার বুঝে নেন।’
মহাপরিচালক বলেন, নৌকার মাঝির কাছ থেকে তাঁরা জেনেছেন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী পুলিশের দলটি নায়েক রাজ্জাককে হাবিলদার লুৎফর মনে করেছিলেন। নায়েক রাজ্জাকের সঙ্গে নৌকার মাঝি লালমোহন দাসকেও ধরে নিয়ে গিয়েছিল মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। তাঁরা নৌকার মাঝিকে জিজ্ঞেসও করেন, ওই ব্যক্তি (রাজ্জাক) হাবিলদার লুৎফর কি না। হাবিলদার লুৎফর গত এক বছরে ওই এলাকায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ইয়াবা উদ্ধার করেছেন। এ কারণে তাঁকে বিশেষ পুরস্কারও দেওয়া হয়েছে।
মহাপরিচালক বলেন, অস্ত্র, ২২টি গুলি, মুঠোফোন, টর্চসহ রাজ্জাককে ফেরত দেওয়া হয়। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া একজন চিকিৎসক রাজ্জাককে পরীক্ষা করেন। তিনি এখন সুস্থ আছেন। ১৭ জুন তাঁকে ধরে নেওয়ার সময় ধস্তাধস্তি হয়। সেখানে মিয়ানমারের একজন সীমান্তরক্ষী রাজ্জাকের নাকে কামড় দিয়েছিলেন। সেই ক্ষত থেকে অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে। সেই ক্ষতসহ ছবি বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে সেই ছবি প্রকাশের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখার আশ্বাস দিয়েছে।
গতকালের আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়, উভয় পক্ষ সীমান্তে তথ্য আদান-প্রদান করবে। কোনো পক্ষ সীমান্ত অতিক্রম করলে আগে থেকে অপর পক্ষকে জানাবে। আর ১৯৮০ সালে স্বাক্ষরিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা চুক্তির শর্ত মেনে চলবে উভয় পক্ষ।

No comments

Powered by Blogger.