থাই গণকবরে জীবিত বাংলাদেশী

থাইল্যান্ডের গণকবর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এক জীবিত বাংলাদেশীকে। ব্যাংককস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের বরাত দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল এ খবর দিয়েছে। কর্মকর্তারা মানবজমিনকে জানিয়েছেন, জীবিত উদ্ধার হওয়া ওই বাংলাদেশীর সঙ্গে কথা বলার অনুমতি (কনস্যুলার অ্যাকসেস) পেয়েছে বাংলাদেশ। দূতাবাস কর্মকর্তাদের একটি টিম আজই তার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে। মালয়েশিয়া সীমান্তের কাছে থাইল্যান্ডের সাদাও জেলার দুর্গম জঙ্গলের মাটি খুঁড়ে ওই গণকবরের সন্ধান পায় থাই কর্তৃপক্ষ। সেখানে ৩২টি লাশ পাওয়া যেতে পারে বলে খবরে বলা হয়। তবে গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ২৬টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে থাইল্যান্ড কর্তৃপক্ষ ডিএনএ পরীক্ষা করবে। যাচাই করবে অন্যান্য তথ্যপ্রমাণ। হতভাগ্য এসব মানুষ বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের নাগরিক বলে ধারণা পাওয়া গেছে। একদিন আগেই গণকবরের সন্ধান পাওয়ার খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। গতকাল ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে এ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেয়া হয়। সেখানে জীবিত বাংলাদেশী উদ্ধারের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, তাৎক্ষণিক ব্যাংককস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থাই পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান সিকিউরিটির সঙ্গে আলোচনা করে ঘটনার বিস্তারিত জানতে চায়। জীবিত উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশীর কাছে দূতাবাসের কনস্যুলার টিমের পৌঁছানোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য থাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানায়। এ ক্ষেত্রে থাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সকল ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। জীবিত উদ্ধার হওয়া ব্যক্তি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। থাইল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাস থাই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ওদিকে গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওই গণকবর থেকে ২৬টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। থাইল্যান্ড পুলিশের জেনারেল জারুমপর্ন সুরামানি এই উদ্ধার অভিযান ও গণকবর খোঁড়ার তদারকি করছেন। তিনি বলেছেন, মৃতদেহগুলোর পরিচয় ও মৃত্যুর অন্যান্য কারণ নির্ণয় করতে বেশ সময় লাগবে। তিনি বার্তা সংস্থা এপি’কে বলেছেন, পাডাং বেসার এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে ৩২টি কবরের সন্ধান পান তারা। এর মধ্যে কয়েকটি কবর খুঁড়ে তাতে কিছু পাওয়া যায় নি। তাই তিনি মনে করেন, নিহতের সংখ্যা ২৬-এর বেশি না-ও হতে পারে। ওদিকে সরকারের মুখপাত্র মেজর জেনারেল সানসার্ন কায়েকামনার্ড শনিবার বলেছেন, থাইল্যান্ডকে মানব পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহার তারা বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর। যেসব বন্দিশিবিরের পাশে ওই গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে তার নেপথ্যে যারা আছে তাদেরকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। ওদিকে ঘটনাস্থলে আসলে কি ঘটেছিল তা নির্ধারণ করতে জাতিসংঘের অধীনে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। আরাকান প্রজেক্টের পরিচালক ক্রিস লিওয়া বলেছেন, ২০১২ সালের জুন থেকে বঙ্গোপসাগর ব্যবহার করে বিভিন্ন নৌযানে করে শিশু-নারী ও পুরুষ মিলে এক লাখেরও বেশি পাড়ি জমানোর চেষ্টা করেছে। তার মতে, এর মধ্যে রয়েছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী। তার মতে, এর মধ্যে বাংলাদেশীর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা প্রথমে থাকে থাইল্যান্ডে। ক্রিস লিওয়ার মতে, এখনও থাইল্যান্ডের জঙ্গলে ক্যাম্প করে তাতে আট শতাধিক মানুষ থাকতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.