ছাত্রলীগ আর কতদূর যাবে? রাশ টানার সময় হয়েছে

ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগের উত্তম-অঞ্জন গ্রুপের
সাথে সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এতে সুমন দাস নামে
সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিবিএ তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্র
নিহত হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। -২০ নভেম্বর, ২০১৪
দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি করলেন সরকার-সমর্থিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ২০ জন। এর ঠিক আগের দিনই রংপুর মেডিকেল কলেজ বন্ধ করে দিতে হয়েছে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে। তিন দিন আগে কুমিল্লায় ছাত্রলীগের সভাপতি খুন হয়েছেন নিজের কর্মীদেরই হাতে। মৃত্যুর আগে তিনি বলে গেছেন, ‘নিজের লোকেরাই আমাকে শেষ করে দিয়েছে।’
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নিজেরাই নিজেদের ‘শেষ’ করে দেন, খুনোখুনির জন্য তাঁদের বিরোধী কোনো ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে হয় না। আওয়ামী লীগের গত ছয় বছরের শাসনকালে তাঁদের নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে কতজনের প্রাণ গেছে, অথচ ক্ষমতাসীন দল ও সরকার নির্বিকার থেকে গেছে। আগে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে মারামারি হতো প্রতিপক্ষের সঙ্গে; কিন্তু আওয়ামী লীগের শাসন যখন নিরঙ্কুশ, তখন ছাত্রলীগ একাই নিজেদের মধ্যে রক্তপাত ঘটিয়ে চলেছে, সরকার চেয়ে চেয়ে দেখছে। ছাত্রলীগের বেলায় আইন কাজ করে না, আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ এ ক্ষেত্রে চক্ষু-কর্ণহীন।
কুমিল্লায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল গোলাগুলি
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে রক্তপাতের ঘটনাগুলো ঘটতে পারছে বিচারহীনতার ফলে। এসবের ফলে সরকার কিংবা সরকারি দলের কোনো উপকার হয় না। বরং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথে এগুলো বিরাট বাধা হিসেবে কাজ করে। ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন নেতা, সাংসদ, কিংবা মন্ত্রী। ছাত্রলীগের আচরণের জন্য তাঁদের জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকা উচিত। ঊর্ধ্বতন নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ছাড়া ছাত্রলীগের এসব দৌরাত্ম্য সম্ভব নয়। ছাত্রলীগের ক্ষমতার রাজনীতিতে জড়িয়ে যে সন্ত্রাসী হয়ে উঠছে বা যে পরাস্ত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে, উভয়ের প্রতিই দায়িত্ব রয়েছে সরকারের। মানুষ আর এসব দেখতে ও সহ্য করতে রাজি নয়। ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্যের রাশ টানার সময় হয়েছে।
ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্রলীগের কর্মীদের একটি পক্ষ রামদা, চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে
প্রতিপক্ষের কর্মীদের ধাওয়া করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন,
ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি
হাজী দানেশে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ২
আপডেট: এপ্রিল ১৭, ২০১৫
দিনাজপুরে হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার দুই ছাত্র নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। নিহত দুই শিক্ষার্থী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের মো. জাকারিয়া ও ভেটেরিনারি অনুষদের মাস্টার্সের মিল্টন।
ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্রলীগের কর্মীদের একটি পক্ষ রামদা, চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে
প্রতিপক্ষের কর্মীদের ধাওয়া করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন,
ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জানান, ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে ওই ঘটনা ঘটে। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনুষ্ঠান চলাকালে চার মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইফতেখারুল ইসলাম ও বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক অরুণ কান্তি রায়ের নেতৃত্বে একটি সশস্ত্র দল হামলা চালায়। ছাত্রলীগের অন্য পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন ছাত্রলীগের কর্মী আসাদুজ্জামান ওরফে জেমী ও নাহিদ আহমেদ ওরফে নয়ন।
সিলেটের এমসি কলেজে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে
ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সশস্ত্র মহড়া (ফাইল ছবি)
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, গতকাল সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর মিলনায়তনে ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আলোচনা সভা, নবীনবরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিল। ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন আফরোজা খাতুনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভার শেষ পর্যায়ে রাত সাড়ে আটটার দিকে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি উপাচার্য মো. রুহুল আমিন বক্তব্য দেওয়ার জন্য মঞ্চে দাঁড়ানোমাত্র মিলনায়তনের আলো নিভে যায়। পেছন থেকে ইফতেখারুল ইসলাম ও অরুণপক্ষের ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি সশস্ত্র দল সাধারণ ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীদের লাঠির আঘাতে অনুষ্ঠানস্থলে থাকা কমপক্ষে ২০ ছাত্র আহত হন। এঁদের মধ্যে আটজনকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তাঁদের কারও নাম জানা যায়নি। এ সময় শিক্ষার্থীদের আর্তচিৎকারে ভয়ানক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অনুষ্ঠানও পণ্ড হয়ে যায়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে
সংঘর্ষের একপর্যায়ে এভাবে দা-বঁটি নিয়ে ধাওয়া
দেয় একপক্ষ ২৫-০১-২০১২ :প্রথম আলো
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ বিভাগের পরিচালক শাহাদাৎ হোসেন খান বলেন, রাত নয়টার দিকে ইফতেখারুল ইসলামসহ তাঁর সমর্থকেরা ক্যাম্পাসে শেখ রাসেল হলে প্রবেশ করেন। সেখানে অবস্থানরত ছাত্রদের বেধড়ক লাঠিপেটা করেন তাঁরা। এরপর সাধারণ ছাত্ররা একজোট হয়ে শেখ রাসেল হলে পাল্টা হামলা চালান। এ সময় উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন।
ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক অরুণ কান্তি রায় বলেন, সংঘর্ষ চলাকালে প্রতিপক্ষের আঘাতে তাঁদের পক্ষের দুজন নিহত হয়েছেন। এঁদের মধ্যে জাকারিয়া শেখ রাসেল হলে এবং মিল্টন দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে
সংঘর্ষের একপর্যায়ে এভাবে দা-বঁটি নিয়ে ধাওয়া
দেয় একপক্ষ ২৫-০১-২০১২ :প্রথম আলো
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক ছাত্র পরামর্শক শাহাদাৎ হোসেন খান জানান, রাত সাড়ে নয়টায় পুলিশ নিয়ে শেখ রাসেল হলে অভিযান চালানো হয়। হল থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় ছয়জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
দিনাজপুর পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বিবিএর ছাত্র মো. জাকারিয়ার মরদেহ শেখ রাসেল হলের ছাদ থেকে উদ্ধার করা হয়। অপরদিকে ভেটেরিনারি অনুষদের ছাত্র মিল্টন হাসপাতালে মারা গেছেন। এ ছাড়া আরও পাঁচজন ছাত্র গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি।
রাত ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলে পুলিশ সুপার মো. রুহুল আমিন জানান।

No comments

Powered by Blogger.