সব রং এক হয়ে গেল যেন by একরামুল হুদা

বাংলাদেশের বিজয় উপলক্ষে টিএসসিতে বিজয় উৎসব করছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা
বাংলাদেশের বিজয় উপলক্ষে টিএসসিতে বিজয় উৎসব করছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা
বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ইংল্যান্ড দলকে বাংলাদেশের ধরাশায়ী করার পর পার হয়ে গেছে প্রায় ২০ ঘণ্টা। এ আনন্দের যেন শেষ নেই। এ উৎসবে মুখর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণ। এ উৎসব বিজয়ের, এ উৎসব ইতিহাস সৃষ্টির। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথমবারের মতো নকআউট পর্বে যাওয়া উপলক্ষে টিএসসিতে আজ মঙ্গলবার ছিল বিজয় মিছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে আসা খণ্ড খণ্ড বিজয় মিছিল এসে মধুর ক্যানটিনে এক হয়। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে মধুর ক্যানটিন থেকে একটি বড় শোভাযাত্রা শুরু হয়ে তা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে টিএসসিতে এসে মিলিত হয়।
মিছিলে সবার মাথায় ছিল বা ‘বাংলাদেশ’ লেখা সাদা রঙের ব্যান্ড, কপালে ও কাঁধে বাংলাদেশের পতাকা আর মুখে ছিল স্লোগান, ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’। টিএসসিতে বেলা সোয়া একটা পর্যন্ত চলে সাউন্ড সিস্টেমে গান বাজিয়ে নাচ আর রং মাখামাখির খেলা। তবে বাংলা গানের সঙ্গে ছিল হিন্দি গানও। ছিল ঢোলের বাদ্যে নাচ ও সেলফি তোলার উৎসব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. হাবিবুর রহমান কাল সারা রাত ঘুমাতে পারেননি। আজকের বিজয় উৎসবে আসবেন, অথচ তাঁর কাছে বাংলাদেশ দলের জার্সি ছিল না। এই দুঃখে রাতে ঘুম হয়নি। ভোরে পরিচিত এক দোকানিকে ফোন দিয়ে এনে দোকান খুলে কিনে নেন বাংলাদেশের জার্সি। সে জার্সি পরেই এসেছেন বিজয় উৎসবে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জয়ে ভেতরে যে কী অবস্থা, ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।’
বদরুন্নেসা কলেজ থেকে ক্লাস শেষ করেই তড়িঘড়ি করে চলে এসেছেন রোকেয়া সুলতানা ও ফারজানা আকতার। কালকে টেলিভিশনে জেনেছেন আজকের এ বিজয় উৎসবের কথা। এসেছেন আনন্দ দেখতে, আনন্দ করতে। তবে তাঁর খারাপ লেগেছে হিন্দি গানের সঙ্গে নাচাটা। তিনি বলেন, ‘বাংলা গান হলে ভালো হতো।’
শুধু বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের শিক্ষার্থীরাই নন, এ বিজয় উৎসবে এসেছেন আরও অনেকেই। শিশুপুত্র ও পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে পরিবাগ থেকে এসেছেন মো. সিজার। উৎসবে এসে কিছুটা নস্টালজিক হয়ে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ঠিক এর কম মজা করা তানজিন আকতার। তিনি বলেন, ‘’৯৭ সালে বাংলাদেশ যেবার আইসিসি ট্রফি জিতেছিল, তখন এমন মজা করেছিলাম, আজকে আবার করলাম।’
ছিল পতাকা বিক্রির ধুম। মো. রোকন শেখ সকাল থেকে প্রায় দুই থেকে তিন হাজার টাকার পতাকা বিক্রি করেছেন। পেশায় সবজি ব্যবসায়ী হলেও বাংলাদেশের খেলার সময় বনে যান পুরোদস্তুর পতাকা ব্যবসায়ী। দেশের যে প্রান্তেই বাংলাদেশের খেলা থাকে, সেখানেই চলে যান পতাকা নিয়ে।
যে যেভাবে, যে বেশে পেরেছেন, সেজে এসেছেন। কমলাপুর থেকে মো. দীন ইসলাম ও আশরাফুজ্জামান এনাম এসেছেন কুমিরের পোশাক পরে। বাঘ সাজার মতো কিছু ছিল না। হাতের কাছে কুমিরের পোশাক ছিল, সেটা দিয়ে সেজে চলে এসেছেন এনাম। এভাবেই যেন প্রকৃতি, মানুষ আর উৎসবের সব রং আজ কিছু সময়ের জন্য এক হয়েছিল টিএসসিতে।

No comments

Powered by Blogger.