ঈদ আনন্দ নেই তাদের by আজহারুল হক

রাজধানী ঢাকার কাছের উপজেলা দোহার। আর্থসামাজিক অবস্থায় গোটা দোহারই বেশ উন্নত, এমন ধারণা অনেকের। কিন্তু ভালোর মাঝেও যে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিছু মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়, এটাও সত্যি। তেমনি দোহারের নয়াবাড়ী, মাহমুদপুর ও নারিশা ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারের মাঝে ঈদের আনন্দ নেই। সম্প্রতি পদ্মার ভাঙনে বসতভিটে হারিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে তারা। ঈদের আনন্দ তাদের স্পর্শ করছে না। অনেকেরই দিন কাটছে কান্না আর হাহাকারে।

সরেজমিন দেখা যায়, পদ্মাপারের কয়েক শ পরিবারের ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে নদীতে। তাদের কেউ রাস্তায়, আবার কেউ অন্যের জমি ভাড়ায়, কেউবা অস্থায়ীভাবে টিনের চালা তুলে বাস করছে। কাল সোমবারে ঈদ, কিন্তু তাদের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি কিছুই নেই। চোখে মুখে শুধুই হতাশা।

গত বর্ষা মৌসুমে দোহারের নারিশা ইউনিয়নের রানীপুর, বেলতলা, মধুর চর ও পশ্চিম চর এলাকার প্রায় তিন হাজার পরিবার ভাঙনের কবলে পড়ে। এ ছাড়া মাহমুদপুর, বিলাশপুর ও নয়াবাড়ী ইউনিয়নের দুই হাজার পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে। বাহ্রাঘাট, ধোয়াইর, নয়াডাঙ্গী, দেওয়ান গ্রাম, চর বিলাশপুর, কুলছুরি, রাধানগর গ্রামে বেশির ভাগ পরিবারই ছিল দিনমজুর। এদের অনেকেরই ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ অবস্থা।

রানীপুর এলাকার সামসু মিয়া (৬০) বলেন, ‘বাবা, আমাগো আর ঈদ নাই। সব আনন্দো দুয়ে মুছে পদ্মায় নিয়ে গেছে। গায়ে খাইডা আর জানডা চলে না। কেউ আমাগো খবরও নিল না।’ পশ্চিম চরের রওশনারা বেগম বলেন, ‘প্রতিবছর ঈদে বাচ্চাগো নিয়ে কত আনন্দ করতাম। নদীর বাঙ্গন সব মাটি করে দিছে। আল্লায় যুদি কোনো দিন বালোবাবে ঈদ করতে দেয় সেদিন করুম।’ সরকারি কোনো সাহায্য-সহযোগিতাও পায়নি বলে জানান তিনি।

দোহারে পদ্মা রক্ষা বেড়িবাঁধের সংগ্রাম কমিটির সমন্বয়ক রাজীব হোসেন বলেন, ওদের মাঝে কোনো ঈদ আনন্দ নেই। অসহায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সরকারের ত্রাণসহায়তা করা উচিত ছিল। তাদের অবস্থা খুবই খারাপ।

দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল করিম ভূঁইয়া বলেন, সরকারি কোনো বরাদ্দ না থাকায় ঈদের আগে পদ্মার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে কোনো সহায়তা করা যায়নি। তবে সরকার শিগগির তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেবে।

No comments

Powered by Blogger.