দখলের দৌড় by নাহার মনিকা

শুধু শীতকালটাই যা সমস্যা। কোনোমতে জ্যাকেট, সোয়েটারের সঙ্গে নিজের শরীরটা টেনেহিঁচড়ে চার চার মাস কাটিয়ে দিতে পারলে এ দেশে গরমকালের তুলনা হয় না। শনিবারের সকালে বাসার কাছের পার্কের বেঞ্চিতে বসে ফোনে শীতকালের গল্প বললেও ভেতরের চিনচিনে টেনশন এড়াতে পারে না ফয়সাল। মোজাম্মেল চাচা মানে রুকুর আব্বা এখনো বাসায় ফেরেনি। রুকুর হাবিজাবি প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে ফয়সাল সতর্ক হয়। হাজার হলেও প্রতিবেশী, ফোনে প্রায়ই কথা হলেও সম্পর্কটা কোনো মোড় নেয়নি। ফয়সাল আগে কাঁধ থেকে নিজের জোয়াল নামাতে চায়। আরেকটা কাজ খুঁজছে সে, একটা মাত্র চাকরি করে আর কুলানো যাচ্ছে না। পার্কের অদূরে কৃত্রিম ছোট জলার পাশে এত দিনে ফয়সালের প্রিয় হয়ে ওঠা একটা উইপিং উইলোগাছ, ডালপালা নুইয়ে ক্রন্দনরত। একটা পাখির দল ‘ভি’ শেপ বানিয়ে বেশ উঁচুতে উড়ে যাচ্ছে, মনটা ফুরফুরে হতে হতে আবার ভার হয়। জুলাই মাসের এমন সকালবেলাও সে উপভোগ করছে না! ‘বুঝলা, আজকে এইখানে কী যে সুন্দর একটা দিন, গরম কিন্তু হিউমিডিটি কম বলে ঘামটাম নেই।’ ‘ইশ্ কী ভাগ্য আপনাদের! আর আমরা গরমে কাঁঠাল পাকায়ে ফেলতেছি।’ টলটলে চোখ রুকুর, ফয়সাল চোখ বন্ধ করে ওর হাসি দেখতে পায়। অনলাইনে তাকে পাওয়া যায় না বলে রুকু অনুযোগ করে। কিন্তু বেশ কয়েক মাস হলো ইন্টারনেট সার্ভিস নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ফয়সাল। রুকু এখানের শপিং মলের কথা জানতে চাইলে ফয়সালের কেবল সেইন্ট রক মলের ফুডকোর্টের রেস্টুরেন্টে কাজ করার কথা মনে আসে।
কারি হাউস, সাইনবোর্ডের নিচে ছোট্ট অক্ষরে লেখা ‘স্পাইসি চিকেন অ্যান্ড ভেজিটারিয়ান কুইজিন।’ তা-ও সে সব সময় ঢুকত পেছনের গেট দিয়ে, যেখানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পার্কিং লট, সেখান দিয়ে। মালিকের সঙ্গে দুই হাতে পানি নয়তো সফট ড্রিংকসের ক্রেট, অথবা ডিস্পোজেবল প্লেট, ন্যাপকিন ইত্যাদি নানা রকম কাজ করত। কাজ যখন শেষ হতো, শরীরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ক্লান্তিতে দোকানপাটের দিকে তাকানোও হতো না তার। আর গত দুই বছর ধরে বিলাসিতা বলতে কলিং কার্ড দিয়ে দেশে ফোন করা। অথচ কেনাকাটার শখ তারও কি কম, বিশেষ করে পারফিউম? সেই জগন্নাথে পড়ার সময়ই সে ঢাকায় দোকান খুঁজে খুঁজে পারফিউম কিনেছে। আর এখানে সব ভালো ব্র্যান্ডের এন্তার ছড়াছড়ি! কিন্তু... একটা বিশালকার ‘কিন্তু’ গলায় আটকে থাকে তার। কেন যে জমিটা কিনতে গেল! প্রেয়সীর তিলের জন্য সমরখন্দ বোখারা বাজি ধরেছিলেন যে কবি, তাঁর কথা মনে হলে হাসি পায় ফয়সালের। তার তো রাজ্যপাট না, মাত্র ২২ কাঠা জমি, আর এ জন্য রুকুকেও সে কোনো রকম প্রতিশ্রুতির বাইরে রেখেছে। ‘ও হ্যাঁ’, হঠাৎ মনে পড়ার ভঙ্গিতে খবরটা দেয় রুকু। জমিটার ব্যাপারে তার আব্বাও উকিলের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে চেয়েছে। মাস দেড়েক আগে জরুরি ভিত্তিতে ইটের দেয়াল তোলা হলো। জবরদখলকারী গুন্ডা-মাস্তানদের বিশ্বাস আছে? সুতরাং আবার টাকা। বাড়তি লাখ দেড়েক টাকা পাঠাতে হলো। চিন্তিতভাবেই ফোনালাপ শেষ করে ফয়সাল। জমিতে তো একটা বড় সাইনবোর্ডও আছে, ‘এই জমির মালিক...’ ইত্যাদি। তার পরও ঝামেলা তাকে ছাড়ছে না। কানাডায় আসার পর প্রথমবার দেশে গেল আট বছর পর। ঢাকা শহরের ভিড়ভাট্টা ভালো লাগেনি। তার চেয়ে তারাগঞ্জ অনেক বেশি শান্তির জায়গা মনে হয়েছে। অথচ কী আশ্চর্য, আগে নিজের এলাকাকে কেমন গ্রাম্য মনে হতো!
এক সকালে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফয়সালের মনে হচ্ছিল, বাকি জীবন এই তারাগঞ্জেই কাটিয়ে দিতে পারে সে। আর সেদিনই মোজাম্মেল চাচা জমিটার খোঁজ এনেছিল। একসঙ্গে ২২ কাঠা জমি আজকের দিনে পাওয়া মুশকিল; আর একটু ভেতরে সরকারি বাঁধের দিকে হলেও দাম চলতি বাজারের তুলনায় বেশ কম। তারাগঞ্জ থেকে রিকশায় ১০ মিনিট। কাশবনে ছাওয়া শান্ত খোলা জমি ফয়সালকে কেমন বিহ্বল করে তুলেছিল। নিচু হয়ে হাত দিয়ে সে ছুঁয়ে দেখেছিল ঘাস, আগাছা আর কাশবনের গোড়ায় শুকনা শাদাটে শরৎকালের মাটি। কিন্তু জমির সস্তা দামও তার কাছে আকাশচুম্বী ঠেকায় প্রথমে কিছু বলতে পারেনি। সন্ধ্যাবেলা আম্মা তাকে শোবার ঘরে ডেকেছিল। স্টিলের আলমারি খোলা, ব্যাংকের পাশবই আর কাগজপত্র বিছানার ওপর ছড়ানো। টাকা জমিয়েছে। স্কুলশিক্ষকের পেনশনের টাকায় কৃচ্ছ্রসাধন করে চলা অভ্যাসে ছেলের পাঠানো প্রায় সব টাকাই জমিয়ে রেখেছে মা। হ্যাঁ, এ দিয়ে বায়নার টাকাটা হয়ে যায়। এখন ফয়সাল যদি মাসে মাসে আরেকটু করে পাঠায়, তাহলে এই জমিটা হাতছাড়া হয় না। মেজো খালুদের মতো একটা কোল্ড স্টোরেজের ব্যবসা যদি করা যায়—ছেলেরও তাহলে বিদেশবিভুঁইয়ে পড়ে থাকার দরকার পড়ে না। জমিটা থাকলে সঙ্গে বাড়ি দেখিয়ে ব্যাংকলোনও পাওয়া যাবে। বিষয়টা নিয়ে আতিপাতি করে ভেবে ফয়সাল নিজেও লুব্ধ হয়েছে। হ্যাঁ, তাকে খাটতে হবে। হয়তো আরেকটা কাজ জোগাড় করতে হবে, নাইট শিফট বা শনি-রোববারে। এ আর এমন কি! জমিটা একতাল সোনার মতো! মোজাম্মেল চাচা যেমন বলছিল, খালি জমিতে কিছু গাছ লাগিয়ে দিলেও দুই-তিন বছরে লকলক করে বাড়বে, সেগুলো বেঁচেও কত টাকা! তা তিন-চার বছর তো লাগবেই, ফয়সাল কি চাইলেই ঝটপট ফিরতে পারবে? অন্তত বিয়ে করে বউ নিয়ে গিয়ে সিটিজেন হওয়ার মেয়াদ পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত থাকতে হবে। তারপর একটা বা দুটো সন্তানের বিদেশে জন্মানোর নিরাপদ দিকটাও একদম ফেলে দেওয়া যায় না। এই স্বপ্নে রুকু প্রবেশ করলে ফয়সাল আপনমনে লাজুক হেসে আম্মাকে মাথা দুলিয়ে ‘হ্যাঁ’ বলে দিয়েছিল।
বায়না দিয়ে ফয়সাল ফিরে যাবে আর মাস খানেকের মধ্যে পাঠাতে হবে বাকি টাকা জোগাড় করে। কিন্তু এক মাসের মধ্যে এত টাকা! মেজো খালু মাথা নেড়েছে, ‘পাগল নাকি? এমন জমি কেউ হাতছাড়া করে? কত্ত মানুষ লাইন িদয়া আছে।’ আম্মা মুখ মলিন করে বসে থাকলে মেজো খালু আর মোজাম্মেল চাচার সামনে নিজের অহমিকা আহত হতে দেয়নি ফয়সাল। মাস খানেকের মধ্যে টাকা একসঙ্গে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে বড় ভালো লেগেছিল। পরের সপ্তাহে কানাডা ফিরেছিল সে। নিজে জমির মালিক আর মাথার ওপরে বিপুল ঋণের বোঝা—এই দুই অনুভব নিয়ে তার জেট ল্যাগ উধাও হয়ে গিয়েছিল। তিন-চারটা ক্রেডিট কার্ড ছিলই। ব্যাংক তাকে বড় অঙ্কের ধারের ক্রেডিট লাইন দিতে চেয়েছিল আগে একবার, খামোখা সুদ দিয়ে লাভ কী, এই ভাবনা থেকে তখন গা করেনি। ব্যাংকগুলো তো মুখিয়ে আছে ধারকর্জ দেওয়ার জন্য। ভাগ্য সুপ্রসন্ন বলতে হবে, ব্যাংকের ফাইন্যান্স ম্যানেজার লেবানিজ লোকটা কি হেলাফেলায় ২৫ হাজার ডলার বরাদ্দ করে দিল! সুদের হারও কম, সে তুলনায় মাস্টার কার্ড বা ভিসা, অথবা আমেরিকান এক্সপ্রেসের কোনো কোনোটায় ২০, ২২ এমনকি ২৫ পার্সেন্ট সুদ। কিন্তু তখন আর ফেরার উপায় নেই। যুদ্ধে নাম লেখানো হয়ে গেছে ফয়সালের। সব মিলিয়ে হাজার পঞ্চাশেক ডলার আপাতত জোগাড় হোক। হুন্ডি, ব্যাংক—দুই রকমেই টাকা পাঠিয়েছে। আম্মা যেদিন দলিলের নকলটাও হাতে পেল, সেদিন নিজের জন্য একজোড়া স্নো বুট মূল্যহ্রাসে কিনেছিল। পাশের ফ্ল্যাটের রাজেশ প্যাটেল বারান্দায় বসে ফয়সালকে হাত তুলে ডেকে সেদিন নিজের পানাহারের সঙ্গী করেছিল। ক্যাসিনোতে কাজ করে রাজেশ। বউ-বাচ্চা গুজরাটে বেড়াতে যাওয়ায় একলা লাগলে ফয়সালকে ডাকে। ক্যাসিনোতে জুয়াড়ি আর সুন্দরী বারবনিতাদের গল্প শুনে ভালোই সময় কাটে। সেদিনও নির্ভার সন্ধ্যা কেটেছিল। তারপর দুই বছর ধরে ফয়সাল তার নয়-নয়টা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে শাফল খেলছে। অল্প সুদের কার্ড থেকে টাকা তুলে বেশি সুদের ধার শোধ করছে। আসল শোধ করতে পেরেছে সামান্যই। মাঝেমধ্যে ঘুমানোর সময় কার্ডগুলোর পেছনে বসে থাকা সুদখোর কোম্পানির হর্তাকর্তাদের দেখে দুঃস্বপ্নে। রাজেশ তাকে শনি ও রোববারে মাস দুয়েকের একটা কাজ জুটিয়ে দিয়েছিল। সেই কাজ শেষ হলে ফয়সালের আবার তেলবিহীন প্রদীপের দশা।
ক্লান্তিতে নুয়ে গেলে নিজের ২২ কাঠা জমির কথা ভাবে ফয়সাল, ভেবে ভেবে চাঙা হয়ে উঠতে চায়। যতই সে পরবাসী হোক, দেশে তার নিজের কিছু আছে। দৈনন্দিন যে কোনো তাচ্ছিল্যের কাছে এই ২২ কাঠা জমি ফয়সালকে বুক টান করে দাঁড়ানোর সাহস জোগায়। কিন্তু গত সপ্তাহ থেকে এসব কী বলছে আম্মা? ‘হ্যাঁ, তোর খালু বলতেছিল জমিটার নাকি কী একটা ঝামেলা দেখা দিছে।’ ‘মানে?’, প্রায় চিৎকার করে উঠেছে ফয়সাল। ‘তুই তোর মেজো খালুকে একটা ফোন কর।’ আম্মার ক্লান্ত কণ্ঠস্বর বিপর্যস্ত শোনায়। মেজো খালু মোটরসাইকেল চালাতে চালাতে মোবাইলে কথা বলে, বাতাসে কথা কেটে কেটে যায়। আতঙ্ক লাগে ফয়সালের। হোন্ডা বাড়ির উঠানে থামার শব্দ পায় সে। ‘বাবা ফয়সাল, এত দিন তো সব ঠিক ছিল, এখন হঠাৎ এই নতুন উৎপাত শুরু হইয়া গেল।’ ফয়সাল চুপ থাকলে খালু নিজেই কথা শুরু করে, ‘জমিটা যখন তুমি নিলা, তখন তো নিষ্কলঙ্ক জমি ছিল।’ ‘এইটা কী বলতেছেন খালু! মোজাম্মেল চাচা আর আপনি দুজনই না বললেন ভালো সোর্স।’ ‘এই রকম চোখের সামনের জমিতে এমন ঘাপলা থাকতে পারে...’, মেজো খালু বরাবর ধীরস্থির, মুরব্বিয়ানা আয়ত্তে এনে কথা বলেন, ‘এই জমির অর্ধেক অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে তফসিলভুক্ত হয়া গেছে সেই ১৯৮৬ সালে—এই কথা তো আমাদের জানার উপায় ছিল না। জমি যার কাছ থেকে আমরা কিনলাম, সেই সাইদুর রহমান আসলে জমিটা ইজারা নিছিল, বুঝলা বাবা?’ নাহ্, এসব নথিপত্রের কথাবার্তা ফয়সাল বুঝতে পারছে না। তার অধৈর্য লাগে, ‘খালু, এখন কী হবে সেইটা বলেন! আমাদের তো সাইনবোর্ড লাগানো আছে।’ ‘হ্যাঁ, সাইনবোর্ড আছে, আর নিজেদের এত দুর্বল ভাবার কোনো কারণ নেই। সাবকবলা দলিলটাও তো রেজিস্ট্রি করা হইছিল।’, মেজো খালু যথাসম্ভব আশ্বস্ত করে ফয়সালকে, ‘কেনা জমি হাতছাড়া হবে এত সহজ নাকি?’ রুকুদের বাসায় ফোন করে ফয়সাল এবার মোজাম্মেল চাচাকে চায় প্রথমেই। ‘আসলে ঘটনা এখন তোমাকে খুলে বলতেই হবে। তোমার কি দেশে আসতে পারার কোনো সম্ভাবনা আছে?’ মাথা নষ্ট! ফয়সালের এখন মরার সময় নেই। জমিটা নিয়ে একটা পুলিশ
কেস আছে। আদতে জমির মালিক নাকি আমপাড়ার সুখেন হালদার, ওর মায়ের দিককার প্রপার্টি। তাকে সাইদুর রহমান ভুয়া কেস দিয়ে জেলে পাঠিয়ে, তার অসাক্ষাতে কাগজপত্র বানিয়ে জমি বিক্রি করে দিয়েছে। সুখেন জেল থেকে এত দিন পরে ছাড়া পেয়ে সাইদুরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তার কাছে আসল দলিল আছে। ‘তখনই সব গড়বড় টের পাওয়া গেল।’ রুকুর আব্বার মনে হচ্ছে ঘটনা রসিয়ে বলতে পেরে বেশ ভালো লাগছে। বলার মতো গল্প। ‘তাইলে এক কাজ করো, শাজাহান উকিলকে তুমিই একবার ফোন দেও, উনি দেওয়ানি মামলার উকিল, ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।’ মোজাম্মেল চাচা নামাজের ওয়াক্তের কথা বলে সংক্ষেপে শেষ করে। রোববার ভোররাতে অ্যালার্ম দিয়ে রাখে ফয়সাল। ঘুম ভাঙামাত্রই ফোন টেপে। শাজাহান উকিল ফোন ধরে হ্যালো বলেই অন্য কার সঙ্গে যেন কথায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফয়সালের অধৈর্য সীমা ছাড়ালে উকিল সাহেবের মিহি গলা শোনা যায় আবার। ‘আপনে বাদী? কার বিরুদ্ধে মামলা করবেন?’ কার বিরুদ্ধে মামলা করবে! ফয়সাল গুছিয়ে অবস্থাটা বলার চেষ্টা করে। উকিল সাহেব পুরোটা শেষ করতে দেয় না। পক্ষ-বিপক্ষ, মামলার আরজি, সাবমিশন, অর্ডার শিট ইত্যাদি শব্দের তোড়ে ক্রমেই খেই হারিয়ে ফেলতে থাকে সে।
‘আপনে এক কাজ করেন, বুধবার বিকেলে আসেন।’ ‘আমি তো দেশের বাইরে থেকে বলছি, আসতে পারব না।’ ...।’ দীর্ঘ একটা ‘অ’ যেন সুতানলি সাপ, ফোনের এ প্রান্তে ভেসে আসে। আম্মাকে ফোন করে ফয়সাল। আম্মা কি তাকে ঘটনা আঁচ করতে দিতে চাইছে না! কেন যাচ্ছে না মেজো খালুকে সঙ্গে নিয়ে যেখানে যাওয়া প্রয়োজন—কোর্ট-কাছারি, যেখানে দরকার। নাহ্, মেজো খালুকে আবার ফোন করে ফয়সাল। ‘খালু, আমাদের দলিল কি জাল?’ না না, তা হবে কেন? তবে এখন মামলা-মোকদ্দমা এড়ানো যাচ্ছে না। আমরা সাইদুরের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করব। তোমাকে একবার দেশে আসতে হবে।’ সাইদুরের মামলা সুখেনের বিরুদ্ধে, সুখেনের মামলা সাইদুরের বিরুদ্ধে, ফয়সালের মামলা সাইদুরের বিরুদ্ধে—মামলার ত্রিভুজাকৃতির লাটিম বনবন ঘুরতে থাকে, ফয়সালের মাথায় ঢোকে না কিছুই। ঘুমভাঙা চোখে সে বের হয়ে আসে সামনের পার্কে। উইপিং উইলোগাছের পাতায় সকালের চকচকে আলো। কপালের শিরা দপদপ করে ফয়সালের। রাজেশ জগিং করতে বেরিয়েছে। দৌড় শেষে পাশে এসে বসে পড়ে হাঁপায়। ‘ম্যানগুচিয়ার আপ। কী হইছে তোমার?’ বিমর্ষ ফয়সাল বিড়বিড় করে, ‘আমি সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি, ম্যান আই অ্যাম টোটালি ব্রোক...।’ ‘হোয়াট ডু ইউ মিন, ইউ নেভার গো টু ক্যাসিনো, ইউ ডোন্ট ডু গ্যাম্বলিং!’ ‘ইয়েস, আই ডিড গ্যাম্বলিং...আ হিউজ ওয়ান...।’ ডাক ছেড়ে কেঁদে উঠতে গিয়ে থেমে যায় ফয়সাল, বিড়বিড় করে তোতলাতে থাকে।

No comments

Powered by Blogger.