প্রবাসী-আয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে অষ্টম

বাংলাদেশে এ বছর মোট এক হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী-আয় আসতে পারে। আর এই পরিমাণ রেমিট্যান্স যদি আসে, তাহলে বিশ্বব্যাপী বেশি রেমিট্যান্স আসা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান হবে অষ্টম। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটির মাইগ্রেশন অ্যান্ড রেমিট্যান্স ইউনিটের তৈরি করা এ প্রতিবেদন ৬ অক্টোবর প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রবাসী-আয় বৃদ্ধির কারণও তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, এ বছর বাংলাদেশে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী-আয়ের প্রবাহ অধিকতর চাঙা হয়ে উঠছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বৈধ অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং এসব দেশ থেকে অধিক পরিমাণে প্রবাসী-আয় আসার ফলেই এমনটি ঘটছে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, প্রবাসী-আয়ে গত বছরের তুলনায় বাংলাদেশে এবার ৮ দশমিক ৬২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে; যা গত বছরের সম্পূর্ণ বিপরীত। ওই বছরে প্রবাসী-আয় ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ কমেছিল, তবে বাংলাদেশ অষ্টম স্থানেই ছিল।
বাংলাদেশে চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবাসী-আয় ২১ দশমিক ৮৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় তাতে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস সত্য হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আগের ২০১৩-১৪ বছরের একই সময়ে এ দেশে রেমিট্যান্স ৮ দশমিক ১০ শতাংশ কমেছিল।
চলতি বছরে প্রবাসী-আয়ের প্রবাহে দক্ষিণ এশিয়ার গড় হারের চেয়ে বাংলাদেশ বেশ ভালো অবস্থানে থাকবে। কারণ, দক্ষিণ এশিয়ায় এবারে প্রবাসী-আয়ে গড় প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। আর এই অঞ্চলের মোট প্রবাসী-আয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ১১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার।
প্রবাসী-আয়ের বৈশ্বিক তালিকায় প্রথম স্থানে থাকবে ভারত। এ বছরে দেশটিতে প্রবাসী-আয়ের পরিমাণ সাত হাজার ১০০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী চীন ছয় হাজার ৪০০ কোটি ডলার নিয়ে প্রবাসী-আয়ের তালিকাতেও দ্বিতীয় স্থানে থাকবে। শীর্ষ দশে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান থাকবে সপ্তম স্থানে। দেশটিতে আসতে পারে এক হাজার ৭০০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স।
শীর্ষ দশের অন্য দেশগুলো হচ্ছে: ফিলিপাইন তৃতীয় (দুই হাজার ৮০০ কোটি ডলার), মেক্সিকো চতুর্থ (দুই হাজার ৪০০ কোটি ডলার), নাইজেরিয়া পঞ্চম (দুই হাজার ১০০ কোটি ডলার), মিসর ষষ্ঠ (এক হাজার ৮০০ কোটি ডলার), পাকিস্তান সপ্তম (এক হাজার ৭০০ কোটি ডলার), ভিয়েতনাম নবম (এক হাজার ১০০ কোটি ডলার) ও ইউক্রেন দশম (৯০০ কোটি ডলার।
বিশ্বব্যাংক বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ বছর প্রবাসী-আয়ের প্রবাহ জোরদার থাকবে। তবে দেশে দেশে সংঘাত-সহিংসতার কারণে বাধ্যতামূলক অভিবাসনের হার বেড়ে নজিরবিহীন পর্যায়ে চলে গেছে বলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। চলতি বছরে এসব দেশে মোট প্রবাসী-আয়ের পরিমাণ বেড়ে ৪৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে; যা ২০১৩ সালের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি।
বিশ্বব্যাপী প্রবাসী-আয় বৃদ্ধির বর্তমান প্রবণতা মধ্যম মেয়াদে অব্যাহত থাকবে এবং ২০১৫ সাল নাগাদ তা ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে উন্নীত হবে।
সংস্থাটি মনে করে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিদেশি মুদ্রায় বিপুল পরিমাণ প্রবাসী-আয় আসার ফলে তা তাদের জন্য বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য টেকসই অবস্থায় রাখতে সহায়ক হয়েছে।
চীন ছাড়া অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে গত ২০১৩ সালে প্রবাসী-আয়ের পরিমাণ সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের (এফডিআই) চেয়ে বেশি এবং আনুষ্ঠানিক উন্নয়ন সহায়তার (ওডিএ) তুলনায় তিন গুণ বেশি ছিল।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনটিতে সাম্প্রতিক একটি জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশে যেসব পরিবারে প্রবাসী-আয় আসে, তা তাদের মোট আয়ের ৮০ শতাংশের সমান এবং এ দেশের মাথাপিছু জাতীয় আয়ের দ্বিগুণ।

শীর্ষ ১০ দেশ
(হিসাব ডলারে)
ভারত ৭,১০০ কোটি
চীন ৬,৪০০ কোটি
ফিলিপাইন ২,৮০০ কোটি
মেক্সিকো ২,৪০০ কোটি
নাইজেরিয়া ২,১০০ কোটি
মিসর ১,৮০০ কোটি
পাকিস্তান ১,৭০০ কোটি
বাংলাদেশ ১,৫০০ কোটি
ভিয়েতনাম ১,১০০ কোটি
ইউক্রেন ৯০০ কোটি
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বৈধ অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং এসব দেশ থেকে অধিক পরিমাণে প্রবাসী-আয় আসার ফলেই বাংলাদেশ ভােলা অবস্থানে আছে।

No comments

Powered by Blogger.