আগুনে পুড়িয়ে হত্যা -ঘটনার সামাজিক কারণ অন্বেষণও জরুরি

যুদ্ধে পোড়ামাটি নীতি বলে একটা কথা আছে। সেটি হলো দমনে ব্যর্থ হয়ে পুরো এলাকা জ্বালিয়ে দেওয়া। বিয়েতে ব্যর্থ হয়ে মেয়ে ও তার মা-বোনদের পেট্রল দিয়ে পুড়িয়ে মারা তেমনই এক চরম বর্বরতা, যা ঘটিয়েছে টাঙ্গাইলের এক যুবক। তাকে অবশ্যই সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে, কিন্তু মানুষ কী করে এমন অমানুষ হয়ে ওঠে, সেটাও ভাবনার বিষয়। শিশু মনিরার সঙ্গে ছোটবেলাতেই জাহাঙ্গীর নামের ওই যুবকের আংটি বিনিময় করান তাদের অভিভাবকেরা। এরই জের ধরে জাহাঙ্গীর নবম শ্রেণি পড়ুয়া মনিরার চলাফেরাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। তাতে অতিষ্ঠ হয়ে বিয়ের কথা বাতিল করে দেয় মনিরার পরিবার। গ্রামের সালিসেও সে রকম মীমাংসাই হয়। এর পরও জাহাঙ্গীর পরিবারটিকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। এ অবস্থায় জাহাঙ্গীরকে উত্ত্যক্তকারী হিসেবে আইনের আওতায় এনে বোঝানো (কাউন্সেলিং) ও বিরত রাখার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব ছিল প্রশাসনের। স্থানীয় সমাজকর্তাদেরও উচিত ছিল ঘটনাটিকে আর বাড়তে না দেওয়ার ব্যবস্থা করা। এ দুটি কাজ ঠিকমতো করা হলে জাহাঙ্গীরকেও খুনি হতে হতো না, আর নৃশংস আগুনে জীবন হারাতেন না মা ও তিন সন্তান। নারী অনেক পুরুষের চোখেই সম্পত্তির মতো। প্রেম বা বিয়ের পথে সেই সম্পত্তি দখল করতে ব্যর্থ হলে তারা সহিংস হয়ে উঠতে পারে। মেয়েটির ভালো লাগা ও মন্দ লাগার হিসাব যারা করে না, তাদের আসক্তি প্রেম নয়, পাশবিকতা। এ ধরনের নরপশুর জন্ম এ সমাজেই হয়, এ প্রবণতা অনেক পুরুষেরই আছে। তেমনি হাটে গরু বিক্রির মতো বিয়ের বাজারে কন্যাসন্তানকে তুলে দেওয়ার মতো অভিভাবকও কম নেই। ক্ষমতার জোরে বা পুরুষ হওয়ার সুবাদে যেকোনো সময় ভয়ানক আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারে এমন চিন্তার মানুষ। সমাজটা কি অসুস্থ হয়ে পড়ছে? তার খেসারত দিতে হচ্ছে প্রাণের বিনিময়ে? এ ব্যাপারে কি সরকার, প্রশাসন ও বিশেষজ্ঞদের কিছুই করার নেই?

No comments

Powered by Blogger.