যত বেফাঁস মন্তব্য by সাজেদুল হক

সব কিছুকে তুচ্ছ করা তার জন্য নতুন কিছু নয়। বেফাঁস মন্তব্য করেছেন বারবার। হরতালকারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হত্যার কথাও বলেছিলেন  তিনি। শুধু বিরোধী মতের রাজনৈতিক নয়, নিজ দলের নেতা-কর্মীদেরও বিব্রত করেছেন বারবার। তবে শেষ রক্ষা হলো না আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর। রোববার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হজ, মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে কটূক্তির পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়েও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে ফেঁসে গেলেন তিনি। মন্ত্রিসভা থেকে তাকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ থেকেও বহিষ্কার হতে পারেন দলটির এ প্রেসিডিয়াম সদস্য। এর আগে আর নির্বাচন না করার ঘোষণা দিয়েও ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। গত বছর ১৬ই আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এক সভায় লতিফ সিদ্দিকী বলেছিলেন, বসে থাকার সময় নেই, আর কেউ হরতাল করলে তাদের বাড়িতে গিয়ে হত্যা করতে হবে। ওই মাসের শেষ সপ্তাহে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সেমিনারে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে মন্তব্য করেছেন তা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। তিনি (আবদুল লতিফ সিদ্দিকী) যদি দেশের প্রধানমন্ত্রী হতেন, তাহলে এত দিন তাঁকে (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) কারাগারে থাকতে হতো। তিনি এও বলেন যে, ইউনূসের ভাগ্য ভাল যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বিরুদ্ধে এখনো ব্যবস্থা নেননি। তিনি আরও বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পৃথিবীর সবচেয়ে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ। তাই ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে যারা হরতাল দেবে, তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হত্যা করতে হবে। কারণ, হরতালকারীরা আদালত অমান্যকারী ও রাষ্ট্রদ্রোহী। গত ২৮শে মার্চ টাঙ্গাইলে নিজ বাড়িতে পিডিবি’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী পুনয় চন্দ্রকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। ২০১২ সালের ৩১শে ডিসেম্বর যথাযথ মর্যাদা না দেয়ার অভিযোগ তুলে পাট নিয়ে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে আয়োজকদের কঠোর সমালোচনা করেন তখনকার বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী  লতিফ সিদ্দিকী। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উপস্থিতিতে লতিফ সিদ্দিকী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অর্থমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা। আর আমি কি উড়ে এসেছি? রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘পাট ও বাংলাদেশের অর্থনীতি: বেশি উৎপাদনের জন্য পাটকলের যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন’ শীর্ষক এক কর্মশালায় মন্ত্রী এ কাণ্ড ঘটান। লতিফ সিদ্দিকী বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীকে আক্রমণ করে বলেন, উনার দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্বব্যাংকীয়। আমার অবশ্য অন্যরকম। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের আদরের পুত্র ইউনূসের আবদার রক্ষা করতে না পারায় পৃথিবীজুড়ে ঝগড়া বাধাচ্ছে। গত বছর ১১ই জুন আর নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন লতিফ সিদ্দিকী। ওই দিন সংসদে বাজেটের ওপর আলোচনায় দাঁড়িয়ে লতিফ সিদ্দিকী বলেছিলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে নির্বাচনী রাজনীতিতে আর অংশ নেবো না। তবে দলীয় রাজনীতিতে শেখ হাসিনা যে নির্দেশ দেবেন, তা সম্পন্ন করার চেষ্টা করবো। ২০০৯ সালের ১২ই অক্টোবর সংসদে দেয়া এক বক্তব্যে তৎকালীন স্পিকার আবদুল হামিদের সমালোচনা করেন বহুল আলোচিত এ নেতা। তিনি এম এন কউলকে উদ্ধৃত করে বলেন, স্পিকার হচ্ছেন সংসদের সেবক। তিনি প্রভু নন। আবদুল হামিদকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, প্রতিভতা ও প্রগলভতা এক নয়। রোববার সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘চিনতে না পারলেও’ গত ১১ই মার্চ ঢাকায় জয়ের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে তার ভূয়সী প্রশংসা করেন লতিফ সিদ্দিকী। এসময় জয়কে নিজের মাস্টার হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে জয় কিছু পরামর্শ দিয়েছেন তা পথপ্রদর্শক হবে। কারণ তিনি যার (শেখ হাসিনা) উপদেষ্টা, তার সৃষ্টি মননশীল। গত ৩১শে আগস্ট সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের বক্তব্যে উষ্মা প্রকাশ করেন লতিফ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, সমপ্রচার নিয়ে যে কথা-বার্তা হচ্ছে তা শুনলে আমি হাসি। আমি একজনকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তিনি পড়েছেন কিনা। তিনি কিন্তু পড়েননি। কেবল নীতিমালা পড়লেই হবে না,  টেলিভিশনগুলো যে সব শর্তে লাইসেন্স পেয়েছে সেগুলোও জানা থাকতে হবে। ওরা কি কি শর্তে দস্তখত করে লাইসেন্স নিয়েছে সেই শর্তটা একবার বের করে দেখুন। ওই কাবিননামায় দস্তখত করেই কিন্তু লাইসেন্স পেয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.