রায়বেরিলিতে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন সোনিয়া

উত্তর প্রদেশ রাজ্যের রায়বেরিলিতে গতকাল মনোনয়নপত্র
জমা দেওয়ার আগে সমর্থকদের ফুলেল অভিনন্দন গ্রহণ
করছেন ক্ষমতাসীন দল কংগ্রেসের প্রধান সোনিয়া গান্ধী, ছবি: এএফপি
গাড়ি চালালেন ছেলে রাহুল, গাড়ি চাপলেন মা সোনিয়া। এভাবে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে লড়তে গতকাল বুধবার উত্তর প্রদেশের রায়বেরিলিতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। গতকাল সোনিয়া রায়বেরিলিতে নামামাত্র তাঁর স্টিল গ্রে এসইউভির স্টিয়ারিংয়ের দায়িত্ব হাতে তুলে নিলেন রাহুল নিজে। পাশের আসনে মা সোনিয়া। দুপুর ১২টার আগে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন ঠিক করেছেন। কিন্তু যেভাবে মানুষের ভিড়, তাতে ইঞ্চি ইঞ্চি এগোনোও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। লাল গোলাপ ও হলুদ গাঁদা ফুলের পাপড়িতে ভরে যায় গাড়ির কাচ ও ছাদ। তা সরাতে নিরাপত্তারক্ষীদের হিমশিম হাল। মাথার ঘোমটা ঠিক রেখে মানুষের হাতে হাত মেলানো, সে এক মহাপরীক্ষা সোনিয়ার। এবার জিতলে রায়বেরিলিতে হ্যাটট্রিক হবে তাঁর। ১৯৯৯ সালে আমেথিতে জিতে পরেরবার আসনটি ছেড়ে দেন ছেলে রাহুলকে। আমেথিতে জিততে পারলে মায়ের মতো রাহুলও এবার হ্যাটট্রিক করবেন।
আমেথি ছেড়ে বুধবার তিনি মায়ের সারথি। আগের দিনই আমেথিতে রাহুলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে বিজেপি বেছে নেয় ছোট পর্দার নায়িকা রাজ্যসভার সদস্য স্মৃতি ইরানিকে। কিন্তু তাতে কী। রাহুল নির্বিকার। নিজের আসন ছেড়ে বুধবার তাঁর ধ্যান-জ্ঞান হয়ে দাঁড়ায় মায়ের আসন রায়বেরিলি। স্মৃতি ইরানির চ্যালেঞ্জ জানানোর আগেই লড়াইটা অবশ্য আরো জোলো করে দেন সহযো"া বরুণ গান্ধী। আমেথি ও রায়বেরিলির লাগোয়া জেলা সুলতানপুরে বিজেপির প্রার্থী বরুণ গত মঙ্গলবার যেভাবে রাহুলের প্রশংসা করেছেন, তাতে বিজেপির প্রার্থী স্মৃতি ইরানির চেয়েও বেশি বিড়ম্বিত তাঁর দল। বরুণকে বাধ্য হয়ে ঢোক গিলতে হলো গতকাল। মঙ্গলবার বরুণ একদল শিক্ষক ও কর্মীদের সমাবেশে বলেছিলেন, ‘রাজনীতিকে আমি একটা নতুন ধাঁচে ফেলতে চাই। আমাদের ক্ষুদ্রশিল্পের বিকাশ প্রয়োজন। রাহুল আমেথিতে যেভাবে স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠন করে সাফল্য পেয়েছেন, সেই রকম। আমি অবশ্য ওগুলো চোখে দেখিনি।’ গতকাল রায়বেরিলিতে প্রসঙ্গটি উঠলে রাহুল হেসে বলেন, ‘বরুণ যা বলেছেন, তা ঠিক। আমার ভেবে ভালো লাগছে, আমেথিতে আমাদের ভালো কাজের প্রশংসা অন্যরাও করছেন।’ বরুণের রাহুল-প্রশস্তি বিজেপির কানে গরম সিসা ঢেলে দেয়।
রাজনাথ সিং নির্দেশ দেন বরুণকে অন্য রকম বিবৃতি দিতে। বাধ্য বরুণ গতকাল টুইট করেন, ‘আমি যা বলেছি, তা কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তির প্রতি সমর্থন বলে মনে করা ঠিক হবে না।’ বরুণ বললেন বটে, তবে আমেথি-রায়বেরিলিতে জেঠিমা ও জেঠতুতো দাদার বিরুদ্ধে প্রচারে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটলই রয়েছেন। ভোটযুদ্ধ ক্রমশ তেতে উঠছে। এবং ক্রমেই এবারের লড়াইটা ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম সাম্প্রদায়িকতার মোড়কে হতে চলেছে। মঙ্গলবার দিল্লির জামা মসজিদের ইমাম সৈয়দ আহমেদ বুখারির সঙ্গে সোনিয়া দেখা করেছিলেন। জানাজানি হওয়ার পর বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে ঝড় তুলেছে। অরুণ জেটলি থেকে শুরু করে প্রকাশ জাভরেকার সবাই কংগ্রেসকে তুলাধোনা করে বলেছেন, ওরা এই ভোটকে সাম্প্রদায়িকতার রং দিতে চাইছে। তাই ইমামের সঙ্গে বৈঠক করে মুসলমানদের ভোট নিশ্চিত করতে চাইছে।

No comments

Powered by Blogger.