মিয়ানমারে ইতিবাচক রাজনৈতিক পরিবর্তনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে

মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি বলেছেন, তিনি তাঁর দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন। তবে জনগণ এখনো প্রকৃত স্বাধীনতা থেকে অনেক দূরে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আরব বিশ্বের মতো গণ-অভ্যুত্থান মিয়ানমারের সমস্যার সমাধান আনবে না।
ইয়াঙ্গুনে নিজের দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) কার্যালয়ে বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎ কারে এসব কথা বলেন সু চি।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী সু চি বলেন, ‘আমি এমনটা ভাবি না যে আমরা সবাই সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হতে পেরেছি। এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। তবে আমি মনে করি, কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় বলি, আমি খুব সতর্ক, আশবাদী মানুষ। আমার বিশ্বাস, প্রেসিডেন্ট ইতিবাচক পরিবর্তন আনবেন। কিন্তু তিনি কীভাবে এটা করতে সমর্থ হবেন তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।’
সামরিক জান্তা প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে মিয়ানমার শাসন করছে। গত মার্চে নামমাত্র বেসামরিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়। প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন ওই সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এর আগে নতুন নির্বাচনী আইনের মারপ্যাঁচে ফেলে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা হয় সু চির দল এনএলডিকে।
মিয়ানমারের নতুন সরকার ইদানীং সু চি ও তাঁর দলের নেতাদের সঙ্গে ইতিবাচক আচরণ করছে। গত মাসে রাজধানী নেপিডোয় প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের সরকারি বাসভবনে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন সু চি। শুধু তাই নয়, মিয়ানমারের স্বাধীনতার নায়ক সু চির বাবা জেনারেল অং সানের ছবির পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর (সু চি) সঙ্গে ছবি তোলেন প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন। কিছুদিন আগেও খুব কম মানুষই এমন দৃশ্য কল্পনা করতে পারতেন। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সু চির ওই বৈঠকের বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তবে বৈঠকের পর সু চি বলেন, একসঙ্গে কাজ করার মতো বেশ কিছু বিষয়ে একমত হয়েছেন তাঁরা।
সামরিক জান্তার নিপীড়নের মুখেও শান্তির পক্ষে অবিচল নীতির কারণে ভারতের স্বাধীনতার নায়ক মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে তুলনা করা হয় সু চিকে। এএফপিকে সু চি বলেন, মিয়ানমারে লিবিয়ার মতো সরকারবিরোধী গণ-অভ্যুত্থান তিনি চান না। তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষের ধারণা পরিবর্তন হতে হবে। মিয়ানমারের সমস্যা বুঝতে হবে। এ ছাড়া প্রকৃত পরিবর্তন আসবে না। তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত বিপ্লবের জন্য অনেক সময় প্রয়োজন হয়। আমরা যে ধরনের পরিবর্তন চাই, তার জন্যও সময় লাগবে। কিন্তু এই পরিবর্তনগুলো শান্তিপূর্ণ উপায়ে এবং আলোচনার ভিত্তিতে করতে চাই।’ শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী এই নেত্রী বলেন, আরব বিশ্বের মতো গণ-অভ্যুত্থানে মিয়ানমারে সমস্যার সমাধান হবে না।
মিয়ানমারে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ২০১৫ সালে। ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সু চি বলেন, এটা বলার মতো সময় এখনো আসেনি। তবে মিয়ানমারের জনগণ যদি চায় সু চি তাদের নেতৃত্ব দিক, তাহলে তিনি রাজি আছেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সু চি সরকারের আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখলেও কিছু বিষয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার বা রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। তাই পরিবর্তনের ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছার বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।

No comments

Powered by Blogger.