দ্রাবিড়ের ক্যারিবীয় রোমাঞ্চ

ক্রিকেট ইতিহাসের দারুণ একনিষ্ঠ পাঠক রাহুল দ্রাবিড়। খুব ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট ইতিহাসটা তাঁকে যথেষ্টই আকর্ষণ করে। ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনা-দুর্ঘটনা আর পরিসংখ্যান ঘেঁটেই বড় হয়েছেন। সেসব রেকর্ড-পরিসংখ্যান তাঁর ক্রিকেটার হয়ে ওঠার পথ-পরিক্রমায় রেখেছে বড় ভূমিকা। দ্রাবিড়ের পুরো শৈশব কেটেছে ক্যারিবীয় ক্রিকেটের দুর্দমনীয় আধিপত্য দেখে। যে দলটি ১৯৭৫ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের পর ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত খেলা ৯১টি টেস্টের মাত্র ১২টিতে হেরেছিল। যারা ১৯৮০ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে কোনো টেস্ট সিরিজ হারেনি—এমন একটি দলের কীর্তিগাথা অন্তরে নিয়েই বড় হয়েছেন দ্রাবিড়রা। ক্লাইভ লয়েড, জোয়েল গার্নার, আলভিন কালিচরণ, জেফ ডুজন, মাইকেল হোল্ডিং, ম্যালকম মার্শাল, ভিভ রিচার্ডস, অ্যান্ডি রবার্টস আর গ্রিনিজ, হেইন্সরা একটা চিরস্থায়ী ছাপ রেখে গেছে রাহুল দ্রাবিড়ের তরুণ মনে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের সেই স্বর্ণযুগ আর নেই। এই দলটি এখন আর ক্রিকেটের ভয়ংকর কোনো শক্তি নয়। তাদের খেলার ধারাবাহিকতার ছাপ নেই। নেই সাফল্যের ছন্দবদ্ধ ঝংকার। তার পরও কিন্তু রাহুল দ্রাবিড় রোমাঞ্চিত নারকেল, পাইন আর সুনীল জলরাশির আনন্দ জগত্ ক্যারিবীয় দ্বীপে খেলতে এসে।
১৯৯৬ সালে ভারতীয় দলের হয়ে টেস্ট অভিষেক রাহুল দ্রাবিড়ের। সাতানব্বইয়ে প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর। এরপর আরও অনেকবারই পৃথিবীর এই অঞ্চলটায় ক্রিকেট খেলতে এসেছেন। গত শুক্রবার আবার এলেন। খুব সম্ভবত শেষবারের মতো। ক্যারিয়ারের একেবারে প্রান্তলগ্নে দাঁড়িয়ে রাহুল দ্রাবিড়, কিন্তু কিছুটা নস্টালজিক তাঁর ছোটবেলার স্বপ্নভূমি ওয়েস্ট ইন্ডিজে পা রেখে।
দ্রাবিড় ভারতীয় দলের ড্রেসিং রুমের সদস্য আজ ১৫ বছর ধরে। এই প্রথমবারের মতো ভারত টেস্টের ১ নম্বর দল হিসেবে ক্যারিবিয়ায় পা রাখছে। শুধু তা-ই নয়, ওয়ানডের বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মুকুটও উঠে গিয়েছে তাদের মাথায়। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের বিশ্ব শিরোপাটাও একবার ছোঁয়া হয়ে গেছে। সবমিলিয়ে রাহুল দ্রাবিড়ের কাছেও এবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরটা একটু অন্য রকম। তিনি নিজেও আনন্দিত ভারতীয় ক্রিকেটের এই উত্তরণে। বলেছেন, ‘জয়ের ধারাবাহিকতার চেয়ে আনন্দদায়ক কিছুই নেই।’
তবে একটি ব্যাপার নিয়ে দ্রাবিড় কিছুটা ধন্ধে আছেন। তিনি এখন ওয়ানডে দলে অপাঙেক্তয়। টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ পড়েছেন অনেক দিন হলো। গত ছয়-সাত মাসে ভারতীয় দল যে হারে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে, তাতে টেস্ট ক্রিকেটে মনোনিবেশ একটু কষ্টকরই হবে বলে মনে করেন ‘মি. ওয়াল’ নামে খ্যাত এই স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান।
‘আমি ওয়ানডে দলে নেই। দীর্ঘদিন টেস্ট খেলা হচ্ছে না। সর্বশেষ ছয়-সাত মাস বলতে গেলে বসেই ছিলাম। হঠাত্ করেই টানা সাতটি টেস্ট খেলতে হচ্ছে ভারতকে। ব্যাপারটি সত্যিই সমস্যার। মনোনিবেশই সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে অনেক ক্রিকেটারের কাছে।’
ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে এসেও রাহুল দ্রাবিড় আজও নাকি নার্ভাস বোধ করেন। ক্যারিবীয় সফরে এসে নিজেকে আরও একবার প্রমাণের অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। আজ তাঁর মন দুরু দুরু—ভালো খেলতে পারবেন তো?
ব্যাপারটির ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি। ‘হ্যাঁ আমি এখনো নার্ভাস। এটাই আমার প্রকৃতি। প্রথম টেস্ট খেলতে নামার আগে যেমন ছিলাম, ১৫১তম টেস্টের আগেও ঠিক একই রকম বোধ হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.