আল-কায়েদা নেতা ব্রিটিশ গোয়েন্দাসংস্থার হয়ে কাজ করতেন!

পাকিস্তানে ২০০২ সালে দুটি গির্জা ও একটি বিলাসবহুল হোটেলে হামলা চালানোর ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটক আল-কায়েদার নেতা আদিল হাদী আল জাজাইরি বিন হামলিলি ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৬-এর হয়ে কাজ করতেন বলে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর ধারণা। উইকিলিকসের ফাঁস করা মার্কিন নথির উদ্ধৃতি দিয়ে গার্ডিয়ান ও নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রকশিত প্রতিবেদনে এ কথা জানা যায়।
নথিতে বলা হয়, আলজেরিয়ার নাগরিক হামলিলি দীর্ঘদিন আফগানিস্তানে মুজাহিদদের হয়ে তৎকালীন সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েছেন। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০০২ সালে পাকিস্তানের দুটি গির্জা ও একটি হোটেলে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়।
নথিতে দাবি করা হয়েছে, আল-কায়েদার হয়ে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে তৎপরতা চালানোর পাশাপাশি একই সঙ্গে তিনি এমআইসিক্স ও কানাডার একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে তথ্য সরবরাহ করতেন। ২০০৩ সালের জুনে পাকিস্তান সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করে সিআইএর হাতে তুলে দেয়। আফগানিস্তানে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তাঁকে কিউবার গুয়ানতানামো বে বন্দী শিবিরে নেওয়া হয়।
নথিতে বলা হয়, সিআইএ জানতে পারে হামলিলি পাকিস্তানে কার্পেটের ব্যবসা করতেন। তিনি পেশোয়ার থেকে দুবাইয়ে কার্পেট সরবরাহ করতেন। তবে এটা তাঁর মূল কাজ ছিল না। মূলত তিনি এমআইসিক্স ও কানাডার একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করছিলেন। আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে হামলিলির ভালো সম্পর্ক ছিল জেনে তাঁকে তারা ২০০০ সালে তথ্য সংগ্রাহক হিসেবে নিয়োগ করেছিল। তবে তিনি ওই দুই গোয়েন্দা সংস্থাকে কী ধরনের তথ্য দিয়েছিলেন, সে বিষয়ে নথিতে পরিষ্কার করে কিছু বলা হয়নি।
নিউইয়র্ক টাইমস-এর প্রকাশিত আরেকটি নথিতে বলা হয়েছে, টুইন টাওয়ার হামলার পর আল-কায়েদার একটি ছোট উপদল আবার যুক্তরাষ্ট্রে বড় ধরনের হামলা চালাতে চেয়েছিল। ৯/১১ হামলার মূল পরিকল্পনাকারী খালিদ শেখ মোহাম্মাদ গণবিধ্বংসী অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানোরও ‘স্বপ্ন’ দেখেছিলেন। এ ছাড়া গুয়ানতানামো বে শিবিরে আটক আল-কায়েদার নেতা সাইফুল্লাহ পারাচা যুক্তরাষ্ট্রগামী একটি জাহাজে পোশাকবোঝাই কনটেইনারে বিস্ফোরক ভরে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন বলে নথিতে উল্লেখ রয়েছে।
উইকিলিকসে ফাঁস করা কিছু নথির অংশবিশেষ কয়েক দিন ধরে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফসহ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হচ্ছে।
এ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট উইকিলিকসের বরাত দিয়ে জানায়, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর সুস্থির ছিলেন না ওসামা বিন লাদেন। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আল-কায়েদার এই শীর্ষ নেতা এবং তাঁর সহকারী আয়মান আল-জাওয়াহিরি হামলার পর অন্তত তিন মাস আফগানিস্তানের নানা প্রান্তে পালিয়ে বেড়িয়েছেন।
পত্রিকাটি বলেছে, গুয়ানতানামো বে কারাগারে আটক বন্দীদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উইকিলিকস এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, হামলার চার দিন পর লাদেন আফগানিস্তানে তাঁর অনুসারীদের ‘নাস্তিক হামলাকারী’দের বিরুদ্ধে অস্ত্র তোলার নির্দেশ দেন।
গোপন নথিতে দেখা গেছে, ২০০১ সালের মধ্য ডিসেম্বরে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় তোরাবোরা পর্বতের গুহা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়ে যান লাদেন। এই সময়ে তিনি নগদ অর্থের জন্য এতটাই মরিয়া ছিলেন যে একজন আশ্রয়দাতার কাছ থেকে সাত হাজার মার্কিন ডলার ধার নেন।।
নথিতে আরও দেখা গেছে, তোরাবোরা গুহা থেকে পালিয়ে যাওয়ার আগে লাদেন ও জাওয়াহিরি কাবুলের ভেতরে অথবা এর পাশেই সংগঠনের অস্থায়ী সদর দপ্তর স্থাপন করে সেখান থেকে অনুসারীদের পশ্চিমা লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর নির্দেশ দেন। পরে লাদেন তাঁর যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ত্যাগ করেন এবং স্ত্রী-সন্তানদের পাকিস্তানে পালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।

No comments

Powered by Blogger.