মিসরে পার্লামেন্ট বিলুপ্ত সংবিধান স্থগিত

ক্ষমতা গ্রহণের দুই দিন পর মিসরের নতুন সামরিক কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছে এবং সংবিধান স্থগিত করেছে। গতকাল রোববার সরকারি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বিবৃতিতে সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ পর্ষদ (সুপ্রিম কাউন্সিল) জানায়, আগামী ছয় মাস অথবা নির্বাচন হওয়া পর্যন্ত তারা ক্ষমতায় থাকবে। তারা অস্থায়ী ভিত্তিতে ছয় মাসের জন্য অথবা পার্লামেন্ট ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত দেশের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে। সামরিক কাউন্সিলের বিবৃতিতে বলা হয়, নতুন সংবিধানের খসড়া তৈরির জন্য ইতিমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কারণ বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী অনেক দলই নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না।
হোসনি মোবারকের একনায়ক শাসনের পতনের পরও মিসরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু সেই শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে দেশটির সর্বোচ্চ সামরিক পর্ষদ। মোবারকের পতনের পর গত শনিবার সেনা কর্মকর্তারা ঘোষণা দেন, নির্বাচিত বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়েই তাঁরা বিদায় নেবেন।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে একজন ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা এই ঘোষণা দিয়ে বলেন, একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই হলো বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচিত বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া তাঁদের প্রধান কর্তব্য। এর পরই রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেবে বর্তমান সরকার। তবে কবে নাগাদ সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে, সে সম্পর্কে তিনি কিছু বলেননি।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে ১৯৭৯ সালে সম্পাদিত শান্তিচুক্তিসহ সব আন্তর্জাতিক চুক্তিই অক্ষুণ্ন থাকবে। তিনি বিক্ষোভকারীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মিসরের সামরিক কর্মকর্তাদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও অভিনন্দন জানান মিসরের সামরিক পর্ষদের এই পদক্ষেপকে।
হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে বলেছে, ব্রিটেন, সৌদি আরব ও তুরস্কের একদল প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে ওবামা মিসরের জনগণের অর্জনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে তিনি দেশটির সামরিক বাহিনীর নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের উদ্যোগকেও স্বাগত জানান। তিনি বলেন, মিসরের আন্তর্জাতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় অবশ্যই রক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্র।
নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি অক্ষুণ্ন রাখার উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। কেননা, এই চুক্তি হলো মধ্যপ্রাচ্য স্থিতিশীলতার মূল ভিত্তি।
তাহরির স্কয়ার এবং রাজধানী কায়রোর বাইরের রাস্তা ও স্কয়ার এখনো তরুণ বিক্ষোভকারীদের দখলে রয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, নতুন সরকারও হয়তো তাঁদের আন্দোলনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাবে। তাই গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা পর্যন্ত তাঁরা নতুন আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন।
মোবারকের পতনের উদ্যাপন এখনো কাটেনি। তাহরির স্কয়ারে শনিবার বিকেলে আয়োজন করা হয় কনসার্টের। সেখানে বিখ্যাত আরব সংগীতের পাশাপাশি জাতীয় সংগীতও পরিবেশন করা হয়।
এদিকে গতকাল রোববার তাহরির স্কয়ারে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। সেনাসদস্যরা বিক্ষোভকারীদের ঘরে ফিরে যেতে বললে তাঁরা না যাওয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, প্রতিশ্রুত সংস্কার বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা ঘরে ফিরবেন না। তবে মোবারকের পতনের তৃতীয় দিনে অনেকেই রাজপথ ছেড়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
দীর্ঘ অচলাবস্থার পর দেশটিতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরতে শুরু করেছে। কর্তৃপক্ষ কারফিউর মেয়াদ আরও চার ঘণ্টা কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে। বিক্ষোভ দমনে ২৮ জানুয়ারি কারফিউ জারি করেছিল মোবারক সরকার। পুঁজিবাজার আগামী বুধবার চালু হওয়ার কথা রয়েছে।
তবে কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, শত শত কয়েদি পালিয়ে যাওয়ায় নিরাপত্তাব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। শনিবার একদল বন্দুকধারী ও দাঙ্গাবাজ কায়রোর একটি কারাগারে হামলা চালায়। এই সুযোগে সেখান থেকে অন্তত ৬০০ কয়েদি পালিয়ে যায়। কারারক্ষীদের সঙ্গে বন্দুকধারীদের গুলিবিনিময়ের ঘটনায় অন্তত একজন নিহত ও ২০ জন আহত হয়।
মোবারকের দীর্ঘদিনের মিত্র দেশ সৌদি আরব অবশেষে নীরবতা ভেঙেছে। মিসরে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার পালাবদলকে তারা শনিবার স্বাগত জানিয়েছে। অথচ মোবারকবিরোধী আন্দোলনের সময়ও সৌদি বাদশা আবদুল্লাহ মিসরের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের সমালোচনা করে মোবারকের প্রতি সমর্থন জানান।
মিসরের সরকারি বার্তা সংস্থা এমইএনএ জানিয়েছে, মোবারক-পরবর্তী নতুন অন্তর্বর্তী সরকার প্রথমবারের মতো গতকাল রোববার বৈঠকে বসেছে।
মোবারকের ঘনিষ্ঠ তিনজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার বিদেশ যাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এঁরা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী আহমেদ নাজিফ, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হাবিব আল আদিল ও বর্তমান তথ্যমন্ত্রী আনাস আল ফিক্কি। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বলেছে, এই তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

No comments

Powered by Blogger.