আমিরের প্রশ্ন, এখন কী করব

মাত্র আঠারো বছর বয়সেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাপ, প্রচার। হঠাৎ পেয়ে যাওয়া তারকাখ্যাতি, কিংবদন্তি বোলারদের সঙ্গে তুলনা, যশের সঙ্গে আসা বিত্ত। ২০০৯-এর জুলাইয়ে অভিষেক, ২০১০-এর জুলাইয়ে শেষ ম্যাচ—মাত্র এক বছরের মধ্যে জীবনটাকে উল্টেপাল্টে দেখা হয়ে গেল মোহাম্মদ আমিরের।
পাকিস্তানের এই তরুণ প্রতিভা নিষিদ্ধ হয়েছেন পাঁচ বছরের জন্য। অল্প বয়সে আন্তর্জাতিক অভিষেক বলে ফিরে আসার সুযোগ তাঁর থাকছে। ২৩ বছর বয়সেই না হয় আবার শুরু হবে!
কিন্তু ‘ক্রিকেট’ যাঁর একমাত্র অবলম্বন, সেই আমিরের পাঁচ বছরের ক্রিকেট-নির্বাসন বাকি সব অর্থহীন করে দেয়। পরশু দোহায় নিষেধাজ্ঞার বোঝা মাথায় বেরিয়ে কান্নাভেজা কণ্ঠে আমির বলেছেন, ‘আমার জীবনে এটাই সবচেয়ে বাজে দিন। ক্রিকেট আমাকে সব দিয়েছে। ক্রিকেটও আমার সব। যদি ক্রিকেট খেলতে না পারি, আমার কাছে তো কিছুই থাকল না। ক্রিকেট খেলব বলে পড়াশোনাও ছেড়ে দিয়েছিলাম। এখন কী করব আমি! একজন ক্রিকেটার, যার জীবনটাই আসলে ক্রিকেটময়; তার জন্য এটা তো জীবন ধ্বংসেরই মতো।’
একটা দার্শনিক উপলব্ধিও এই ছোট্ট জীবনে পেয়ে গেছেন। সেদিকে তাকিয়েই আশা খুঁজছেন, ‘আমি জানি, আল্লাহ আপনার জীবনের একটি দরজা বন্ধ করে দেন তো সঙ্গে সঙ্গে এক শটা দরজা খুলেও দেন।’
আমিরের এই আকুতি সমবেদনাই জাগায়। তবে তাতে তাঁর পাপের মাত্রা লঘু হয় না। মাত্র ১৪ টেস্টে ৫১ উইকেট নেওয়া এই পেসারকে বরং আপনি পাল্টা প্রশ্ন করতে পারেন, ‘আমির, লোভের ফাঁদে পা দেওয়ার আগে কেন ভাবোনি!’
পাকিস্তানের সমর্থকদের মনেও এই প্রশ্ন। এমনিতে আইসিসির প্রতি দেশটির বেশির ভাগ মানুষই বীতশ্রদ্ধ। আইসিসির অনেক সিদ্ধান্তের পেছনে ষড়যন্ত্রও দেখেন তাঁরা। কিন্তু আমির, আসিফ আর সালমান বাটকে শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রায় সবাই। পাকিস্তানের ক্রীড়ামন্ত্রী ইজাজ হুসাইন জাখরানিও এই দলে। পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটারের কথার মূল সুর একটাই। বাকিদের জন্য এই শাস্তি একটা দৃষ্টান্ত। ক্রিকেটকে পরিচ্ছন্ন করতে হলে এমন কঠোর শাস্তি অবশ্যই দরকার। কেউ কেউ পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সমালোচনাও করছেন।
কিন্তু একই সঙ্গে পিসিবির নিরপেক্ষ অবস্থান বাহবাও পেয়েছে। পিসিবি যেমন জানিয়ে দিয়েছে, এই রায়ের বিরুদ্ধে বোর্ডের পক্ষ থেকে আপিল করার চিন্তাভাবনা নেই। আমির অবশ্য নিজে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে (সিএএস) যাওয়ার কথা ভাবছেন। ‘একটি নো বলের শাস্তি পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা হতে পারে না’—আমিরের যুক্তি। তাঁর আশা, সিএএস নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ অনেক কমিয়ে দেবে। বাকি দুজন সিএএসের দ্বারস্থ হবেন কিনা, সেটি পরিষ্কার নয়।

No comments

Powered by Blogger.