বিশ্বকাপে থাকছে না ‘হটস্পট’

আবির্ভাবেই খেলোয়াড়দের রীতিমতো ভক্ত বানিয়ে ফেলেছে ‘হটস্পট’ প্রযুক্তি। খোদ শচীন টেন্ডুলকারই কদিন আগে বলেছেন, ক্রিকেটে আসতে থাকা নতুন নতুন প্রযুক্তির মধ্যে ‘হট স্পট’কেই তাঁর কাছে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে।
সবাই হয়তো আশা করছিলেন, ব্যাটে বল লেগেছে কি না, এটা নির্ধারণের জন্য প্রযুক্তিটা আগামী বিশ্বকাপেও ব্যবহার করা হবে। কিন্তু আশার গুড়ে বালি। বিশ্বকাপে ‘আম্পায়ার ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম’ (ইউডিআরএস) বহাল থাকলেও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে ‘হট স্পট’ ক্যামেরা ব্যবহার করার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
‘হট স্পট’ প্রযুক্তির জনপ্রিয়তার কারণ এর নির্ভুল দৃশ্য ধারণের ক্ষমতা। মাঠের দুই বিপরীত প্রান্তে বসানো দুটি ক্যামেরা ‘ইনফ্রা-রেড’ প্রযুক্তির ছবি ধারণ করে। এই ছবি নিশ্চিত করে দেয় বল ব্যাটসম্যানের পায়ে, হাতে, নাকি ব্যাটে লেগেছে।
যেমন প্রযুক্তির দক্ষতা আছে, তেমনই তার ব্যয়। দুই ক্যামেরা ব্যবহার করলে প্রতিদিন হটস্পট প্রযুক্তির খরচ দাঁড়ায় ৬ হাজার মার্কিন ডলার। আর চার ক্যামেরা ব্যবহার করলে খরচ ১০ হাজার ডলার।
আইসিসিকে এই প্রযুক্তি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিবিজি স্পোর্টসের মালিক ওয়ারেন ব্রেনান বলছেন, বিশ্বকাপে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রবল ব্যয়ের চেয়েও বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্যামেরার স্বল্পতা। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির হাতে সব মিলিয়ে ক্যামেরা আছে চারটি। প্রতি ম্যাচে ‘হটস্পট’ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে অন্ততপক্ষে দুটি ক্যামেরা লাগে। তিন দেশে এই বিশ্বকাপের সব ম্যাচ এই প্রযুক্তির আওতায় আনতে গেলে আট থেকে দশটি ক্যামেরা দরকার।
কিন্তু চাইলেই ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব নয়। সারা বিশ্বে হাতে গোনা যে কয়টি মাত্র প্রতিষ্ঠান অতি উচ্চপ্রযুক্তির এই ক্যামেরা তৈরি করে, তারা কেউই ছয় মাসের কম সময়ে ক্যামেরা বানিয়ে দিতে পারবে না। বানালেও সমস্যার সমাধান হবে না।
এই ক্যামেরাকে খুবই সংবেদনশীল সামরিক উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এমন ক্যামেরা যাতে সন্ত্রাসবাদীদের হাতে চলে না যায়, সে নিয়ে সতর্কতার অভাব নেই। ফলে এ ধরনের ক্যামেরা কিনতে গেলে আন্তর্জাতিকভাবে অনেক নিরাপত্তাপ্রক্রিয়া পার হয়ে আসতে হয়।
ব্রেনান তাই বলেই দিলেন, ‘২০১১ বিশ্বকাপে পঞ্চাশেরও বেশি ম্যাচের সবগুলোতে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের কোনো সম্ভাবনাই নেই।’ তবে হ্যাঁ, ব্রেনানের প্রস্তাব যদি আইসিসি মেনে নেয়, তাহলে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ফাইনাল পর্যন্ত প্রযুক্তিটি দেখা যেতে পারে। ব্রেনান প্রস্তাব করেছেন, কোয়ার্টার ও সেমিফাইনাল ম্যাচে দুটি করে এবং ফাইনালে চারটি করে ক্যামেরা সরবরাহ করতে পারবেন তাঁরা।
কিন্তু আইসিসি এই প্রস্তাবে ‘হ্যাঁ-না’ কিছুই বলেনি। সে না বলুক। ‘হটস্পট’ না থাকা মানে কিন্তু রিভিউ সিস্টেমের অনুপস্থিতি নয়। আইসিসির শর্ত অনুযায়ী হক আই, সুপার-স্লো মোশন ক্যামেরা ও পরিষ্কার শব্দ ধারণে সক্ষম স্টাম্প মাইক্রোফোন থাকলেই ইউডিআরএস চালানো সম্ভব।

No comments

Powered by Blogger.