ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ -অচলাবস্থার অবসান হোক

দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাম্প্রতিক ঘটনায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা উদ্বিগ্ন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের সঙ্গে পরিচালনা পরিষদের বিরোধকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট প্রশাসনিক অচলাবস্থা আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠানকেও বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
পরিচালনা পরিষদ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রোকেয়া আখতার বেগমকে অব্যাহতি দিয়ে আরেকজনকে দায়িত্ব দিয়েছে। অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা করে তাঁর পক্ষে রায় নিয়েছেন। আদালত ১২ এপ্রিল পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটিতে দুজন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রয়েছেন, একজন পরিচালনা পরিষদের নিয়োগপ্রাপ্ত, অন্যজন আদালতের রায়ে অধিষ্ঠিত। শিক্ষকদের গরিষ্ঠ অংশ পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে। পরিচালনা পরিষদ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও ভর্তি-বাণিজ্যের অভিযোগ এনেছেন।
ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিস্থিতি যে সংকটজনক, তা অনুধাবন করা যায় বিশিষ্ট নাগরিকদের বিবৃতিতে। সংকট নিরসনে তাঁরা শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো ফল করায় এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিবছর ভর্তি হতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের মাত্রাতিরিক্ত ভিড় লক্ষ করা যায়। সেই সঙ্গে ভর্তি-বাণিজ্যের অভিযোগও অসত্য নয়। সব সরকারের আমলেই পরিচালনা পরিষদকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহারের নজির রয়েছে। অন্যদিকে প্রতিবছর ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ ও শ্রেণীকক্ষ বাড়ানো হয়নি।
ভর্তি-বাণিজ্যসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে, সেগুলো জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানটি চলে শিক্ষার্থীদের টাকায়, অথচ পরিচালনার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের স্বার্থ দেখা হচ্ছে না। অভিভাবক প্রতিনিধি হিসেবে পরিচালনা পরিষদে যাঁরা আছেন, তাঁদের সন্তানেরা এখন আর সেখানে পড়াশোনা করছে না। পরিচালনা পরিষদ ও শিক্ষকমণ্ডলীর সমন্বিত প্রয়াসই একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অগ্রগতি ও উন্নয়নের ধারা নিশ্চিত করতে পারে। সে ক্ষেত্রে পরিচালনা পরিষদ ও শিক্ষকদের মুখোমুখি অবস্থান কাম্য নয়। ১ এপ্রিল এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ নিয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে হবে, অন্যথায় পরীক্ষার্থীরা বিপদে পড়তে পারে। এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রীও উদ্যোগ নিতে পারেন। কোনো পক্ষের খামখেয়ালিতে এই আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সুনাম নষ্ট হতে দেওয়া যায় না।

No comments

Powered by Blogger.