ধীরেই চলছে ব্রিক

ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন—এই চার জাতির উদীয়মান অর্থনৈতিক জোট ব্রিকের সদ্য অনুষ্ঠিত ব্রাজিল সম্মেলন কোনো বড় ধরনের অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হয়েছে। এটি ছিল সংস্থাটির দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলন।
সম্মেলন শেষে সংগঠনটির এক যৌথ ঘোষণায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়নে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংককে তাদের নীতিমালায় সংস্কার আনতে বলা হয়েছে। যদিও ব্রিকের কাছ থেকে আসা এ ঘোষণায় কোনো নতুনত্ব নেই।
বিশ্লেষকদের মতে, সংগঠনটির নেতাদের অস্পষ্ট যৌথ ঘোষণা থেকে এটাই প্রতীয়মান যে শক্তিশালী চীনের নিয়ন্ত্রণাধীন এ সংস্থাটি তাদের কাজ ও ঐকমত্যের ব্যাপারে খুব একটা সংহত নয়।
ব্রিকের যৌথ ঘোষণায় আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংককে তাদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে প্রচলিত কোটা প্রথায় সংস্কার আনার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও আগামী নভেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠেয় জি-২০ সম্মেলনের আগেই প্রচলিত কোটা প্রথায় সংস্কার আনার জন্য সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছে সংগঠনটি।
এ আহ্বানের বাইরে অন্য কোনো বিষয়ে এ নতুন সংগঠনটি তেমন কোনো অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। এমনকি তারা নিজেদের মধ্যে বড় ধরনের কোনো চুক্তিতেও উপনীত হতে পারেনি। বিশ্লেষকদের মতে, এর অর্থ দাঁড়ায় চার জাতির এই অর্থনৈতিক জোটকে নিয়ে যতটা আশা করছেন, তারা তেমনটা এগিয়ে যেতে পারেনি। ব্রাজিলের বিশ্লেষক অ্যান্থনি স্পানাকোস বলেছেন, যৌথ ঘোষণা দেখে মনে হচ্ছে, এ সংগঠনটি নিজেদের মধ্যে ঐক্য ও পারস্পরিক বিশ্বাস বৃদ্ধি করতে পারছে না। আলোচনা আর আদর্শ গঠন ছাড়া এ সম্মেলনের মাধ্যমে তেমন কিছুই অর্জিত হয়নি।
চীনের বিশ্লেষক মাইকেল গ্লেসনির মতে, ব্রিক তাদের যৌথ ঘোষণায় জি-২০ কে মন্দা-পরবর্তী বিশ্ব গড়তে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এবং তারাও এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে আগ্রহী বলে জানিয়েছে। এর বাইরে ওই সম্মেলনে আর কোনো অগ্রগতির দিক লক্ষ করা যায়নি। গ্লেসনির মতে, বিশ্ব অর্থনীতি পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করাটাই আসলে বড় বিষয়। সে ক্ষেত্রে ব্রিকের ভূমিকা এখনো ততটা জোরালো নয়।
তবে কোনো কোনো বিশ্লেষক বলছেন, এ মাসে জি-২০ অর্থমন্ত্রী-পর্যায়ের সম্মেলন ও নভেম্বরে আইএমএফের সম্মেলনকে সামনে রেখে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি তাদের নীতিমালা সংস্কারের জন্য ব্রিকস যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে তা তাদের আত্মবল ও ঐক্য বৃদ্ধিরই লক্ষণ।
বিশ্লেষক মাইকেল গ্লেসনির মতে, কোটা সংস্কারে সময়সীমা বেঁধে দেওয়াটা চাপ সৃষ্টি করার একটি পন্থা এবং এটা ব্রিকের জন্য একটি বিজয়েরও কারণ হতে পারে। কারণ, তারা বলতে পারবে, আমরা চাপ তৈরি করেছি বলেই এটা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
ব্রিকভুক্ত রাষ্ট্রগুলো বিশ্ব অর্থনীতির ২০ শতাংশের যোগানদাতা। সংগঠনটি তাদের নিজ নিজ দেশের অর্থনৈতিক বৈষম্য, খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা ইত্যাদি স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে।

No comments

Powered by Blogger.