ভোক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আয়বৈষম্য কমানোর তাগিদ

দেশের বেশির ভাগ মানুয়ের আয় কম হওয়ায় তারা পণ্যের গুণগত মানের চেয়ে কম দামি পণ্যকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। আয়বৈষম্য কমানো না গেলে ভোক্তা সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়ন করা কঠিন।
গতকাল সোমবার ঢাকায় আয়োজিত ‘আমার অর্থ, আমার অধিকার’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। তাঁরা বলেন, মানুয়ের আয় বাড়ানো গেলে তারা মূল্য বিবেচনা না করে গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য ক্রয় করবে। আর এতেই তাদের মধ্যে ভোক্তা অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়বে।
বিশ্ব ক্রেতা-ভোক্তা অধিকার দিবস উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) যৌথভাবে এ আলোচনার আয়োজন করে।
রাজধানীর তোপখানা রোডের সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ক্যাবের সভাপতি কাজী ফারুক।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবুল হোসেন মিঞা। ‘ভোক্তার অধিকার: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এম এম আকাশ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অল্প কিছুদিনের মধ্যে কার্যকর করা হবে। আইনটি কার্যকর করতে প্রবিধানমালা প্রণয়নসহ অনেক কাজ ইতিমধ্যে এগিয়ে নেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, এ বছরের শেষের দিকে আইনটি পর্যালোচনা করা হবে এবং কোনো সমস্যা থাকলে তা দূর করার মাধ্যমে এটিকে যুগোপযোগী করা হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. গোলাম হোসেন বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার দিবস পালনের অংশ হিসেবে কমপক্ষে ৫০টি দোকানে গিয়েছি। কিন্তু বেশির ভাগ দোকানে ব্যবহূত বাটখারায় বিএসটিআইয়ের সিল নেই।’
তিনি আরও বলেন, ভোক্তাদের অধিকার রক্ষায় ‘প্রতিযোগিতার আইন’ করা হচ্ছে। আগামী মাসে ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আর চলতি অর্থবছরের মধ্যে এটি জাতীয় সংসদে পাস করিয়ে আইনে পরিণত করা হবে।
বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক এ কে ফজলুল আহাদ বলেন, উন্নত মানের যন্ত্রপাতির মাধ্যমে বিএসটিআই দ্রুততার সঙ্গে পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষা করে সনদ দিয়ে থাকে। তবে ভেজাল অভিযান পরিচালনা করার সময় নানা মহলের চাপে কাজ করতে কিছুটা অসুবিধা হয়।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ ছাড়া বাজার-অর্থনীতিতে সরকারের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
ইংরেজি দৈনিক ফিনানশিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ভোক্তারা সচেতন নয়, এ জন্য তারা প্রতারিত হচ্ছে। তাদের আরও সচেতন করতে হবে। তবে আর্থসামাজিক উন্নয়ন না হলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষিত হবে না।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান, আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নাসরিন বেগম, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.