জলবায়ু নিয়ে আলোচনায় চীন এখন পরোক্ষ সিদ্ধান্তপ্রণেতা হয়ে উঠেছে

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীন জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে আলোচনায় পরোক্ষ সিদ্ধান্তপ্রণেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। পর্যবেক্ষকেরা অন্তত এটাই মনে করছেন। তাঁদের মতে, কোপেনহেগেনে সদ্যসমাপ্ত জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সম্মেলনে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে পরোক্ষভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল দেশটির। শুক্রবার একটি সমঝোতা খসড়া তৈরির জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাও দুবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।
পর্যবেক্ষকেরা জানান, মূলত ১২ দিনের ওই সম্মেলনের শেষ মুহূর্তে চীনের প্রধানমন্ত্রী তাঁদের আগের অবস্থান থেকে কিছুটা পিছিয়ে আসায় সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হয়। তবে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে আলোচনায় নিজেদের প্রায় অনড় অবস্থান ধরে রাখার কারণে দেশটিকে কঠোর সমালোচনাও শুনতে হয়েছে।
চূড়ান্ত সমঝোতা প্রস্তাবে বিশ্বের উন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়টি পর্যবেক্ষণের বিষয়ে যে শর্ত রাখা হয়েছে, সেখানে জাতীয় সার্বভৌমত্বকে সম্মান জানানোর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে মূলত চীনের চাপে। পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণ কমানোর ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণার ব্যাপারেও আপত্তি জানিয়েছে চীন ও ভারতের মতো দেশগুলো। তাদের বক্তব্য, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলোর দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি।
গ্রিনপিসের চীন শাখার জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক প্রচার বিভাগের ব্যবস্থাপক ইয়াং আইলুন বলেন, সম্মেলনের শুরুতে চীন যে উচ্চাভিলাষী প্রস্তাব রেখেছিল, তার চেয়েও অনেক দুর্বল একটি চূড়ান্ত সমঝোতা প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। খুবই দুঃখের বিষয়, একটি যথাযথ চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়ে যে গতি সঞ্চার হয়েছিল, তা একটি দুর্বল সমঝোতায় পর্যবসিত হয়েছে। অবশ্য তিনি এটাও স্বীকার করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় চীন অনেক বেশি উদ্যোগী হয়ে উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরিবেশবাদী সংগঠন নেচার কনজারভেন্সির কর্মকর্তা অ্যান্ড্রু ডিউটজ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ সম্পর্কে ওয়াশিংটনের কাছে আপনি যখনই প্রশ্ন তুলবেন, তখন এর জবাব আসবে এ রকম—এ ব্যাপারে চীন কী উদ্যোগ নিয়েছে, সেটা আগে দেখুন।’
লন্ডনভিত্তিক পরিবেশবিষয়ক ব্লগ সাইট চায়নাডায়ালগ-এর সম্পাদক ইসাবেল হিলটন বলেন, অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, (কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে) চীন নিজের স্বার্থেই একটি নজরদারি ব্যবস্থা রাখতে চায়। কিন্তু সব সময়ই তাদের একটি সন্দেহ—যুক্তরাষ্ট্র চীনের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ব্যাহত করার জন্য এই বিষয়কে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে।
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ কূটনীতিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ঝ্যাং হেইবিন বলেন, মৌলিক স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে চীন এখনো উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গেই রয়েছে, কিন্তু কোপেনহেগেন সম্মেলনে সুদান ও ভেনেজুয়েলার মতো দেশগুলোর সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে।
অঙ্গীকারনামাকে স্বাগত: সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াং জাইচি বলেন, ‘সব পক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সম্মেলন থেকে একটি উল্লেখযোগ্য ও ইতিবাচক ফলাফল বেরিয়ে এসেছে।’

No comments

Powered by Blogger.