বিডিআর বিদ্রোহের বিচার -সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে স্বচ্ছভাবে অগ্রসর হোক

বিডিআর বিদ্রোহের বিচার শুরু হয়েছে গত মঙ্গলবার। পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী বিডিআর আইনেই এই বিচারকাজ পরিচালিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি প্রচলিত আদালতে ফৌজদারি আইনে স্বতন্ত্রভাবে আরেকটি বিচার-প্রক্রিয়াও শুরু হবে। এই বিচারের মাধ্যমে অপরাধ ঘটলে বিচার হওয়ার বাধ্যবাধকতার মৌলিক প্রত্যয়টি প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে বলে মনে করা যায়। বিচার শুরুর বিষয়টি স্বস্তির, পাশাপাশি এই বিচার যাতে ন্যায়বিচার হয়, তার বন্দোবস্ত করতে সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্বশীলতা প্রয়োজন।
এ বছরের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন নিহত হন। বাংলাদেশ তো বটেই, সারা বিশ্ব মিলিয়েও সাম্প্রতিক কালে একসঙ্গে এত সেনা কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনা একটিও খুঁজে পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ। বিডিআর বিদ্রোহের বিচার নিশ্চিত করার বিষয়টি তাই বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এ লক্ষ্যে বিদ্রোহী বিডিআর জওয়ানদের বিচারের জন্য গঠিত ছয়টি বিশেষ আদালতের একটির কাজ শুরু হয়েছে রাঙামাটিতে। এই ছয়টি আদালতের মাধ্যমে বিদ্রোহী দেড় হাজার জওয়ানকে বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। অপরাধের মাত্রা এবং এতে জড়িত ব্যক্তিদের সংখ্যা থেকে এই বিচারকাজের ব্যাপকতা সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়। নিশ্চয়ই বিপুলসংখ্যক বিডিআর সদস্য বিদ্রোহ ও বিদ্রোহের সময়কার হত্যা-নাশকতা-শৃঙ্খলাভঙ্গের মতো কাজে জড়িত ছিলেন। প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করা খুব সহজ কাজ নয়।
বিডিআরের নিজস্ব আইনে এই বিচারকাজ পরিচালিত হওয়ায় এর স্বচ্ছতার বিষয়টি নিশ্চিত করার প্রয়োজন আরও বেড়ে যায়। সে কারণেই পুরো বিচার-প্রক্রিয়াটি সতর্কতার সঙ্গে এবং সাক্ষ্য-প্রমাণের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের মাধ্যমেই হওয়া উচিত। অভিযোগের সত্যাসত্য যাচাই করে দোষী সাব্যস্ত করা এবং দোষীদের শাস্তিদান যাতে আইনানুগ হয়, তা নিশ্চিত করার দিকে বিশেষ নজর থাকা জরুরি। এ ক্ষেত্রে কোনো ভুলত্রুটির সুযোগ নেই। এখানে খেয়াল করার বিষয় যে বিডিআর আইনে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আইনজীবীর পরামর্শ নিতে পারলেও তাঁদের আইনজীবীরা সাধারণ আদালতের মতো যুক্তিতর্কে অংশ নিতে পারবেন না। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সবাই রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য হওয়ায় এই বিচারে দৃষ্টান্তমূলক স্বচ্ছতা বজায় রাখা খুবই প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.