টিফা আগে জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি ব্যবসায়ীদের -আমেরিকায় বাজারসুবিধা পেতে টিফা প্রয়োজন: মরিয়ার্টি

দেশের ব্যবসায়ী নেতারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রস্তাবিত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ রূপরেখা চুক্তির (টিফা) বিষয়গুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, ব্যবসায়ীরা টিফা চুক্তি স্বাক্ষরের বিরুদ্ধে নয়। কিন্তু আগে নিশ্চিত হতে হবে, স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আওতায় যেসব সুবিধা পেয়ে আসছে, তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
এর প্রত্যুত্তরে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি বলেছেন, টিফা স্বাক্ষর করা ছাড়া বাংলাদেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের সুযোগ পাবে না। তবে মেধাস্বত্বসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের প্রাপ্ত সুবিধাগুলো টিফার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, আর টিফা কোনো অবশ্যপালনীয় চুক্তি নয়।
গতকাল সোমবার দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের প্রভাবশালী সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিতে (এমসিসিআই) এক আলোচনায় এসব বিষয় উঠে আসে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, টিফা সই করার আগেই ব্যবসা, বাজারসুবিধা ও শ্রম বিষয়ে বড় ধরনের আলোচনা করা যেতে পারে।
জেমস এফ মরিয়ার্টি বলেন, চলমান দোহা আলোচনার আলোকে যুক্তরাষ্ট্র স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে বাজারসুবিধা দেওয়ার বিষয়ে কাজ করছে। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ায় বাংলাদেশ যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, তা মাথায় রেখে যুক্তরাষ্ট্র সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি চুক্তি করতে আগ্রহী।
জিএসপি-সুবিধা সম্পর্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ এ সুবিধা শেষ হয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস এ কর্মসূচির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। চলতি সপ্তাহেই অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের বৈঠকে তা আলোচনা হতে পারে বলে তিনি জানান।
রাজধানীর মতিঝিলে চেম্বার ভবনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এমসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল হাফিজ চৌধুরী। তিনি বলেন, টিফার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এ চুক্তির আওতায় উভয় দেশ থেকে প্রতিনিধি নিয়ে বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ পরিষদ গঠন করতে হবে। এ ফোরামে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক বিষয়গুলো আলোচনা হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে কোনো সরকারই টিফার বিষয়গুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করছে না। এ কারণে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় কিছুই জানতে পারছে না।
এমসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, টিফার বিষয়বস্তু জনসমক্ষে প্রকাশ করা হলে সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে জানতে পারবে। এ ছাড়া টিফা চুক্তি হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পোশাক শুল্কমুক্তভাবে প্রবেশ করতে পারবে কি না, তা পরিষ্কার হবে। এর কোনো ধারায় কোনো অসংগতি থাকলে আলোচনার মাধ্যমে তা সংশোধনের সুযোগ থাকবে।
আবদুল হাফিজ চৌধুরী বলেন, আমাদের নিশ্চিত হতে হবে যে ডব্লিউটিও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য ২০১৬ সাল পর্যন্ত মেধাস্বত্ব আইনে ছাড় দিয়েছে, টিফা তা ক্ষুণ্ন করবে না।
আবদুল হাফিজ আরও বলেন, জিএসপি-সুবিধা চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হয়ে যাবে। বাংলাদেশের প্রধান ৩০টি রপ্তানিপণ্য যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নয়। তিনি এসব পণ্য জিএসপি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, চুক্তি স্বাক্ষরের আগেই প্রস্তাবিত টিফা সবার সামনে প্রকাশ করা উচিত। এতে আন্তর্জাতিক বহুপক্ষীয় বাণিজ্যের কোনো ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে আলোচনার মাধ্যমে সংশোধন করা সম্ভব হবে।
মুক্ত আলোচনায় আরও অংশ নেন অ্যামচেমের সভাপতি আফতাব-উল ইসলাম, প্রাণ গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) আমজাদ খান চৌধুরী, সিটিব্যাংক এনএ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মামুন রশীদ প্রমুখ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এমসিসিআইয়ের সহসভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি লতিফুর রহমান, লায়লা রহমান কবীর, স্কয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরী, এমসিসিআইয়ের উপদেষ্টা সি কে হায়দার, মহাসচিব ফারুক আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.